জোবায়ের আহম্মেদ অভি, চট্টগ্রাম থেকে ফিরে : সম্প্রতি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সোনা চোরাকারবারীদের পছন্দের তালিকায় চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিপূর্বে চট্টগ্রাম বিমান বন্দরের বিভিন্ন সময় সোনা আটক সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়ম রক্ষার মামলা দায়ের করা হলেও কোন প্রকার তদন্ত/তৎপরতা দৃশ্যমান না হওয়ায় সংঘবদ্ধ চক্রের অবৈধ কাজকর্মে কোন বিঘœতার সৃষ্টি হচ্ছে না। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বিমান বন্দর এখন সোনা চোরাকারবারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এদিকে বিমান বন্দরে কর্মরত বিমানের এয়ারক্রাফট মেকানিক ও চোরাকারবারীর প্রধান হোতা সাত্তারের বদলি আদেশ বাস্তবায়নে অসহায় বোধ করছেন বিমান প্রশাসন। অভিযোগ আছে খোদ বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এই বদলি আদেশ বাতিলের জন্য বিমান প্রশাসনকে লিখিত ভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা যায় চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে কর্মরত প্রায় ৭০-৮০ ভাগ কর্মকর্তা কর্মচারী সোনা চোরাকারবারী, হুন্ডি সহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত। স্থানীয় বিমান ও সিভিল এভিয়েশন প্রশাসন উক্ত চক্রের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহনে বরাবরই অনীহা প্রকাশ করে থাকে। বিভিন্ন জায়গায় উক্ত চক্র বলে থাকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের প্রশাসন তাদের কাছ থেকে সুবিধা গ্রহন করেনি এমন লোকের সংখ্যা হাতে গনা কয়েকজন মাত্র। বর্তমানে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে সোনা চোরাকারবারীদের মধ্যে অনেকেই ক্যারিয়ার থেকে মালিক বনে গেছে। তাদের মধ্যে বিমানের প্রকৌশল শাখা চট্টগ্রামের ছাত্তার (পি নং- ৩৫৮৭৭) এয়ার ক্র্যাফ্ট মেকানিক, গোলাম সরোয়ার (পি নং- ৩৬৯৭৩) এয়ারক্র্যাফ্ট মেকানিক, হারাধন দেয় (সি নং- ১৬৬) সুইপার, যানবাহন শাখার সরোয়ার কায়নাত মুকুল (সি নং- ১৫০) হেলপার মেকানিক, পলাশ কান্তি দেয় (জি নং- ৫০২৭১) এমটি ড্রাইভার অন্যতম।
আরও জানা যায় সোনা চোরাকরবারীদের ব্যবসা পরিচালনা করার মত যথেষ্ট আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু বাইরের পরিবেশ, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন ও বিপননের জন্যই দুই একজন ব্যবসায়িক পার্টনার তাদের সঙ্গে রেখেছে। বর্তমানে প্রতি চালান সোনার ৩০ শতাংশর মালিকানা উক্ত কর্মচারীদের এবং ক্যারিং চার্জ বাবদ প্রতি পিস স্বর্ণের বারের জন্য চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে এই সিন্ডিকেট।
অভিযোগ আছে চট্টগ্রাম বিমানের মূখ্য প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন উক্ত চক্রের সহযোগীতায় বেশ আন্তরিক। গত বছর ১৪ ডিসেম্বর তিনি চোরাকারবারীর সিন্ডিকেটের প্রধান সাত্তার ও সরোয়ারের সাথে কক্সবাজারে প্রমোদ ভ্রমনে যান। উক্ত মুখ্য প্রকৌশলী চট্টগ্রামে যোগদানের কিছুদিন পর একটি প্রাইভেট কার ক্রয়ের সময় প্রয়োজনীয় সুুযোগ সুবিধার আশ্বাসে উক্ত চোরাকারবারীদের কাছ থেকে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছে বলে অভিযোগ আছে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি ডিউটি রোস্টার প্রণয়নে সোনা চোরাকারবারে ক্যারিং ও ডেলিভারিতে দক্ষ ও পারদর্শী হারাধন, সরোয়ার, বিক্রম, বাবুল, রেয়াজুল (যাদের বিরুদ্ধে বহুবার প্রত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল) কে সাত্তারের সিফ্টে ডিউটিতে ন্যাস্ত করেন।
সর্বশেষ বিনোদ (সুইপার) কে বদলী করে গৌবিন্দ (সুইপার) কে অধিকতর সুবিধার জন্য ছাত্তারের সিফটে প্রেরণ করেন। আরও ভয়ঙ্কর তথ্য হল বিগত ১০/১১ মাস পূর্বে গোলাম সরোয়ার সহকারী এ/সি মেকানিক হতে পদোন্নতি পেয়ে মেকানিক হয়। বর্তমানে উক্তকর্মচারীর ইলেকট্রিক ট্রেডের কোন সেট-আপ চট্টগ্রামের প্রকৌশল শাখায় না থাকা স্বত্তেও মুখ্য প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিনের সহযোগীতায় নর্বিঘেœ চট্টগ্রামে থেকে স্বর্ণ চোরাচালান করে আসছে। সরোয়ারের বাসা হতে উক্ত মূখ্য প্রকৌশলীর বাসায় প্রায় খাবার সরবরাহের অভিযোগ আছে।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে বিমানের প্রকৌশল শাখা, যানবাহন শাখা, ও নিরাপত্তা শাখা ও সিভিল এভিয়েশনের কর্মচারীদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘ ০৫ থেকে ১৮ বছর যাবৎ কর্মরত আছে। তাদের অধিকাংশই চোরা কারবারের সাথে জড়িত। বিমানের নিয়ম অনুযায়ী তিন পছর পর বদলী করার নিয়ম থাকলেও অদৃশ্য কারনে চট্টগ্রামে তা কার্যকর হচ্ছে না। আবার অনেকে বদলী না করার খোড়া যুক্তি হিসেবে ক্যাজুয়েল কর্মচারীর দোহাই দিয়ে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি বিমানের আভ্যন্তরিন পাঁচটি স্টেশনে অনেক ক্যাজুয়াল কর্মচারীকে বদলীর নজির আছে।
প্রকৌশল শাখার সাত্তার চট্টগ্রামে বদলী হয়ে প্রায় ৮ বছর যাবৎ নির্বিঘেœ চোরাচালান করে আসছে। ইতোপূর্বে বেশ ক‘বার তার বদলী কতৃপক্ষ আমলে নিলেও অদৃশ্য কারনে তা কার্যকর করতে বিমান প্রশাসন ব্যর্থ হয়। স্বয়ং বিমানের প্রকৌশল শাখা সাত্তারের বদলী আদেশ বাস্তবায়নে বিভিন্ন ক্ষমতাধর আমলা, সিভিল এভিয়েশনের উর্ধতন কর্মকর্তা, শ্রমিক নেতা ও রাজনৈতিক তদ্বির এর চাপে অসহায় বোধ করে। গত বছর ৬ ফেব্র“য়ারী চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের আটক ৪৯ কেজি সোনা আটকের ঘটনা এবং ২০ মার্চ ৩০ পিস সোনাসহ আটক বিমানের সুইপার সুকলাল ও জীবনের ঘটনা সংক্রান্ত মামলা এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার অভিযোগের ভিত্তিতে ৬ এপ্রিল তার বদলী আদেশ প্রকাশিত হয়।
সে মোতাবেক তার ১৩ এপ্রিল ঢাকায় যোগদান করার কথা ছিল। সাত্তার উক্ত বদলী আদেশ পেয়ে চট্টগ্রামের সেনা চোরা চালানের বিশাল সাম্রাজ্য তার হাত ছাড়া যেন না হয় সে লক্ষে মোটা অংকের টাকা নিয়ে লবিং তদবির শুরু করে। অবশেষে প্রভাবশালী এক মন্ত্রী ও আমলা, সিভিল এভিয়েশনের জনৈক উর্ধতন কর্মকর্তা, রাজনীতিবীদের চাপের মুখে সাত্তারের কাছে বিমান প্রকৌশল প্রাশসন নথি স্বীকার করে দুই মাসের সময় বৃদ্ধির অনুমোদন দিতে বাধ্য হয়। সাত্তারের ভাষ্য মতে প্রাথমিক ভাবে তার বদলীর সময় বৃদ্ধি করা হলেও পরবর্তীতে বদলী আদেশ বাতিল করতে সে সক্ষম হবে। যার প্রেক্ষিতে এ পর্যন্ত প্রায় তার ২০ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানা গেছে।
নিয়মানুযায়ী প্রত্যেক আটক বা জব্দকৃত চোরাচালানীর বিপরীতে মামলা দায়ের করা হয়। গত বছর ৬ ফেব্র“য়ারীর ৪৯ কেজি স্বর্ণ আটক ও ২০ মার্চ ৩০পিস স্বর্ণের বার সহ আটক সুইপার সুকলাল ও জীবনের গ্রেপ্তারের ঘটনায় প্রধান সন্দেহ ভাজন হিসেবে সাত্তার গোয়েন্দা নজরদারি তে আছে। এ বিষয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে বিভিন্ন চেষ্টা তদবির অব্যাহত রাখে এবং অনেকটা সফলকাম ও হয়। উক্ত সুইপার আটকের মামলা নং- ০৮, পতেঙ্গা থানা দায়েরের পর আটককৃতদের তিন দিনের রিমান্ড নিয়েও কোন তথ্য সংগ্রহ করতে না পারায় এবং পরবর্তীতে হাতেনাতে আটক আসামী সুইপার জীবনের জামিনে মুক্তি পাওয়ায় প্রশাসনে তোলপাড় হয়। যার কারনে উক্ত মামলা ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। উক্ত মামলায় ডিবির তৎপরতায় চোরা কারবারী চক্র শংকিত হয়ে তদবির লবিং অব্যাহত রাখে। ইতো মধ্যে ডিবিতে সৎ ও সাহসী কর্মকর্তা বাবুল আক্তার (এএসপি) বদলি হওয়ায় তাদের তদবিরে কিছুটা ভাটা পরে। জানাগেছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার আব্দুল জলিল মন্ডল উক্ত মামলায় যদি ওয়াকেফহাল হয় সে বিষয়ে তারা বেশ উদ্বিঘœ। কারন উক্ত মামলায় আটক সুইপার সুকলালকে যদি পুনরায় ডিবিতে রিমান্ডে নেয়া হয় তাহলে চট্টগ্রাম বিমান বন্দরের চোরা কারবারী চক্রের পরিকল্পনা, রহস্য, এবং সংশ্লিষ্টদের তালিকা প্রকাশ হয়ে যেতে পারে।
কে এই গডফাদার ছাত্তার : বিমানে ১৯৯৪ সালে ক্লিনার হিসেবে প্রকৌশল শাখায় এসএসসি পাশ করে যোগদান করে। ডিউটির পাশাপাশি চোরাকারবারীর বিভিন্ন রুট, পদ্ধতি, পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে নিজেকে একজন সফল চোরাকারবারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তার গ্রামের বাড়ী নরসিংদি জেলার মনোহরদী থানার হাতির দিয়া গ্রামে জনৈক সাধারন কৃষক আব্দুল বারীর ২য় ছেলে। তার বড় ভাই একজন সামান্য হোমিও চিকিৎসক এবং ছোট ভাই বিএডিসির একজন চতুর্থ শ্রেণীর একজন কর্মচারী। বর্তমানে সাত্তারের হাতির দিয়া গ্রামে প্রায় বিশ হাজার স্কয়ারফিটের পাঁচতলা বাড়ীর নির্মানাধীন। একদুরীয়া ইউনিয়ন পরিষদ অফিস সংলগ্ন ও হাতির দিয়া কলেজের গেটের পাশে প্রায় পনের হাজার স্কয়ারফিটের ইউপেটার্ন মার্কেটে নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। উল্লেখ্য যে, উক্ত মার্কেটে তার বড় ভাইয়ের হোমিও চেম্বার রয়েছে।
তার নামে বেনামে ও শশুর বাড়ীর আত্মীয় স্বজনের নামে বহু জমি/ফ্ল্যাট রয়েছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে জিএসই মোড়ে ওয়েল পার্ক হোটেলের পার্শে সানমার প্রপার্টিজ হতে ফ্ল্যাট নং-এ/৩, ক্রয় করে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭৫ লাখ টাকা। তার ও স্ত্রীর নামে পুজিঁ বাজারে প্রায় ২/৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা আছে। আরও জানা যায় ইতোপূর্বে তার এক বন্ধুর সাথে পার্টনার হিসেবে গার্মেন্টস ব্যবসা ঢাকায় শুরু করে। সেখানেও ২/৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল। চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে ১৩ নং গেট দিয়ে চোরা চালান রোধ করার লক্ষে সিভিল এভিয়েশন কতৃপক্ষ বিমান ও অন্যান্য সংস্থার গাড়ী চলাচল বন্ধ রাখে। কিন্তু এয়ারপোর্টের সম্মূখে সম্প্রতি পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৩ নং গেট দিয়ে মোটর সাইকেল যোগে সাত্তার নির্বিঘেœ চোরাচালান চালিয়ে যাচ্ছে। আরও জানা যায় চট্টগ্রামে থাকা কালে সে চোরাচালানের সাথে সংশ্লিষ্টতার কারনে একবার সাময়ীক বরখাস্ত হয়েছিল।
চট্টগ্রাম স্টেশনের বিমানের নিরাপত্তা ইনচার্জ ফজলুল হক কে মোবাইলে মেরে ফেলার হুমকি প্রদানের প্রেক্ষিতে উক্ত নিরাপত্তা ইনচার্জ বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করে। উক্ত অভিযোগ তদন্ত করে তদন্ত কর্মকর্তা ( যিনি বর্তমানে শিল্প সম্পর্ক শাখায় কর্মরত) তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট দেয়। রির্পোটে চট্টগ্রাম স্টেশন হতে জরুরী ভিতিত্তে সাত্তারের বদলীর সুপারিশ করা হয়। চট্টগ্রামে তার সহকর্মী তৌহিদুল আলমকে ও অনুরুপ মোবাইলে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করায় পতেঙ্গা থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করা হয়েছিল।
স্বর্ণ ক্যারিয়ার হারাধনের বৃত্তান্ত : চট্টগ্রাম স্টেশনে বিমানের প্রকৌশল শাখার সুইপার হারাধনের পূর্বের জীবন বৃত্তান্ত ও বর্তমান অবস্থার পার্থক্য বেশ লোমহর্ষক। চট্টগ্রাম বিমান বন্দরের কার্যক্রম যখন পুরাতন এয়ারপোর্ট হতে পরিচালিত হতো তখন হারাধন ফটিকছড়ি স্টোরে ৫০০/৬০০ টাকার বেতন ভুক্ত একজন সামান্য কর্মচারী ছিল। সেখান হতে বিমানের প্রকৌশল শাখার কর্মকর্তা কর্মচারীদের খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব পায়। তার আনুগত্যে মুগ্ধ হয়ে প্রকৌশলীগণ তাকে সুইপার পদে নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহন করে।
কথিত আছে ঐ সময়ে তার নিয়োগে চোরা করাবারীদের বিশেষ সহযোগীতা ছিল। সে বর্তমানে চট্টগ্রাম বিমান বন্দরের চোরা কারবারীদের আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক। একজন ক্যাজুয়াল সুইপার হিসেবে সামান্য চাকুরী করে ফাউন্ডেশন সহ ফটিকছড়ির নারায়ন হাটে ফাউন্ডেশনসহ তার গ্রামের বাড়ী নির্মান কাজ সম্পন্ন করেছে। চট্টগ্রামে বন্দর টিলায় বন্দর ট্রেড সেন্টারে একটি দোকান বরাদ্ধ নিয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা। সম্প্রতি প্রকৌশল শাখায় তার ছোট ভাই রাজিবকে সুইপার পদে নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহন করে। (বর্তমানে রাজিব কে চট্টগ্রামে বদলীর জন্য জোর লবিং অব্যাহত রেখেছে) বিজয় নগরের বাসা হতে অফিসে আসা যাওয়ার জন্য একটি নতুন পেজার মোটরসাইকেল ব্যবহারের জন্য সে ক্রয় করেছে যার আনুমানিক মূল্য ৩ লক্ষাধিক।
আরও জানা যায় বিমানবন্দর সংলগ্ন বিজয় নগরে ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া করে ফ্যামিলিসহ বসবাস করছে যার বাসা ভাড়া প্রায় ৮ হাজার টাকা। আরও জানা যায় তার নামে বেনামে জমিজমা/ফ্ল্যাট, নগদ অর্থের পরিমানও লোমহর্ষক। তার দৈনন্দিন পরিদেয় বস্ত্র ও চালচলন অনেকটা যুবরাজ সাদৃশ। যাকে বলে আলাদীনের চেরাগ প্রাপ্তির বাস্তব উদাহরণ।
গোলাম সরোয়ার স্মার্ট স্বর্ণ চোরাকারবারী : বিমানে উক্ত কর্মচারীর পিতা একজন শ্রমিক নেতা থাকার সুবাধে এসএসসি পাশ করে এয়ারক্র্যাফট ক্লিনার হিসেবে ২০০০ সালেনিয়মিত হয়। তার পিতার পরিচিতি ও ট্রেড ইউনিয়নে সম্পৃক্ত হয়ে কিছুটা বাড়তি সুবিধা গ্রহন করে চোরাকারবারীদের সাথে ক্যারিয়ার হিসেবে যোগদান করে। খুব কম সময়ের মধ্যে চোরাকারবারীদের মধ্যে আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়।
চট্টগ্রামে বদলীর পরপরই সাত্তারের ক্যারিয়ার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে। বর্তমানে এয়ারপোর্টের পার্শে বিজয় নগরে সাত্তার কন্ট্রাকটারে বাসায় ১৪ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে বসবাস করছে। বর্তমানে বিমানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে (যারা বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করেন) এতো অধিক টাকা দিয়ে কারো বাসা ভাড়ায় থাকার রেকর্ড নেই। যা সকল মহলে বেশ আলোচিত।
একজন সামান্য মেকানিক কিভাবে ১৪ হাজার টাকা বাসা ভাড়া খাতে ব্যয় করতে পারে। এই অর্থের উৎস কোথায়? তার বাসা হতে অফিসে যাওয়া-আসার জন্য প্রায় আড়াই লাখ টাকা ব্যায়ে একটি নতুন মোটর সাইকেল ক্রয় করেন। তার নামে বেনামে বহু সম্পদ জমি নগদ অর্থ রয়েছে যার একমাত্র উৎস বিমান বন্দরের স্বর্ণ চোরাচালান।
সরোয়ার কায়নাত মুকুলের স্বর্ণ চোরাচালানের ইতি বৃত্তান্ত : কথিত আছে ফেনির জয়নাল হাজারী কর্তৃক ঘটিত ক্লাস কমিটির সক্রিয় সদস্য থেকে বিভিন্ন জটিলতা হতে উত্তরনের জন্য সরোয়ার কায়নাত মুকুল এর ভগ্নীপতির বদৌলতে চট্টগ্রামের যানবাহন শাখায় ১৯৯৯ সালে ক্যাজুয়াল কর্মচারী হিসেবে যোগদান করে। প্রকৌশল শাখার সাত্তার ও তার বাসা নিউ এরিয়া সংলগ্ন ১৪ নং হওয়ায় ২০১৩ সাল হতে স্বর্ণ চোরাচালানের ক্যারিয়ার হিসাবে কাজের সুযোগ পায়। সুষ্ঠ ভাবে উক্ত কাজ পরিচালনার জন্য চোরাচালান চক্র তাকে একটি মটর সাইকেল কিনে দেয়। ক্যাজুয়েল কর্মচারী হিসেবে তার দৈনিক অফিস হতে আয় মাত্র ৪৫০ টাকা। অথচ তার বাসা ভাড়া সন্তানের স্কুল খরচ, বাজার খরচ ব্যতিত তার দৈনিক খরচ ৫০০ টাকা। (তিনটি মোবাইলের খরচ, মটরসাইকেলের অকটেন, সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, নুন্যতম এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট এর ব্যায় ধরলে ৫০০ টাকার বেশী হবে) ।
বাসা বাড়া বাজার খরচ সন্তানের স্কুলের খরচ মিলে আরও প্রায় প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকার বাড়তি ব্যায় তো রয়েছে। আয় ব্যয়ের এই অসংগতি সোনা চোরা কারবারীদের ক্যারিয়ার হিসেবে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়। জানা যায় এ পর্যন্ত উক্ত খাত হতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা তার ইনকাম হয়েছে।
বিগত বছরের ২০ মার্চ বিমান বন্দরের প্রকৌশল শাখার সুইপার সুকলাল ও জীবনের স্বর্ণসহ আটকের ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার প্রেক্ষিতে বিমানের প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী বিমান বন্দর হতে জেলা অফিসে ডিউটি ন্যাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে তাকে ৫ ঘটিকা হতে ১৩ ঘটিকা পরবর্তী বিমান বন্দরে অবস্থান না করার শর্তে বিমান বন্দরস্থ যানবাহন শাখায় প্রেরণ করা হয়।
জানা যায় চোরাকারবারীদের প্রভাব চট্টগ্রাম বিমান প্রশাসনে এত বেশি যে, উক্ত আদেশ লঙ্ঘন করে চোরাকারবারী সহায়তায় যেন বিঘœতার সৃষ্টি না হয় সেটা লক্ষনীয়। সম্প্রতি তার পুরাতন মোটর সাইকেল পরিবর্তন করে নতুন মডেলের মোটর সাইকেল ক্রয় করে বেশ স্বাচ্ছন্দে, নির্বিঘেœ প্রশাসনের সহায়তায় চোরা চালানে সহযোগীতা করে চলছে।
ক্যারিয়ার এমটি ড্রাইভার পলাশ কান্তি দে : বহু চেষ্টা তদবির করে ঢাকা হতে চট্টগ্রামে বদলি হয়ে সোনা চোরাকারবারীর ক্যারিয়ার হিসেবে নিজেকে আত্মনিয়োগ করে। যেহেতু গাড়ী চালানো তার পেশা সুতরাং গুরুত্বপূর্ণ ক্যারিয়ার হিসেবে তার চাহিদা ও রেট অন্যদের তুলনায় বেশী। সে এপ্রোন এলাকায় গাড়ী চালানো ডিউটি নিয়ে উক্ত স্বর্ণের বার ডেলিভারি দিয়ে থাকে। ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে, এপ্রোন এলাকায় গাড়ী চালনায় সর্বোচ্চ ১-৪ কিঃ মিঃ গাড়ী ব্যবহƒত হলেও তার ক্ষেত্রে ১০-১৫ কিঃ মিঃ পর্যন্ত রেকর্ড রয়েছে।
জানা যায় এপ্রোনের গাড়ী নিয়ে নেভাল, বাটার ফ্লাই পার্ক, এয়ারপোর্টের সামনে বিভিন্ন পয়েন্টে সে স্বর্ণের বার ডেলিভারি দিয়ে থাকে। উক্ত খাত হতে অর্জিত টাকা দিয়ে চকরিয়া থানার ডুলহাজারায় গ্রামের বাড়ী ৫ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে নির্মান করেন। আরও জানা যায় এয়ারপোর্ট সংলগ্ন চেয়ারম্যান বাড়ী হতে প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকার টাইলস ক্রয় করে বাড়ীতে সংযোজন করেছে। উক্ত বাড়ী নির্মানে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যায় হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সোনা চোরাকারবারীর/ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ করে অল্প দিনে যদি বাড়ী নির্মাণের মত টাকা অর্জন করা যায় তবে অন্যদের উক্ত কাজে আকৃষ্ট হওয়াটা স্বাভাবিক। বর্তমানে সে এপ্রোন ডিউটি করার জন্য (সন্দেহ জনক ফ্লাইট সমূহে) বেশ তৎপর। প্রায় নিজে নিজেই এপ্রোন ডিউটির নামে গাড়ী বুক আউট করে থাকে। বিগত বছরের ২০ মার্চ স্বর্ণ আটকের ঘটনায় পলাশকেও জেলা অফিসে কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় ন্যাস্ত করা হয়েছিল। পরবর্তিতে এপ্রোন ডিউটিতে নিয়োজিত না করার শর্তে তাকে বিমান বন্দরে ফেরত আনা হয়। অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। সে বর্তমানে এপ্রোন ডিউটির জন্য মরিয়া। ইনসেটে তার ছবি ও গ্রামের নির্মানাধিন বাড়ীর ছবি দেওয়া হল।
সম্প্রতি দেশব্যাপী নাশকতার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিমান বন্দরের সম্মূখে সর্বদা পুলিশ প্রহরা থাকায় চরবস্তি মসজিদ গেট সংলগ্ন স্টাফগেট দিয়ে প্রায় উপরে উল্লেখিত চোরাকারবারীদের সকলেই মোটরসাইকেল যোগে নির্বিঘেœ সোনা পাচারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ উক্ত গেট শুধু মাত্র স্টাফদের পায়ে চলার পথ হিসেবে নির্ধারিত ছিল। বিশেষজ্ঞরা বরেছেন, চট্টগ্রাম বিমান বন্দরের সোনা চোরা কারবারীদের বিরুদ্ধে বিমান, প্রশাসন, দুদক, এনবিআর ঢাকা বিমান বন্দরের ন্যায় ব্যবস্থা গ্রহন করলে অবশ্যই অনেক রহস্যের সন্ধান পাওয়া যাবে। বিমানের সম্মান, ভাবমুর্তি রক্ষা করতে এখনই ব্যবস্থা গ্রহন জরুরী।
এ প্রসঙ্গে বিমানের প্রকৌশল শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) আসাদুজাজ্জামান বলেন, সাত্তারকে ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম থেকে শাহজালাল (র.) আন্তজাতিক বিমান বন্দরে বদিল করা হয়েছে। দুই মাসের জন্য তার এই বদলি আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। দুই মাস পর অটোমেটিক তার বদলির আদেশ বাস্তবায়ন করা হবে। এর কোন বিকল্প নাই বলেও তিনি জানান। এছাড়া সোনা চোরাচালান সম্পর্কে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।