প্রবাসীর ভ্রমণ: বড়দিনের ছুটিতে ভিক্টর হারবার

এখানে উল্লেখযোগ্য উৎসবের মধ্যে আছে বড়দিন, বক্সিং ডে, ব্লাক ফ্রাইডে ও থার্টি ফার্স্ট নাইট। তাই এ মাসের শুরুতে সবাই বলতে চায়- ‘আমি কিন্তু অফিসে থাকব না। দরকার হলে যোগাযোগ করতে পারো ইমেইলে!’

এভাবে ছুটি কাটাতে তারা ছুটে যায় বিভিন্ন দেশে। আর আবহাওয়ার মেজাজ থাকে গরম। তেমনি এর বিপরীত মেরুর দেশগুলোতে দেখা যায় শীতের কনকনে কাঁপুনি। এখানে যখন দেখি ২৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড সেসময় শুনলাম কোরিয়াতে ৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। অবলীলায় এদেশকে বলা যায় ‘বড় শহরের শান্ত গ্রাম’।

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে থাকে বড়দিন। বড়দিন এদেশের সব থেকে বড় উৎসব। এজন্য শহরে সবজায়গায় দেখা যায় ক্রিসমাস ট্রি। কিছু ক্রিসমাস ট্রি তৈরি করা হয় কৃত্রিমভাবে, আবার কিছু গাছ বেড়ে উঠেছে প্রাকৃতিকভাবে।

তবে সবগাছেই ছোট ছোট মিটিরমিটির বাতি দিয়ে আলোক উজ্জ্বল করা হয়। আর উৎসব উপলক্ষে বেশিরভাগ বাড়িতেই রঙ-বেরঙের বাতি জ্বলে সন্ধ্যার পর। চলে নানা ধরনের খাওয়া দাওয়া আর উপহার বিনিময়। বড়দিনের উৎসবের শুরুর দিনে চার্চে যায় সবাই। গান আর প্রার্থনায় সময়গুলো তারা পার করে।

এ মাসে কিছু তরুণ বিভিন্ন ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে গান বাজনায় মেতে উঠে। বড়দিনের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সান্তাক্লোজ সাজা। এর মাথায় থাকে লাল রঙের টুপি আর থাকে সাদা দাড়ি। মাঝে মাঝে তারা বসে সময় কাটায় কিছু ক্রিসমাস গাছের চারদিকে।

এখানে শহরের কেন্দ্র হচ্ছে ভিক্টোরিয়া স্কয়ার। জায়গাটা বেশ গোলাকার। এখানে বসে ছোটখাটো মেলা। নতুনবাতি, আলোকসজ্জা ও নাগরদোলা দেখা যায়। দিনগুলো থাকে সরকারি ছুটি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। এদের কাছে উৎসব মানে কাজহীন সময় কাটানো। খ্রিস্টান রীতি অনুসারে ক্রিসমাস মানে হচ্ছে যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন। আর এদিন থেকেই গণনা করা হয় খ্রিস্ট্রিয় সাল। এর মানে হচ্ছে ২০১৮ বছর আগে যিশুখ্রিস্ট এ পৃথিবীতে আসেন।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত কিছু দেশে বড়দিনের পরের দিনটিকে পালন করে বক্সিং ডে। এদিনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সব পণ্যে বিশেষ ছাড়, যাকে উৎসব না বলে আর কিইবা বলা যায়। এজন্যই দোকানগুলোতে দেখা যায় বাড়তি ভিড়। শোনা যায় মানুষের সরগরম ধ্বনি, যা অনেকটা আমাদের দেশের ঈদের আগের দিনের সরগরম বাজারের মতো। আর শহরের বাস, ট্রাম চলাচলের জন্য ফ্রি করে দেয় সরকার।

এমাসের শেষের দিকে আছে থার্টি ফার্স্ট নাইট। এ বিশেষ দিনে সিটি কাউনসিলের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় বর্ষবরণ উৎসব। গভীর রাত পর্যন্ত চলে আলোকসজ্জা উৎসব, যা দেখার জন্য বিকেল থেকেই ভিড় জমায় সব শ্রেণি-পেশার লোকজন। কিছু কিছু সি বিচে চলে কনসার্ট। মানুষের যাতায়াত সহজ করার জন্য আছে বাড়তি যানবাহনের ব্যবস্থা।

কিছু কিছু বাড়িতে আয়োজন চলে ঘরোয়া অনুষ্ঠান আর আলোকসজ্জার। সমুদ্রতীরেও জমে উঠে ফায়ার ওয়ার্কস। একই সঙ্গে দেখা যায় শেষ সূর্য ডোবার দৃশ্য আর কানে আসে আতসবাজির শব্দ। এরা নিজেদের সংস্কৃতি ধারণ করে রেখেছে নিজেদের মতো করে, যেখানে আছে নানা ধরনের উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনা। কিন্তু নেই কোনো সাংস্কৃতিক অসুস্থতা।

এ উৎসবের সময়টা হয়ত বেশ অল্প, তবু মানুষ চায় তাদের মনকে রাঙাতে। কিছু নাই হোক, তবু আমাদের সবার মন ও মনন এ উৎসবে মুখর। আর ভালো থাক মানুষের মন আর তাদের মনের রঙিন ভালবাসা। জয় হোক উৎসবের। ভালো থাকুক মানুষের ভালো মন।

লেখক: পিএইচডি শিক্ষার্থী, অ্যাডিলেইড বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.