আজ হাসিনা-মোদি বৈঠক

bcf5bbeb3f9ee36ba53107c96639bbb2-58e7f672adddaপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শুক্রবার দুপুরে দিল্লিতে নামার আগেই নিশ্চিত হয়ে গেছে তাঁর এবারের সফরে বহুল প্রতীক্ষিত তিস্তা চুক্তি সই হচ্ছে না। এটি মেনে নিয়েই চুক্তিটা ভারত কবে সই করছে, তার সুনির্দিষ্ট সময়সীমা জানতে চাইবে বাংলাদেশ।
আজ শনিবার সকালে এখানকার হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শীর্ষ বৈঠকে তিস্তার পাশাপাশি পানিসম্পদ খাতে সহযোগিতার জন্য গঙ্গা ব্যারাজ তৈরি ও অববাহিকাভিত্তিক পানি-ব্যবস্থাপনাতেও বাংলাদেশ
গুরুত্ব দেবে।
গতকাল শেখ হাসিনাকে দিল্লিতে স্বাগত জানানোর পর নরেন্দ্র মোদি তাঁর টুইটে লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আমি সম্পর্ককে নতুন পর্যায়ে নিতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’ সম্পর্কটাকে যে ভারত নতুন পর্বে নিতে চায়, তার প্রতিফলন হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল দুপুরে এখানকার পালাম বিমানঘাঁটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান।
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং এ বছরের জানুয়ারিতে আবুধাবির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের পর এবার শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে অতিথি বরণের প্রথা ভাঙলেন নরেন্দ্র মোদি। সাধারণত ভারতে কোনো রাষ্ট্র কিংবা সরকারপ্রধান এলে তাঁকে বিমান বন্দরে বরণ করে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় একজন প্রতিমন্ত্রীকে। শেখ হাসিনাকে এবার স্বাগত জানানোর কথা ছিল ভারী শিল্পবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র। বিষয়টির প্রসঙ্গ টেনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গোপাল বাগলে তাঁর টুইটে লিখেছেন, ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে উষ্ণ অভ্যর্থনা নরেন্দ্র মোদির। বিশেষ আতিথ্যের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে যান। একই কারণে শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির অতিথি হিসেবে এবার রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকছেন।
এদিকে বাংলাদেশ যখন সীমান্ত চুক্তির পর তিস্তার মতো দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয় সুরাহায় গুরুত্ব দিচ্ছে, সে সময়ে ভারত সাম্প্রতিক কালের ঘনিষ্ঠতাকে এগিয়ে নিতে তাকে ‘বহুমাত্রিক’ রূপ দিতে বেশি আগ্রহী। দুই দেশের বিদ্যমান সামরিক সহযোগিতাকে কাঠামো দিতে এবার সই হচ্ছে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার রূপরেখা। প্রতিরক্ষার রূপরেখা স্বাক্ষরের পাশাপাশি ভারত থেকে এবার প্রথমবারের মতো ঋণ নিয়ে সমরাস্ত্র কিনবে বাংলাদেশ। ফলে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুই দেশ নতুন অধ্যায় শুরু করছে। সম্পর্ককে নতুন পর্বে নিতে জ্বালানি, মহাকাশ, পারমাণবিক শক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তির মতো নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ দিচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার ভারতীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উদার সহযোগিতা ভারতের জন্য যথেষ্ট সহায়ক হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে বোঝাপড়া ও আস্থার কারণে একে অন্যের রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা অনুধাবনে সহজ হয়েছে। তাই নিরাপত্তা, ভূরাজনীতিসহ নানা বিষয়কে ধারণ করে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কটাকে কৌশলগত প্রেক্ষাপট থেকে বিবেচনা করছে ভারত।
আজকে প্রধানমন্ত্রীর সূচি অনুযায়ী, আজ সকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে গার্ড অব অনারের মধ্য দিয়ে শুরু হবে শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের আনুষ্ঠানিক পর্ব। এখানে তাঁকে স্বাগত জানাবেন নরেন্দ্র মোদি। সেখান থেকে তিনি মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন। এরপর হায়দরাবাদ হাউসে গিয়ে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনা একান্তে আলোচনা করবেন। ওই আলাপচারিতা শেষ করে দুই প্রধানমন্ত্রী বসবেন শীর্ষ বৈঠকে। বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রতিরক্ষা, ঋণ, মহাকাশ, পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে অন্তত ৩০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে।
অনুষ্ঠানের পরের পর্বে মোড়ক উন্মোচন হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর হিন্দি সংস্করণের। বাংলা থেকে আত্মজীবনীর হিন্দি অনুবাদ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দুপুরে তাঁর সম্মানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। বিকেলে শেখ হাসিনা দিল্লি সেনানিবাসের মানেকশ সেন্টারে মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকৃত ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সাত সদস্যের পরিবারের হাতে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা তুলে দেবেন। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেবেন নরেন্দ্র মোদি। রাতে তিনি ভারতের উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারির সঙ্গে তাঁর বাসভবনে দেখা করতে যাবেন।
এদিকে শেখ হাসিনার সফরকে সামনে রেখে দিল্লির পার্ক স্ট্রিট সড়কের নাম বদলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিয়েছে এখানকার নগর কর্তৃপক্ষ।
আগামীকাল রোববার শেখ হাসিনা আজমির শরিফে যাবেন এবং বিকেলে কংগ্রেসের প্রধান সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ভবনে দেখা করবেন। সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে শেখ হাসিনা সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এরপর শেখ হাসিনা তাঁর সম্মানে দেওয়া রাষ্ট্রপতির নৈশভোজে যোগ দেবেন। সেখানে অন্যদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও যোগ দিচ্ছেন। শুধু রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজেই নয়, আজ দুপুরে নরেন্দ্র মোদির দেওয়া মধ্যাহ্নভোজেও যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে দুই দিনে শেখ হাসিনার সঙ্গে দুই দফা দেখা হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে গতকাল রাতে কলকাতা থেকে দিল্লিতে এসেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
দিল্লির বিভিন্ন সূত্রে যোগাযোগ করে জানা গেছে, তিস্তা চুক্তি কবে সই হতে যাচ্ছে, এবার বাংলাদেশ তা স্পষ্ট করেই জানতে চাইবে। অন্তত দুই মাস ধরে ভারতের রাজনৈতিক মহলে তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের সংবেদনশীলতাকে অনুধাবনের চেষ্টা করে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা করার উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দূরত্ব দূর হয়নি বরং বেড়েছে। এরপরও বিষয়টি সুরাহার জন্য রাজনৈতিক ও সরকারি মহলের নানামুখী উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নৃপেন্দ্র মিশ্রর সঙ্গে আলোচনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় কুমার দে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.