মিয়ানমারে জান্তা সরকারের সংবিধান পরিবর্তন চান সু চি

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রণীত সংবিধান পরিবর্তন আনার প্রশ্নে পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাবনা দাখিল করেছে ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)।

দলের নেত্রী অং সান সু চির ক্ষমতার তিন বছরের মধ্যে একে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেছে রয়টার্স। মিয়ানমারের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

পার্লামেন্টে তাদের জন্য ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত। এর মাঝেই মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর তৈরি সংবিধানে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব তুলেছে এনএলডি।

রয়টার্স বলছে, সংবিধানে পরিবর্তন আনার এ প্রস্তাবের ফলে সেনাবাহিনী ও সু চির এনএলডি’র মধ্যে উত্তেজনা ছড়াতে পারে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয়ের পর এই প্রথম সংবিধান পরিবর্তনের প্রস্তাব করল এনএলডি।

পার্লামেন্টের স্পিকার টি খুন মিয়াত বলেন, সংবিধান পরিবর্তনের প্রশ্নে মঙ্গলবার এনএলডি দলের সংসদ সদস্য অং চি নায়ান্ট একটি ‘জরুরি প্রস্তাব’ এনেছেন। এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে সেনাবাহিনীর সংসদ সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মং মং বলেন, প্রস্তাবটি দাখিলের পদ্ধতির ক্ষেত্রে শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে।

মঙ্গলবার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের লক্ষ্যে ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে। পার্লামেন্টের উভয় কক্ষেই সু চির এনএলডির সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।

২০০৮ সালে সেনাবাহিনী দেশটির সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন করে। এতে সংসদের উভয় কক্ষেই সেনাবাহিনীর জন্য এক-চতুর্থাংশ আসন সংরক্ষণের বিধান করা হয়।

সংবিধানে পরিবর্তন আনার জন্য পার্লামেন্টের ৭৫ শতাংশের বেশি সদস্যের সমর্থনের প্রয়োজন। সংরক্ষিত আসন থাকায় এ প্রস্তাবে ভেটো দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে সেনাবাহিনীর।

এর আগে সংবিধানের ৪৩৬ ধারায় পরিবর্তন আনতে চেয়েছিল এনএলডি’র কয়েকজন সদস্য। ওই ধারার বলে সংবিধান সংশোধনীর প্রশ্নে ভেটো দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে সেনাবাহিনীর।

তাদের তৈরি ওই সংবিধানের কারণে প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি সু চি। সংবিধানে বলা হয়, স্বামী, স্ত্রী বা সন্তানের যদি বিদেশি নাগরিকত্ব থাকে তাহলে দেশটির কোনো নাগরিক মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না।

সু চির ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত স্বামীর ঘরে দুই ছেলে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট হতে না পারায় দেশটিতে ‘স্টেট কাউন্সিলর’ নামে নতুন একটি পদ তৈরি করেন তিনি। প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি মর্যাদাশীল এ পদে তিন বছর ধরে আসীন রয়েছেন সু চি।

প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্রসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয় রয়েছে সেনাবাহিনীর হাতে। মিয়ানমারে ৫০ বছরের সেনা শাসনের অবসান ঘটিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনবেন বলে নির্বাচনের আগে থেকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন সু চি। কিন্তু সংবিধানে সংশোধনী ও সেনাবাহিনীর ক্ষমতা কমিয়ে আনার ব্যাপারে প্রকাশ্যে আহ্বান জানিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন সু চির উপদেষ্টা কো নি। ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরে প্রকাশ্যে তাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। তবে সংবিধানে সংশোধনীর সঙ্গে এ হত্যাকাণ্ডের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.