এভিয়েশন নিউজ: অনির্ধারিত ছুটিতে এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন গ্রীসে দায়িত্বরত রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ। পহেলা মে অনেকটা আকস্মিকভাবেই তিনি দেড় সপ্তাহের ছুটিতে এথেন্স ত্যাগ করেন। দূতাবাসের কনস্যুলার সার্ভিস চালু রাখতে ইতিমধ্যে পাশ্ববর্তী দেশ ইতালিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সাময়িকভাবে পাঠানো হয়েছে কাউন্সিলর ফেরদৌসি শাহরিয়ারকে। কোরিয়া থেকে প্রকাশিত বাংলা টেলিগ্রাফ এ তথ্য জানিয়েছে।
পত্রিকাটি বলছে, অনেকটা হঠাৎ করেই রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদের ছুটিতে যাবার বিষয়টিকে অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে দেখছে এথেন্সের বাংলাদেশ কমিউনিটি। গত এক বছরে দূতাবাসকে দুর্নীতিমুক্ত করতে গিয়ে বিরাগভাজন দালাল সিন্ডিকেটের গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন পেশাদার এই দক্ষ কূটনতিবিদ, এমনটাই মনে করেন ইউরোপের ৩০ টি দেশের বাংলাদেশিদের কেন্দ্রীয় সংগঠন অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ এসোসিয়েশন (আয়েবা)’র প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ড. জয়নুল আবেদিন। একাধারে তিনি বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রীসেরও সভাপতি, প্রায় ২ যুগ ধরে দেশটিতে তাঁর বসবাস।
৪ মে এই প্রতিবেদকের সাথে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে ড. আবেদিন বলেন, ‘‘৫ বছর আগে আমাদের এথেন্সে দূতাবাস প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ মদদে চিহ্নিত দালাল সিন্ডিকেট দূতাবাসকে লুটপাটের অভয়ারন্যে পরিণত করেছিল এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোহাম্মদ গত বছর এখানে দায়িত্ব নিয়ে অত্যন্ত সফলভাবে সেই সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়েছেন। এথেন্সের বাইরে হাজার হাজার স্ট্রবেরি শ্রমিকদের যেভাবে শোষণ করতো সুপারভাইজার চক্র, তাদের হাত থেকেও তিনি বাঁচিয়েছেন নিরীহ জনগণকে।’’
ইউরোপের সুপরিচিত কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ড. জয়নুল আবেদিন অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘‘একজন রাষ্ট্রদূত বা দূতাবাসের যে কোন কর্মকর্তা ছুটিতে যেতেই পারেন কিন্তু আমরা সুষ্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, চক্রান্তকারী দালাল সিন্ডিকেটের যে কোন প্রকার ষড়যন্ত্রের মাশুল যদি একজন সফল রাষ্ট্রদূতকে দিতে হয়, তবে তা কোনভাবেই মেনে নেবেনা গ্রীসের ২০ হাজার বাংলাদেশি।’’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এমপি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক এবং ‘অ্যাম্বাসেডর এ্যাট লার্জ’ এম জিয়াউদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আয়েবা প্রেসিডেন্ট ড. আবেদিন আরো বলেন, ‘‘বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোহাম্মদ শুধু আমাদের গ্রীসের নির্যাতিত বাংলাদেশিদের ত্রাণকর্তাই নন, দূতাবাসের দুর্নীতির মূলোৎপাটন করে তিনি একাধারে বাংলাদেশ সরকারের ইমেজ বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন।’’
বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রীসের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম হাওলাদারও রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ আকস্মিক ছুটিতে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘‘সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হলে আমরা স্বাগত জানাবো, তবে দালাল সিন্ডিকেটের স্বার্থ রক্ষায় যে কোন নেতিবাচক সিদ্ধান্ত আমাদের হাজার হাজার বাংলাদেশি কোনভাবেই মেনে নেবেনা এবং অপ্রীতিকর যে কোন পরিস্থিতিতে আমরা কঠোর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবো।’’ এথেন্সের বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও একই কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে, সফল রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদকে ঘিরে লুটেরাদের ষড়যন্ত্র পরবর্তী উদ্ভুত পরিস্থিতিতে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, চক্রান্তকারী দালাল সিন্ডিকেট চক্রটি রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদকে বিগত দিনে সরাসরি নানান প্রলোভন দিয়েও কোনভাবেই ম্যানেজ করতে না পেরে উদ্যোগ নেয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে তাঁর ভাবমূর্তি বিনষ্টের। বানোয়াট একটি অডিও ক্লিপ তৈরী করে তা অনলাইনে ছাড়া হয়, সিডি আকারে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দিয়ে পানি ঘোলা করার অপচেষ্টাও চলে। রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদের ভাবমূর্তি বিনষ্টের জন্য ঢাকায় যখন যেখানে যা করা দরকার বা দেয়া দরকার, ষড়যন্ত্রকারীরা তা সূচারুভাবে করে দিন গুণতে থাকে রাষ্ট্রদূতকে এথেন্স থেকে সরিয়ে দেবার।
বিভিন্ন সময়ে এথেন্সে কমিউনিটির লোকজনদের সাথে ঘরোয়া আলাপ আলোচনার সময় রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ লুটপাটকারী দালাল সিন্ডিকেট সম্পর্কে এবং স্ট্রবেরি খামারের শোষক শ্রেনীকে উদ্দেশ্য করে ক্ষোভবশতঃ কিছুটা গালমন্দ করেন, যা ঘটনাক্রমে কেউ একজন মোবাইলে অডিও রেকর্ডিং করে রাখে। দালাল চক্র কোনভাবে ঐ অডিওটি পেয়ে যায় এবং তা থেকে বিশেষ কিছু শব্দ কেটে কেটে বিগত দিনে হয়ে যাওয়া বিভিন্ন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূতের পুরনো বক্তব্য থেকে মিল করে কিছু শব্দাবলী কেটে যোগ দিয়ে পেশাদার ভিডিও এডিটরের সহায়তায় ‘মাস্টার এডিটিং’ তথা এমন একটি ‘ককটেল’ অডিও ক্লিপ তৈরী করে, যা শুনলে যে কারো খারাপ লাগতে বাধ্য যদি নেপথ্যের বাস্তবতা ও নোংরামি উভয়টিই জানা না থাকে।
চক্রান্তকারী দালাল-সিন্ডিকেট কর্তৃক তৈরী ঐ অডিও ক্লিপে তুলে ধরা হয়েছে, রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ প্রধানমন্ত্রীসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গালমন্দ করছেন। বানোয়াট এই ক্লিপকে ব্যবহার করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে ব্যস্ত দালাল সিন্ডিকেটের এক হোতা ঢাকায় অবস্থান করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনৈক পরিচালককেও নেক্কারজনকভাবে কাজে লাগাচ্ছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রটি জানায়।
এদিকে পর্যবেক্ষক মহলের আশংকা, বর্তমান সরকারের অনেক ভালো ভালো কাজও ইদানিং যখন চাপা পড়ে যায় বিশেষ কিছু অঘটন ঠেকানো যায় না বলে এবং বিশ্বের নানা প্রান্তে যেখানে বেশ কিছু বাংলাদেশ দূতাবাসকে ঘিরে অভিযোগ-দুর্নিতী সীমাহীন, সেখানে গ্রীসের রাজধানীতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ‘নায়ক’ এই সাদা মনের মানুষটির কোন ক্ষতি হলে মূলতঃ প্রমোট করা হবে শোষণ-নির্যাতন, দুর্নীতি-অনিয়ম আর লুটপাটকেই।