থাইল্যান্ডে ১১৭ অভিবাসী উদ্ধার, অধিকাংশ বাংলাদেশি

Thai Bangl;adeshi dead.jpgerfghথাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় শংখলা প্রদেশের রাত্তাফুম জেলায় ১১৭ জন অভিবাসীকে জীবিত অবস্থায় পেয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এই অভিবাসীদের অধিকাংশই বাংলাদেশ থেকে সেখানে গেছেন বলে দাবি করেছেন প্রদেশটির ডেপুটি গভর্নর।

জানানো হয়, ওই ১১৭ জন অভিবাসী মানব পাচারের শিকার কি না, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে আজ শনিবার তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে থাইল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ।

মালয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী শংখলা প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর একারত সিসেন  বলেন, ‘এখানে ১১৭ জন মানুষ রয়েছে। তাদের মধ্যে ২৬ জন মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা মুসলমান। অন্যরা বাংলাদেশ থেকে এসেছে।’

শংখলা প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর বলেন, ‘এসব মানুষ মানব পাচারের শিকার, নাকি তাঁরা নিজ থেকেই এ দেশে প্রবেশ করেছে, তা জানা দরকার। তারা যদি মানব পাচারের শিকার হয়, তাহলে আমরা অবশ্যই তাদের সামাজিক উন্নয়ন ও মানবনিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করব। আর যারা নিজ থেকে অবৈধভাবে এ দেশে প্রবেশ করেছে, তাদের অভিবাসন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তাদের নিজ নিজ দেশে পাঠানো হবে।’

এর আগে গতকাল শুক্রবার থাইল্যান্ডের পুলিশ জানিয়েছিল, তারা দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শংখলা প্রদেশের একটি পার্বত্য এলাকায় ১১১ জন অভিবাসীকে জীবিত অবস্থায় পেয়েছে। তারা ‘মিয়ানমার ও বাংলাদেশ’ থেকে আসা রোহিঙ্গা অভিবাসী বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের জঙ্গলে ফেলে সন্দেহভাজন পাচারকারীরা পালিয়ে গেছে।

তখন এই ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে রাত্তাফুম পুলিশ স্টেশনের উপ-তত্ত্বাবধায়ক পুলিশ লেফটেন্যান্ট কর্নেল সোমকিয়াত অসতাফুন  বলেন, ‘একটি পার্বত্য এলাকায় তাদের পাওয়া গেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তাদের যারা নিয়ে এসেছে, তারা পালিয়ে গেছে। এ কারণেই তারা এখানে পড়ে ছিল।’

থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় শংখলা প্রদেশের রাত্তাফুম জেলার একটি মিলনায়তনে উদ্ধার হওয়া অভিবাসীরা। ছবিটি আজকের।পরে ঘটনাস্থল থেকে একজন প্রতিবেদক জানান, রাত্তাফুম জেলার একটি বৈঠক কক্ষে ১১৭ জন অভিবাসীকে গাদাগাদি করে থাকতে দেখা গেছে। সেখানে তিনটি শিশুও রয়েছে। অভিবাসীদের দাঁত ব্রাশ করা, ঘুমানো, খাওয়া ও প্রার্থনা করতে দেখা গেছে। কর্তৃপক্ষের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তারা অপেক্ষা করছিল। অভিবাসীদের পানি, চাল ও ফলমূল দান করার জন্য কিছু থাই গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে এসেছেন।

ওই ১১৭ জনের মধ্যে ৩৩ বছর বয়সী বুসরি সালাম নামের একজনের ভাষ্য, তিনি বাংলাদেশ থেকে গেছেন। তাঁর ভাই মালয়েশিয়া থাকেন। তিনি সেখানে যেতে চেয়েছিলেন।

গত সপ্তাহে থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় গভীর জঙ্গলে আবিষ্কার করা অগভীর কবর থেকে অন্তত ৩৩ জনের দেহাবশেষ ও কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। তারা বাংলাদেশি ও মিয়ানমানের অভিবাসী বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই এলাকায় সন্দেহভাজন মানব পাচারের অন্তত তিনটি শিবিরও পাওয়া যায়।

মানব পাচার-বাণিজ্য বন্ধে ১০ দিনের সময়সীমা দিয়ে অভিযান কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন থাই সামরিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চাঁন-ও-চাঁ। গতকাল শুক্রবার এ ঘোষণা দেন তিনি। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে মালয়েশিয়া ও মিয়ানমারের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে থাইল্যান্ডের পেদাং বেসার শহরের মেয়র বানজং পংফলকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। থাইল্যান্ডের পুলিশপ্রধান সোমইয়োত পুমপান গতকাল এ তথ্য জানান।

গত মাসে প্রকাশিত জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর দিয়ে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের উদ্দেশে অবৈধভাবে পাড়ি জমিয়েছে প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা। এ সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ।

২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় তিন বছরে সাগরপথে পাচার হওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ।

জাতিসংঘের ওই সংস্থার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘পাচারকারীদের কবল থেকে বাঁচা লোকজনের তথ্য অনুযায়ী আমরা ধারণা করি, এ বছরের প্রথম তিন মাসে সাগরে ক্ষুধা, পানিশূন্যতা ও নৌকায় থাকা দালালদের নির্যাতনে ৩০০ জন মারা গেছেন।’

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.