সংকুচিত হয়ে আসছে চীনের শ্রমশক্তি। শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যে স্থানীয় অভিবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে এত দিন ধূমকেতুর মতো এগিয়ে যাচ্ছিল চীন, সে শক্তি ক্রমেই ক্ষয়ে আসছে।
অনেক দিন ধরেই অভিবাসী শ্রমিকদের সংখ্যা কমে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা জারি করে আসছিলেন অর্থনীতিবিদরা। এতে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শুধু কমেই আসবে না, বিনিয়োগ ও রফতানি খাতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতাও সংকুচিত হয়ে যেতে পারে। তাই প্রবৃদ্ধির নতুন উত্স খোঁজা এবং তা সম্প্রসারণে উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বেড়েই চলছে বলে মনে করছেন তারা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চীন এখন তার ‘লুইস টার্নিং পয়েন্টে’ উপনীত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এসে একটি দেশের উদ্বৃত্ত গ্রামীণ শ্রমশক্তি তার সর্বোচ্চ সক্ষমতা ব্যবহার করার পর ক্ষয়ে যেতে শুরু করে এবং মজুরি নাটকীয়ভাবে বেড়ে যেতে থাকে। পঞ্চাশের দশকে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ আর্থার লুইস বলেছিলেন, কৃষি খাতের অতিরিক্ত শ্রমশক্তি দিয়ে একটি উন্নয়নশীল দেশ বহু বছর ধরে মজুরিতে বৃদ্ধি ছাড়াই তার শিল্প খাতকে সম্প্রসারিত করতে পারে।
এ প্রসঙ্গে গোল্ডম্যান স্যাকসের অর্থনীতিবিদ হা জিমিং বলেন, ‘আমরা এখন তথাকথিত লুইস টার্নিং পয়েন্টেই পৌঁছেছি। ২০০৬ সালেই আমি এ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলাম এবং এখন তা পরিবর্তন করার কোনো প্রয়োজন নেই।’ তিনি আরো বলেন, চীনের জনসংখ্যার মধ্যে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর বয়সের হার এ বছরই সর্বোচ্চ ৭২ শতাংশে উন্নীত হতে যাচ্ছে, এর পর তা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে। নব্বইয়ের দশকে জাপানে যে দ্রুততায় কমেছিল, এখন চীনে তার চেয়েও বেশি গতিবেগে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমবে।
গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গত বছরই বিশ্বব্যাংক জানিয়েছিল, চীনের গ্রামীণ অঞ্চলের অতিরিক্ত শ্রমশক্তি এখন প্রায় নিঃশেষিত হয়ে আসছে এবং দেশটি ক্রমান্বয়ে লুইস টার্নিং পয়েন্টে উপনীত হতে যাচ্ছে।
বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদের হিসাবে, ২০১৬-২০ সময়ে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমে ৬ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এ সংকোচনের অন্যতম কারণ হতে যাচ্ছে শ্রমশক্তির পতন। ১৯৭৮ সালে ডেং জিয়াওপিং বাজার সংস্কার কর্মসূচি চালু করলে গ্রামীণ অঞ্চলের লাখ লাখ শ্রমিক কাজের সন্ধানে শহরে আসতে শুরু করেন। কিন্তু কৃষি খাত থেকে সে শ্রমশক্তিকে শিল্প খাতে সংযোজনের মাধ্যমে তাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির চক্রটি এখন
প্রায় পরিপূর্ণ। ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল
পর্যন্ত অভিবাসী শ্রমিকদের বৃদ্ধির হার ছিল ৪ শতাংশ, গত বছর তা নেমে আসে মাত্র ১ দশমিক ৩ শতাংশে।
শ্রমিকদের সংখ্যা কমে যাওয়ার পাশাপাশি কর্মক্ষম জনসংখ্যার বয়স বেড়ে যাওয়াও চীনের জন্য নতুন একটি সমস্যা সৃষ্টি করেছে। মূলত এক সন্তান নীতির কারণেই দেশটিতে নতুন ও তরুণ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর আগমন প্রভাবিত হচ্ছে। এরই মধ্যে চীনের সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থা থেকে জানানো হয়েছে, ২০১১ সালেই ১৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী জনসংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল।
আরও খবর