সরকারি অতিরিক্ত ৭ হাজার হজযাত্রী কোটা অনেকটা গোপনেই পুনর্বণ্টন করা হয়েছে। হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাব ও আন্দোলনরত এজেন্সি মালিকদের অন্ধকারে রেখেই ধর্মমন্ত্রণালয় এ কোটা পুনর্বণ্টন করে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের ওপর ক্ষুব্ধ হয় পরস্পরবিরোধী অবস্থানে থাকা হাব ও ক্ষতিগ্রস্ত এজেন্সি মালিকরা।
জানা গেছে, এ বছর হজে যেতে ইচ্ছুক ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ বাংলাদেশির চূড়ান্ত তালিকা গত সোমবার সৌদি আরবে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রস্তাবিত ২৫ হাজার জনের অতিরিক্ত কোটা সৌদি সরকার অনুমোদন দেয়নি। তার মধ্যে অফিসিয়ালি ১০ হাজার এবং আনঅফিসিয়াল ২০ হাজার হজযাত্রী অতিরিক্ত হওয়ায় মোট ৩০ হাজার হজযাত্রীর হজ পালন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। গত বছর ৮ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুমোদিত হজ প্যাকেজে হজযাত্রীর সরকারি কোটা ছিল ১০ হাজার। বেসরকারি কোটা ছিল ৯১ হাজার ৭৫৮ জন। কিন্তু পরে বেসরকারি হজযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি সাত হাজার হজযাত্রীর কোটা বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর অনুকূলে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ফলে বর্তমানে সরকারি কোটা হবে তিন হাজার এবং বেসরকারি কোটা হবে ৯৮ হাজার ৭৫৮ জন। তাই শেষ পর্যন্ত চলতি বছর প্রায় ২০ হাজার হজযাত্রী হজে যাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যদিও ক্ষতিগ্রস্ত হজ এজেন্সিসমূহ সমতার ভিত্তিতে হজযাত্রী কোটা পুনর্বণ্টন ও সৌদি থেকে অতিরিক্ত কোটা বরাদ্দে আনার উদ্যোগ নেয়ার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত হজ এজেন্সিসমূহ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন এবং আগামী ১১ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অভিমুখে এহেরামের কাপড় পরে পদযাত্রা করার কর্মসূচি রয়েছে।
সূত্র জানায়, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত ৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির মতামতের ভিত্তিতে হজযাত্রী পুনর্বণ্টন প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী বুধবার আশকোনা হজ অফিসে -বণ্টনকৃত হজযাত্রীদের নতুন নিবন্ধন কার্যক্রমও শুরু হয় বলে জানা গেছে। হজযাত্রী কোটা বণ্টনের গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান বিএইচ হারুন এমপি, ধর্ম সচিব চৌধুরী মো. বাবুল হাসান, যুগ্ম সচিব হাসান জাহাঙ্গীর আলম, উপ-সচিব (হজ) ফয়জুর রহমান ফারুকী ও পরিচালক হজ (হজ অফিস)। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে এ নিয়ে এখনো অন্ধকারে হাব (হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) নেতারা। কারণ গঠিত কমিটিতে হাবের প্রতিনিধি দুই সদস্য সভাপতি ইব্রাহিম বাহার ও মহাসচিব শেখ আবদুল্লাহ ৭ হাজার কোটা বণ্টন তাদের মন মতো না হওয়ায় চূড়ান্ত তালিকায় স্বাক্ষর দেননি। এ নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাবের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়।
হাব সভাপতি ইব্রাহিম বাহার বলেন, হজযাত্রী কোটা পুনর্বণ্টনের বিষয়টি তাদের মন মতো না হওয়ায় হজযাত্রীর চূড়ান্ত তালিকায় স্বাক্ষর করেননি। তিনি বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কীয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান বিএইচ হারুন এমপি ধর্মমন্ত্রীর প্রস্তাবিত অতিরিক্ত ২৫ হাজার কোটা বরাদ্দের জন্য সৌদি সরকারের মজলিসে শূরাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু সেটার অপেক্ষা না করেই মন্ত্রণালয় কোটা পুনর্বণ্টন করে।
এজেন্সি মালিকদের অভিযোগ, হজযাত্রী কোটা পুনর্বণ্টনে বেশকিছু মন্ত্রী-এমপির সুপারিশকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। উপেক্ষা করা হয়েছে হাব নেতাদের সুপারিশ। শুধু তাই নয়, আন্দোলনরত এজেন্সি মালিকদের বিষয়টিও বিবেচনায় না নিয়ে কোটা পুনর্বণ্টন করা হয়। এজন্য কতিপয় এজেন্সি থেকে কোটা বণ্টনে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
আন্দোলনরত ক্ষতিগ্রস্ত এজেন্সি মালিকদের সংগঠনের আহ্বায়ক মাওলানা ফজলুর রহমান বলেন, তারা আন্দোলন করছেন কোটা সিন্ডিকেটের বাইরে গিয়ে সুষ্ঠুভাবে যেন তা বণ্টন করা হয়। কিন্তু এখন দেখছেন হাব নেতারা এবং তাদের কাউকে না জানিয়েই কোটা বণ্টন করা হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় কোন নীতিমালায় হজযাত্রী কোটা পুনর্বণ্টন করছে তা তারা জানেন না। এখন অপেক্ষা করছেন তাদের মধ্যেও কেউ এ তালিকায় বেশি কোটা পেয়েছে কিনা তা দেখার জন্য। তিনি বলেন, হজযাত্রী কোটা পুনর্বণ্টনে হজ এজেন্সিগুলোর সঙ্গে বিমাতাসূলভ আচরণ করা হলে তা মেনে নেয়া হবে না। বঞ্চিত সমস্ত হজযাত্রীদের সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
জানা গেছে, পুনর্বণ্টনকৃত হজযাত্রীদের পাসপোর্টসহ যাবতীয় তথ্যাদি হজ অফিসের আইটি বিভাগে জমা দেবে হজ এজেন্সিগুলো। পরে আইটি বিভাগ মোয়াল্লেম ফি জমা দিয়ে এসব হজযাত্রীদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করবে।
আরও খবর