আগামী ৩০ জুলাই পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান। এ সময়ের মধ্যে কোনো জেল-জরিমানা ছাড়াই ওমান থেকে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবেন তারা। আর সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে যেসব বাংলাদেশী শ্রমিক দেশে ফিরবেন, তাদের জন্য বিশেষ ভাড়ার ব্যবস্থা করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।
জানা গেছে, গত ৩ মে অবৈধ অভিবাসীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে ওমান। এ সময়ের মধ্যে ফেরত যাওয়া শ্রমিকরা কমপক্ষে তিন বছর পর আবারো দেশটিতে প্রবেশের সুযোগ পাবেন। এরই মধ্যে ওমানে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস দেশে ফিরতে আগ্রহী বাংলাদেশীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া হালনাগাদ করা শুরু করেছে। এ ব্যাপারে অনেক শ্রমিক নিজেই দূতাবাসে যোগাযোগ করছেন। আর সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে দেশে ফেরা শ্রমিকদের বিমানের পাশাপাশি পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসও বিশেষ ভাড়ার সুযোগ দেবে।
এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কান্ট্রি ম্যানেজার (ওমান) শওকত হোসেন জানান, সাধারণ ক্ষমার আওতায় যেসব বাংলাদেশী ঢাকা ফিরবেন, তাদের জন্য বিশেষ ভাড়া অফার করা হবে। তবে কী পরিমাণ ছাড় দেয়া হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
তিনি বলেন, যেসব শ্রমিক এ সুযোগ নিতে চান, তাদের এয়ারলাইনস অথবা ট্রাভেল এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। পাশাপাশি দূতাবাস এবং ওমান সরকার থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার তথ্যাদি উপস্থাপন করতে হবে। আশা করা যাচ্ছে, এ মাসের শেষ থেকেই সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে শ্রমিকরা দেশে ফিরতে শুরু করবেন, যা চলবে আগামী জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত।
জানা গেছে, প্রায় পাঁচ বছর পর সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছে ওমান। এর আগে ২০০৯-১০ সালে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিল দেশটি। তখন প্রায় ৬০ হাজার অবৈধ অভিবাসী এ সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন। এবার বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কমপক্ষে ৫০ হাজার নাগরিক ওমানে এ সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ওমানে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর একেএম রবিউল ইসলাম বলেন, সাধারণ ক্ষমার অর্থ অবৈধ শ্রমিকরা জেল-জরিমানা ছাড়াই দেশে ফিরতে পারবেন। কিন্তু বৈধ অভিবাসী হতে পারবেন না। তবে তিন বছর পর বৈধভাবে আবার ওমানে ফেরার সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, ওমানে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে ১৫-২০ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক এ সুযোগ গ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করে ওমানের অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলেই দেশ ত্যাগের অনুমতি পাবেন অবৈধ অভিবাসীরা।
উল্লেখ্য, ওমানে বিদেশী শ্রমিকদের সংখ্যার অনুপাতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। আর শ্রমিক পাঠানোর দিক থেকে ওমান বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক শ্রমবাজার। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে শ্রমিক পাঠানো হয় ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৪ জন। এর মধ্যে শুধু ওমানেই গেছেন ১ লাখ ৫ হাজার ৭৪৮ জন। অন্যদিকে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে শ্রমিক পাঠানো হয় ৪ লাখ ৯ হাজার ২৫৩ জন; যার মধ্যে ওমানে গিয়েছিলেন ১ লাখ ৩৪ হাজার ২৮ জন। এছাড়া ২০১২ সালে বাংলাদেশ থেকে ওমানে গেছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৩২৬, ২০১১ সালে ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৬৫ ও ২০১০ সালে ৪২ হাজার ৬৪১ জন শ্রমিক।