নজরদারিতে আসছে দেশের ৩ কোটি স্মার্টফোন

নজরদারিতে আসছে দেশের ৩ কোটি স্মার্টফোন।

দেশের প্রায় তিন কোটি স্মার্টফোন নজরদারিতে আসছে। অবৈধ বা নকল মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট চিহ্নিত করার উদ্যোগ হিসেবে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নজরদারি শুরু হলে অবৈধ হ্যান্ডসেটে অন্য সিম কাজ করবে না। ফলে নকল বা অবৈধ হ্যান্ডসেট ব্যবহার বন্ধ হবে।
সরকারি কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ব্যবসায়ীদের হিসাবে বর্তমানে দেশে প্রায় তিন কোটি অবৈধ মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট রয়েছে। অবৈধভাবে আমদানি, চুরি, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নকল হ্যান্ডসেট প্রতিরোধ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত ও রাজস্ব ক্ষতি ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন বিটিআরসি স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ।
তিনি বলেন, সরকারি ও বেসরকারি খাতের সম্মিলিতভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে এটি একটি চমৎকার প্রকল্প। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের সুবিধা দেয়া সম্ভব হবে।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রারের (ইআইআর) খসড়া নির্দেশনায় এর উল্লেখ রয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় কোন গ্রাহকের হাতে অবৈধ হ্যান্ডসেট রয়েছে সেটা বের করতে ডেটাবেজ তৈরি করা হবে।
খসড়া নির্দেশনায় বলা হয়, অপারেটররা তাদের লাইসেন্স নীতিমালা অনুযায়ী সব মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেটের ইএমআই নম্বর দিয়ে এ ডাটাবেজ তৈরি করবে। এ ডাটাবেজে তিনটি ক্যাটাগরি থাকবে ব্ল্যাক, হোয়াইট ও গ্রে। আইএমইআই নম্বর হল বৈধ মোবাইল ফোনের ১৫ ডিজিটের একটি স্বতন্ত্র সংখ্যা।
একটি মোবাইল ফোনের কি-প্যাডে *#০৬# পরপর চাপলে ওই মোবাইল ফোনের বিশেষ এ শনাক্তকরণ নম্বরটি পর্দায় ভেসে উঠে। অপারেটরদের ইআইআর তৈরির পর তা জাতীয় ইআইআরে (এনইআইআর) সংযুক্ত হবে।
এর ফলে সব অপারেটরদের ইআইআর খুব সহজেই নজরদারি করতে পারবে বিটিআরসি। ইআইআর ও এনইআইআর বাস্তব সময় সিক্রোনাইজেশন হবে অর্থাৎ ইআইআরকে ডেটা সংযুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা এনইআইআরে চলে আসবে।
এছাড়া নির্দেশনায় লিস্ট ম্যানেজমেন্টে বলা হয়েছে, কিছু কিছু নম্বর ভিআইপি লিস্ট হিসেবেও থাকবে, যারা সরকারের বিশেষ নির্দেশনায় এ ফিল্টারিং প্রক্রিয়া পাশ কাটিয়ে যেতে পারবে।
খসড়াতে আরও বলা হয়, ক্লোন, অনুমোদনহীন নকল, অবৈধভাবে আমদানি করা কিন্তু বর্তমানে নেটওয়ার্কে সচল রয়েছে- এমন হ্যান্ডসেটগুলো যে অপারেটরের সিমে রয়েছে সে অনুযায়ী নিবন্ধিত হয়ে যাবে। ইআইআর তাদের হ্যান্ডসেটগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিবন্ধিত করার সুযোগ দেবে।
বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহকের হাতে যেসব নকল বা অবৈধ হ্যান্ডসেট রয়েছে, এ সিস্টেম শুরু করার ৬ মাস পর্যন্ত নির্দিষ্ট সিমে তা চালু রাখার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অর্থাৎ যে সিমে মোবাইল ফোন চালু থাকবে সেই সিমের মাধ্যমেই তা নিবন্ধিত ধরে নেয়া হবে। ছয় মাস পর কোনো নকল, অবৈধভাবে আমদানি করা বা ক্লোন হ্যান্ডসেটে সিম কাজ করবে না।
এ প্রক্রিয়ায় গ্রাহককে তার হ্যান্ডসেটকে সিমের মাধ্যমে সিস্টেমে নিবন্ধিত করতে হবে। নিবন্ধিত ছাড়া মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেট কাজ করবে না। এর ফলে হ্যান্ডসেট বাজারের অবৈধ কারসাজি বন্ধ হবে বলে মনে করছে বিটিআরসি।
আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদশে মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ) যুগ্ম সম্পাদক মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, বর্তমানে গ্রাহকের হাতে প্রায় তিন কোটি হ্যান্ডসেট রয়েছে।
এর মধ্যে কিছু সেট নকল বা অবৈধভাবে আমদানি করা। বাংলাদেশে বৈধভাবে আমদানি বা তৈরি করা মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেটের ডাটাবেজ তৈরি এবং অবৈধ ফোনের ব্যবহার বন্ধ করতে মে মাসে একটি পদ্ধতির অনুমোদন দেয় বিটিআরসি।
চলতি মাসে এ পদ্ধতি কার্যকর হতে যাচ্ছে। এর আওতায় বৈধভাবে আমদানি করা ও দেশে তৈরি সব হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নম্বর ডেটাবেজে সংযুক্ত হবে।
তদারকি সংস্থাগুলোর অপর্যাপ্ত নজরদারি ও অভিযানের সুযোগে স্থানীয় বাজারে অবৈধ ও নকল হ্যান্ডসেটের প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আইএমইআই নম্বরবিহীন সেট বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন সময় জানিয়েছেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.