বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমেরিকার নিউইয়র্কের আদালতে মামলা করা হবে।
এই মামলায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনকে (আরসিবিসি) প্রধান আসামি করা হবে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এটি চূড়ান্ত করতে শিগগিরই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামলের সঙ্গে বৈঠক করবেন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
সূত্র জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী কোনো সম্পদ হারানো বা খোয়া গেলে সেটি পেতে তাদের কমার্শিয়াল আদালতে মামলা করতে হয়।
এ মাসের মধ্যেই মামলাটি করার সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বাংলাদেশের। তবে আইন অনুযায়ী মামলাটি আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে করতে হবে। এ ব্যাপারে চলতি মাসের শেষের দিকে একটি প্রতিনিধি দল আবার আমেরিকা যাবে।
বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরি হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমসের নিউইয়র্ক শাখা থেকে। এ কারণে নিউইয়র্কেই মামলা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট সিস্টেম হ্যাকড করে এ রিজার্ভ চুরি করা হয়। সাইবার অপরাধের মাধ্যমে কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার পর এটিই প্রথম মামলা। যে কারণে বাংলাদেশ খুব সতর্কতার সঙ্গে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
মামলার বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি নিউইয়র্ক সফর করে এসেছে। তারা মামলা পরিচালনার জন্য দুটি ল’ফার্ম চড়ান্ত করেছে। ঘটনার আইনগত দিক পর্যালোচনা করে মামলার একটি খসড়াও খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করে এটি চূড়ান্ত করা হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, মামলার বিষয়টি এগোচ্ছে। আমরা বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনগত সব বিষয় পর্যালোচনা করে ধাপে ধাপে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করছি। এটি পুরোপুরি চূড়ান্ত হলেই আপনারা জানতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিউইয়র্ক শাখায় থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়ে যায়। এর মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকে। বাকি ২ কোটি ডলার যায় শ্রীলংকায়।
শ্রীলংকা থেকে ২ কোটি ডলার দুদিনের মধ্যেই ফেরত আনতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ফিলিপাইন থেকে এখন পর্যন্ত ফেরত এসেছে ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আরও ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার বাকি রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু অর্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলো এখন উদ্ধার করার প্রক্রিয়া চলছে।
এর মধ্যে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার দেশে আসতে পারে। এটি এখন ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে জমা রয়েছে। এর মালিকানা নিয়ে ফিলিপাইনের আদালতে মামলা চলছে। বাংলাদেশ ছাড়া এখনও এর মালিকানা কেউ দাবি করেনি। ফলে মামলা নিষ্পত্তি হলে এটি বাংলাদেশই পাবে বলে সরকারের সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী।
মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনায় সেদেশের এন্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল রিজাল ব্যাংকের বিরুদ্ধে একটি এবং সরকার একটি সিভিল মামলা করেছে। এর মধ্যে মানি লন্ডারিং মামলার রায় দিয়েছেন ফিলিপাইনের আদালত। বিশ্বের অন্যতম এই সাইবার জালিয়াতির ঘটনায় এই প্রথম কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেয়া হয়। সেই অর্থ চুরিতে সম্পৃক্ততার দায় প্রমাণ হওয়ায় ফিলিপাইনের আরসিবিসির জুপিটার স্ট্রিট শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মাইয়া দিগুইতোকে ৩২ বছর থেকে ৫৬ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ১০ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়।
সূত্র জানায়, যেহেতু ফিলিপাইন থেকে বেশ কিছু অর্থ ফেরত এসেছে। তাদের ব্যাংক কর্মকর্তাদের শাস্তি হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ এখন সহজেই ওই অর্থ ফেরত পেতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাচ্ছিল মামলা ছাড়াই দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগের ভিত্তিতে এবং কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে চুরি হওয়া রিজার্ভের অর্থ ফিরিয়ে আনতে। এই প্রক্রিয়ায় কিছু ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলেও বেশির ভাগই এখনও দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। এই অর্থ ফিরিয়ে আনতে মামলা করা হচ্ছে।
এদিকে এই ঘটনায় বাংলাদেশ ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন, শ্রীলংকান সরকার আলাদা আলাদা তদন্ত করেছে। এ ঘটনার চুরি হওয়া অর্থ ছাড় করতে ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংক মানি লন্ডারিংয়ের আশ্রয় নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ও বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টরা। ফিলিপাইনের এন্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিলও এই অর্থ ছাড় করার ক্ষেত্রে রিজাল ব্যাংকের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ এনেছে।