বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে চলছে। পবিত্র হজের দুই মাস ছাড়া বছরের বাকি ১০ মাসই লোকসান দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। জাতীয় পতাকাবাহী রাষ্ট্রায়ত্ত একটি সংস্থার এ হাল উদ্বেগজনক।
মূলত অব্যবস্থাপনা, ব্যাপক দুর্নীতি, মাথাভারি প্রশাসনসহ প্রয়োজনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি লোকবলের কারণে বিমানকে প্রতি বছর বিপুল অঙ্কের অর্থ লোকসান দিতে হচ্ছে। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অব্যবস্থাপনার কারণে বিমানের চারটি নতুন বোয়িং ৭৭৭-৩০০ উড়োজাহাজের অধিকাংশ মনিটর নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে মিসর থেকে ভাড়ায় আনা দুটি উড়োজাহাজ এক বছর ধরে পড়ে আছে ভিয়েতনামের বিমানবন্দরে। সেগুলো টাকার অভাবে মেরামত করা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে সম্প্রতি চালু হওয়া বিলাসবহুল উড়োজাহাজ ড্রিমলাইনার দিয়ে লন্ডনে সপ্তাহে ছয়টি ফ্লাইট অপারেট করার ঘোষণা দেয়া হলেও মাত্র তিন দিনের মাথায় তা বাতিল করা হয়েছে।
এ চিত্র থেকেই বোঝা যায় কেন বিমানকে লোকসান গুনতে হয়। ইতিপূর্বে খবর বেরিয়েছিল, বিমানের বৈদেশিক জিএসএ অফিসগুলোর দুর্নীতির কারণে সংস্থাটি প্রতি বছর শত কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে। বিমানের লোকসানের এটিও একটি কারণ নিঃসন্দেহে।
বস্তুত বিমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের শেষ নেই। সংস্থাটির নেই সেবার মান বৃদ্ধির কোনো প্রয়াস। ফলে পারতপক্ষে কেউ বিমানের উড়োজাহাজে চড়তে চান না। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কোনো প্রতিষ্ঠানকে টিকে থাকতে হলে সে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষ, যোগ্য ও দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার বিকল্প নেই। এদিক থেকেও বিমানের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। অদক্ষতা, অযোগ্যতা আর দুর্নীতি এ সংস্থাটির পরিচয়ের সঙ্গে ওতপ্রতোভাবে জড়িয়ে আছে। বিভিন্ন দেশের সরকারি-বেসরকারি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বিমানের পিছিয়ে পড়ার এটাই অন্যতম কারণ।
অতীতে জনবল কমিয়ে আনা এবং বিদেশিদের সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়াসহ বিমানকে দুর্নীতিমুক্ত করার নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। তাই দাবি উঠেছে বিমানকে গতিশীল করতে একটি পেশাদার পরিচালনা পর্ষদ গঠনের। এ লক্ষ্যে সরকার পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য। জানা যায়, নতুন উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণে উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে সম্প্রতি বিমানের শীর্ষ ম্যানেজমেন্টের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে বিমানের সেবার মান নিয়েও মন্ত্রিসভার বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তাই আমরা আশা করব, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেই এদিকে কঠোর দৃষ্টি দেয়া হবে। বস্তুত তা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলেই মনে করি আমরা।