অজানা হেপবার্ন

অজানা হেপবার্ন।

২০ জানুয়ারি হলিউড অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্নের প্রয়াণদিবস। ১৯৯৩ সালের ওই দিনে সুইজারল্যান্ডে ৬৩ বছর বয়সে মারা যান হলিউডের স্বর্ণযুগের এই স্বর্ণকন্যা। আজ তাঁর জীবনের অজানা ১০টি বিষয় থাকছে এই প্রতিবেদনে

ব্রুসেলসের উপকণ্ঠে জন্ম হয়েছিল অড্রে হেপবার্নের, ১৯২৯ সালের ৪ মে। বাবা একজন ব্রিটিশ ব্যাংকার, মা হল্যান্ডের জমিদার বংশের। শৈশব থেকেই ইংরেজি ও ওলন্দাজ ভাষায় কথা বলতে পারতেন তিনি। নিজেই পরে শিখে নিয়েছিলেন ফরাসি, স্প্যানিশ ও ইতালীয় ভাষা। এতগুলো ভাষা জানতেন বলেই অড্রে হেপবার্নের উচ্চারণে কোনো নির্দিষ্ট ভাষার ছাপ পড়েনি।


মা–বাবার বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পর অড্রে মায়ের সঙ্গে ছিলেন প্রথমে ইংল্যান্ডে, পরে হল্যান্ডে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনী অবরুদ্ধ করে রেখেছিল অড্রেদের। সে সময় নাৎসিদের চালানো ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার প্রত্যক্ষদর্শী তিনি। বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা সারা জীবন তাঁকে তাড়িয়ে ফিরেছে। ১৯৫৪ সাল থেকেই তিনি ইউনিসেফের হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন বিশ্বময়, শান্তির খোঁজে। হয়েছেন তাদের দূত। ইউনিসেফের দূত হয়ে নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশেও এসেছিলেন তিনি।


ব্যালের প্রতি তাঁর ছিল তীব্র আকর্ষণ। ১৯৪৪ সালেই হয়ে উঠেছিলেন যোগ্য ব্যালে নর্তকী। ব্যালেকেই পেশা হিসেবে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় খেয়ে না–খেয়ে বড় হয়ে ওঠা এই মেয়ের শরীর ব্যালে নর্তকীর মতো ছিল না, তার শরীরে ছিল অপুষ্টির ছাপ। ফলে ব্যালে শেখা হলো না আর। তখন ভাবলেন অভিনয় করবেন।


লন্ডনের ওয়েস্টএন্ডের থিয়েটার হলগুলোয় শুরু হলো অড্রের পদচারণ। কোনো কোনো সিনেমার ছোটখাটো ভূমিকায় চলতে থাকল অভিনয়। এরপর ১৯৫১ সালে ব্রডওয়েতে জিজি নাটকে অভিনয় করে তিনি জনপ্রিয় হওয়া শুরু করলেন। ওই নাটকে ২০০ বারেরও বেশি অভিনয় করেছেন তিনি। এই নাটকে অভিনয় করেই থিয়েটারের প্রথম পুরস্কার থিয়েটার ওয়ার্ল্ড অ্যাওয়ার্ড লাভ করলেন।


দ্বিতীয় পুরস্কারটা এল ১৯৫৪ সালে বাফটা থেকে, একই বছর তৃতীয়টা গোল্ডেন গ্লোব, চতুর্থটা অস্কার। অস্কার পেলেন এলিজাবেথ টেলরকে পরাজিত করে, রোমান হলিডে ছবিতে অভিনয়ের জন্য।


এর পরপরই প্যারামাউন্ট পিকচারের সঙ্গে সাতটি ছবিতে চুক্তি করে তিনি চলে আসেন টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে। হলিউডে তখন যৌন আবেদনময়ী নায়িকাদের প্রাবাল্য, সেটাকে ভেঙে ফেললেন তিনি। একেবারে সহজ–সরল সুন্দরী হিসেবে পর্দায় ঠাঁই পেলেন অড্রে, ঠাঁই পেলেন দর্শক–হৃদয়ে।


রোমান হলিডে অড্রেকে তারকা বানিয়েছে, কিন্তু তাঁকে আইকন করে তুলল ১৯৬১ সালের ব্রেকফাস্ট অ্যাট টিফানি ছবিটি।


হলিউডের সব বড় তারকার সঙ্গেই পর্দা ভাগাভাগি করে দিয়েছিলেন অড্রে। বাকি ছিল এক ক্যারি গ্র্যান্ট। ক্যারি গ্র্যান্টকেই রোমান হলিডেতে অভিনয় করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তিনি ‘না’ করে দেওয়ায় সেখানে অভিনয় করেন গ্রেগরি পেক। এই ছবির ১০ বছর পর শ্যারাড ছবিতে অড্রে আর ক্যারি গ্র্যান্ট অভিনয় করেন। ক্যারি গ্র্যান্ট বিব্রত হতেন এই কথা ভেবে যে অড্রে আর তাঁর বয়সের মধ্যে সিকি শতাব্দীর ব্যবধান! তবে ছবিটি হয়েছিল দারুণ!


মাই ফেয়ার লেডি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন অড্রে। জর্জ বার্নার্ড শর লেখা কাহিনি নিয়ে তৈরি ছবি এটি। ব্রডওয়েতে বছরের পর বছর সুপার হিট হিসেবে চলেছিল নাটকটি। মাই ফেয়ার লেডি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। আটটি অস্কার পেয়েছিল। কিন্তু অড্রে এ ছবিতে অস্কার জিততে পারেননি। এ বছর অস্কার যায় ম্যারি পপিনস ছবির জন্য জুলি অ্যান্ড্রুসের হাতে। মজার ব্যাপার, মাই ফেয়ার লেডি ছবিতে জুলি অ্যান্ড্রুসেরই অভিনয় করার কথা ছিল, কিন্তু প্রযোজকদের পছন্দের কাছে নতি স্বীকার করেন পরিচালক। এই ছবির বেশির ভাগ সংলাপেরই অড্রের কণ্ঠ দিয়েছে অন্যরা, ফলে এতে মেজাজটা একটু খারাপই ছিল অড্রের।

১০
দেড় দশক অভিনয় করার পর হঠাৎই ছবির জগতে চলাফেরা ছেড়ে দেন অড্রে। গত শতাব্দীর ষাটের দশকের শেষভাগে তিনি বলতে গেলে হলিউডমুখী হননি আর। পরিবার হলো তাঁর। দুবার বিয়ে করলেন—অভিনেতা মেল ফেরার ও ইতালীয় মনস্তত্ত্ববিদ আন্দ্রেয়া দোত্তি ছিলেন তাঁর স্বামী। দুই স্বামীর কাছ থেকে তাঁর দুই সন্তান। ১৯৯৪ সালে তিনি জিতে নেন গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড এবং তা দিয়ে ঢুকে যান চলচ্চিত্র, সংগীত আর নাটকের এলিট ক্লাবে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.