কোচদের কি অবসরের বয়সসীমা নেই?
রিয়াল মাদ্রিদে থাকার সময় সম্পর্কটা তেমন ভালো ছিল না ইকার ক্যাসিয়াস ও হোসে মরিনহোর। দুজনের পথ দুদিকে বেঁকে গেলেও দ্বন্দ্ব কাটেনি এখনো। তাই সুযোগ পেয়ে মরিনহোকে একহাত নিয়ে নিয়েছেন ইকার ক্যাসিয়াস।
মরিনহোর সময়টা ভালো যাচ্ছে না, লিভারপুলের বিপক্ষে ৩-১ গোলে হার তাঁর সময়টাকে আরও কঠিন করে তুলেছে। কিন্তু তাঁর সময়টা তো খারাপ যাচ্ছে মৌসুমজুড়েই। পয়েন্ট তালিকায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অবস্থান ছয়ে। ১৭ ম্যাচ শেষে ২৬ পয়েন্ট আর গোল ব্যবধান শূন্য। প্রথম ১৭ ম্যাচ শেষে এমন বাজে অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়নি গত ২৭ বছরে। ১৯৯০-৯১ মৌসুমে শেষবার স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের অধীনে ষষ্ঠ স্থানে থেকেই লিগ শেষ করতে হয় ইউনাইটেডকে। তবে মরিনহোর কথা বলার ধরন দেখে কে বলবে, তাঁর দলের অবস্থা এতটা বাজে? মরিনহোকে তাই একহাত নিয়ে নিলেন ইকার ক্যাসিয়াস।
রিয়াল মাদ্রিদে মরিনহোকে কোচ হিসেবে পেয়েছিলেন সাবেক স্প্যানিশ গোলরক্ষক। ২০১২ সালে একটা চোটে পড়েছিলেন। এরপর ফর্ম পড়তে থাকে ক্যাসিয়াসের। সে সময় ক্যাসিয়াসকে বাদ দিয়ে অ্যান্তোনিও আদানকে নিয়মিত করেন মরিনহো। এমনকি ক্যাসিয়াসকে পাকাপাকিভাবে বাদ দিয়েও দেন দল থেকে। দলের অধিনায়ক হয়েও দলে থাকতেন না ক্যাসিয়াস, এমনকি দলের মধ্যে নাকি বিভক্তি তৈরি করেছিলেন পর্তুগিজ কোচ। ফলে মরিনহোর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন অনেকেই। সে সময়ের কথাই মনে করেছেন ক্যাসিয়াস, ‘যদিও তৃতীয় বছরে আমরা অনেক কিছু জিতেছিলাম। লা লিগা, চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনাল, কিন্তু দলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো ছিল না। দলের মধ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করেছিল। আর কিছুদিন করলে আমি ছাড় দিতাম না। আমি তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনে “বুল ফাইটিং”-এ নামতাম।’
পালটা জবাব দিতে ওস্তাদ মরিনহো বসে থাকবেন কেন? তিনিও পালটা জবাব দিলেন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ককে। সংবাদ সম্মেলনে সরাসরি বলে বসলেন, ‘সাক্ষাৎকার পড়ে মনে হলো এমন একজনের সঙ্গে কথা বলছে, যে অবসরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে।’ ইকার ক্যাসিয়াস যেন উত্তর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। তাঁর এই জবাবে মরিনহো বড় ধরনের ধাক্কাই খাবেন, লিভারপুলের সঙ্গে হার সে রকমই একটা ধাক্কা। তাই হারের সঙ্গে সঙ্গে টুইট করলেন, ‘পর্তুগালের কোনো এক পত্রিকায় কেউ একজন বলেছেন, আমার নাকি বয়স হয়ে গেছে। আমার অবসরের সময় চলে এসেছে। মানছি আমার বয়স হয়ে গেছে। কিন্তু সেই পত্রিকার কাছে প্রশ্ন, কোচদের ক্ষেত্রে কী দেখে কিংবা কী করলে বুঝতে পারব যে সে কোনো দলকে কোচিং করানোর শেষ প্রান্তে চলে এসেছে?’
মরিনহোর সময় ভালো না গেলেও ক্যাসিয়াসের কিন্তু দারুণ সময় যাচ্ছে। নীরবে কয়েক বছর আগে যখন রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়েছিলেন, সবাই ভেবেই নিয়েছিল সময় শেষ ইকার ক্যাসিয়াসের। কিন্তু কিছুদিন আগেই লোকোমোটিভ মস্কোর ম্যানুয়েল ফার্নান্দেসের এক পেনাল্টি ঠেকিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে মোট আধা ডজন পেনাল্টি আটকানোর কীর্তি গড়লেন, যে রেকর্ড নেই আর কারও। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ১৯ বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট রাউন্ডে উঠেছেন ক্যাসিয়াস। দেখা পেয়েছেন শততম জয়ের। যেখানে রোনালদো আর ক্যাসিয়াস ছাড়া কেউ নেই। এ পর্যন্ত ২০ ম্যাচে রেখেছেন ৯ ক্লিন শিট। ক্যারিয়ারের এমন পড়ন্ত বেলায় এমন পারফরম্যান্সের কারণে যে কাউকে একহাত নিতেই পারেন ক্যাসিয়াস।