১৯৯৫ সালের আইনের তিনটি ধারা অসাংবিধানিক

indexlaw১৯৯৫ সালে প্রণীত নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইনের তিনটি ধারা অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর মধ্যে দুটি ধারায় ধর্ষণ করে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড ছাড়া বিকল্প কোনো সাজার বিধান নেই।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার একটি রিট আবেদনের নিষ্পত্তি করে এ রায় ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে আপিল বিভাগ ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৩৪(২) ধারাও অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন।

এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, আপিল বিভাগ নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯৫-এর ৬(২), ৬(৩) ও ৬(৪) ধারা অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছেন। ৬(২) ও ৬(৪) ধারায় বলা আছে, ধর্ষণের পর কোনো ব্যক্তি বা একাধিক ব্যক্তি যৌথভাবে যদি কোনো নারী বা শিশুর মৃত্যুর কারণ ঘটান, তাহলে আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেবেন। এখানে মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কোনো সাজা দেওয়ার এখতিয়ার আদালতের সামনে রাখা হয়নি। এ জন্য সর্বোচ্চ আদালত এ ধারা দুটিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছেন।

তবে ২০০০ সালে ১৯৯৫ সালের আইনটি সংশোধন করা হয়। নতুন আইনের ৯(২) ধারায় ধর্ষণ করে হত্যার ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডেরও বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু নতুন আইনের ৩৪(২) ধারায় বলা হয়েছে, ১৯৯৫ সালের আইনে যেসব মামলা এখনো বিচারাধীন, সেগুলো ওই আইনের অধীনে চলবে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ওই ৩৪(২) ধারাকেও আপিল বিভাগ অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছেন।

তাহলে ১৯৯৫ সালের অধীনে চলমান মামলাগুলো কীভাবে চলবে—এ প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় বের না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়টি বলা যাবে না। তবে আমার মনে হয়, ওই মামলাগুলো ২০০০ সালের আইনে চলতে পারে।’

যেভাবে উৎপত্তি: ১৯৯৬ সালের ১১ জুন মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার শিবরামপুর গ্রামে শুকুর আলী নামে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরের বিরুদ্ধে সাত বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ আনা হয়। ২০০১ সালের ১২ জুলাই মানিকগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালত শুকুর আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ২০০৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট ওই মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।

পরে ২০০৫ সালের ২৩ নভেম্বর মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে। ওই রিট আবেদনে ১৯৯৫ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৬(২) ধারাকে চ্যালেঞ্জ করা হয় ও শুকুর আলীর আটকাদেশকে অবৈধ ঘোষণা চাওয়া হয়। ২০১০ সালের ২ মার্চ হাইকোর্ট ৬(২) ধারাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন। কিন্তু শুকুর আলীর আটকাদেশকে অবৈধ বলে মনে করেননি হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে ব্লাস্ট আপিল বিভাগে যায় এবং শুকুর আলীর আটকাদেশ অবৈধ ঘোষণা চেয়ে আপিল করে। আজ আপিল বিভাগ ওই আপিল মঞ্জুর করে ১৯৯৫ সালের আইনের তিনটি ধারা বাতিল করেন।

ব্লাস্টের আইনজীবী নাজনীন নাহার  বলেন, ‘যেহেতু আপিল বিভাগ আমাদের আপিল মঞ্জুর করেছেন, সেহেতু শুকুর আলীর আটকাদেশ অবৈধ হয়ে গেল।’ তবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন, শুকুর আলীর সাজা কার্যকর হবে কি হবে না, তা পূর্ণাঙ্গ রায় বের না হওয়া পর্যন্ত বলা সম্ভব নয়।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.