বাংলাদেশ বিমানকে বাকিতে জেট ফুয়েল দেবে না বিপিসি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট ফুয়েল সরবরাহ করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীন পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। দুটোই রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বিপিসির কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে বাকিতে জ্বালানি সংগ্রহের সুবিধা নিয়ে আসছে বিমান। এ বাকির পরিমাণ বেড়ে এখন প্রায় ২ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে, অথচ বারবার তাগাদা সত্ত্বেও বকেয়া পরিশোধ করছে না বিমান। এ অবস্থায় এয়ারলাইনসটিকে আর বাকিতে জেট ফুয়েল দেবে না বলে জানিয়েছে বিপিসি।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বকেয়া পরিশোধ না করা ও প্রতি বছর বকেয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকায় ২০১৬ সালেও বিমানকে সতর্ক করেছিল সংশ্লিষ্ট জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি ও বিপিসি। কিন্তু আর্থিক সংকটে থাকা বিমানের জ্বালানি কেনার অর্থ না থাকায় বিশেষ বিবেচনায় এয়ারলাইনসটিকে জেট ফুয়েল সরবরাহ চালু রাখে পদ্মা অয়েল। ২০১০ সালের মাঝামাঝি থেকে বিমানকে বিভিন্ন দফায় জ্বালানি সরবরাহ করা হলেও এর সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করেনি এয়ারলাইনসটি। বকেয়া আদায়ে ২০১৬ সালের পর থেকে কয়েক দফায় চিঠি দেয়া হলেও তাতে সাড়া দেয়নি বিমান কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় ক্রমে বাড়তে থাকা বকেয়ার পরিমাণ ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ৯৪৭ কোটি ৩২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি বিমানের কাছে বাকিতে জেট ফুয়েল বিক্রির পরিবর্তে নগদে সরবরাহ এবং পুরনো বকেয়া আদায়ে কঠোর হচ্ছে বিপিসি। এর অংশ হিসেবে ভবিষ্যতে নগদ মূল্যে তেল ক্রয়ের জন্য বিমানকে চিঠি দিয়েছে তারা।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কাছে বিপিসির পাওনা ১ হাজার ৯৪৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এ পাওনা পরিশোধ এবং চলতি জানুয়ারি থেকে নগদ মূল্যে জেট ফুয়েল সংগ্রহে বিমানকে নির্দেশনা প্রদানের জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিন বিমানের কাছে বাকিতে জেট ফুয়েল সরবরাহ করলেও বকেয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকায় জানুয়ারি থেকে আর বাকিতে জেট ফুয়েল বিক্রি করবে না বিপিসি।
বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, সমস্যাটি পুরনো হলেও সমাধানে কাজ করছে বিপিসি। যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিপিসি টাকা পাবে, তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বিমান। তারা নানা সময় নানা কথা বলে বকেয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে যাচ্ছে। এতে করে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য বিমানের কাছে জ্বালানি বিক্রিতে কঠোর হচ্ছে বিপিসি।
পদ্মা অয়েলের হিসাব বিভাগের তথ্যমতে, পদ্মা অয়েলের বকেয়া পরিশোধ করতে হলে প্রতি মাসের জ্বালানি তেল ক্রয়ের প্রায় ৫০ কোটি টাকার পাশাপাশি অতিরিক্ত ৩৪ দশমিক ৬৬ কোটি টাকা প্রদান করতে হবে বিমানকে। সংস্থাটি বকেয়া পরিশোধ না করায় পদ্মা অয়েলকে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের সুদ গুনতে হচ্ছে।
বিপিসির পরিচালক (বিপণন) মো. সরওয়ার আলম জানান, ‘বিমানের সঙ্গে বিপিসির সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। গত ১০ বছর ধরে বিমানের সঙ্গে বিপিসির বকেয়া নিয়ে নানা জটিলতা আছে। আমরা বিমানের সঙ্গে বসে জেট ফুয়েলের দাম পর্যালোচনাসহ বিদ্যমান সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করছি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে বিমানের কাছে বকেয়া আদায়সহ সমস্যাগুলো সমাধানে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারব বলে আশা করছি। যেহেতু সমস্যাটা দীর্ঘদিনের, তাই উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসতে হবে।