কমেছে মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমিক পাঠানো।
বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরা সাধারণতঃ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেই কাজ করতে যান। সৌদি আরব, লেবানন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্দান, ওমান, কাতার, মরিশাস, কুয়েত, মালয়েশিয়া, বাহরাইন, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে গৃহকর্মী হিসেবে নারী শ্রমিকদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হলেও নির্যাতনের শিকার তারাই বেশি হন।
অবশ্য বেশ কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালেও লিবিয়া, ইতালি ও পাকিস্তানে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ ছিলো।
২০১৮ সালে আগের বছরের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে নারী জনশক্তি রপ্তানি কমেছে ১৬ শতাংশের বেশি। কেবল সৌদি আরবেই কমেছে ১৫ শতাংশের উপর। লিবিয়াসহ কয়েকটি দেশে বিদায়ী বছরেও নারী অভিবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বর্তমানে প্রায় আট লাখ নারী কর্মী বিদেশে অবস্থান করছেন। ২০১৮ সালে মোট ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন বাংলাদেশি কর্মী বিদেশে যান। এর মধ্যে নারী জনশক্তি ছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ৬৯৫ জন। আর ২০১৭ সালে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক, ১ লাখ ২১ হাজার ৯২৫ জন নারী কর্মী বিদেশে গেছেন। বিএমইটি হিসাব করে দেখেছে, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে নারী জনশক্তি রপ্তানি কমেছে ১৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
বিএমইটির পরিসংখ্যান বলছে, বিদায়ী বছরে নারী শ্রমিকের প্রধান গন্তব্য সৌদি আরবেই কম গেছে ৯ হাজার ৬৪১ জন। দেশটিতে ২০১৭ সালে গিয়েছিলেন ৮৩ হাজার ৩৫৪ জন বাংলাদেশি নারী শ্রমিক। আর ২০১৮ সালে যান ৭৩ হাজার ৭১৩ জন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০১৭ সালে গিয়েছিলেন ৩ হাজার ২৭২ জন, সেখানে ২০১৮ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৪২৭ জন নারী কর্মী। একইভাবে জর্দানে ২০১৭ সালে গিয়েছিলেন ১৯ হাজার ৮৭২ জন নারী, কিন্তু ২০১৮ সালে সে সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে ৯ হাজার ১শ’তে দাঁড়ায়।
২০০৪ সালে এসে সে সংখ্যা ১১ হাজার ২৫৯ জনে উন্নীত হয়। সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা ও বিদেশগামীদের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় জনশক্তি রফতানিও বাড়তে থাকে।
এদিকে ধারাবাহিক নেতিবাচক প্রবণতায় ২০১৫ সালে ১ লাখ ৩ হাজার ৭১৮ জন ও ২০১৬ সালে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৮ জন নারী কর্মী দেশের বাইরে গেছেন।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, অভিবাসী নারী শ্রমিকরা পুরুষদের চেয়ে কম উপার্জন করলেও তারা তাদের আয়ের ৯০ শতাংশ টাকাই দেশে পাঠিয়ে দেন। যেখানে পুরুষ শ্রমিকরা পাঠান মাত্র ৫০ শতাংশ। এ থেকেই প্রতীয়মান হয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বাংলাদেশের নারীদের রয়েছে বড় ভূমিকা। কিন্তু নারী কর্মীদের অনেক বৈরী পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়।
বিদেশের মাটিতে অনেককেই দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হয়। যৌন নির্যাতন, খেতে না দেওয়া, বেতন না দেওয়া, কাজে ভুল হলেই মারধর, এক বাড়ির কথা বলে একাধিক বাড়িতে মাত্রাতিরিক্ত কাজ করানো, মিথ্যা মামলা দেওয়া – এমন নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অনেকেই।
জনশক্তি রপ্তানি বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ‘রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু)’ বলছে, আগের বছরগুলোর মতো গত বছরেও নতুন কোনো শ্রমবাজার উন্মোচিত হয়নি। ২০১৮ সালে নারী শ্রমিকদের বিদেশ যাওয়ার হার গত বছরের তুলনায় কমেছে।
এছাড়া গত বছর আট শতাধিক নারী শ্রমিক নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরেছেন। নারী নিগ্রহের খবরে অনেক পরিবারই এখন আর তাদের স্বজনদের বিদেশে পাঠাতে উৎসাহবোধ করছে না।