বৃটেনে রক্ষণশীল দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করায় অভিবাসীরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কারণ ডেভিড ক্যামেরনের সরকার ক্রমাগতভাবে অভিবাসীদের নিয়ন্ত্রণে কঠোর হয়ে উঠছিলেন। ইশতেহারে অঙ্গীকার আছে যে, আমরা স্টুডেন্ট ভিসায় বড় রকমের সংস্কার সাধন করবো। একবার কারও ভিসার মেয়াদের অতিরিক্ত থাকা ছাত্রদের সংখ্যা হ্রাস করা হবে। লন্ডনের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় -গুলোর মধ্যে যারা লন্ডনে ‘স্যাটেলাইট ক্যাম্পাস’ খুলেছে সেসব বন্ধ করে দেয়া হবে। ছাত্রদের জন্য বিদ্যমান হাইলি ট্রাস্টেড স্পন্সর সিস্টেমকে রিভিউ করা হবে। যেসব কলেজ বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভিসা স্পন্সরের শর্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা (টার্গেটেড স্যাংশন) নেয়া হবে। এখন থেকে বৃটেনের প্রত্যেক বাড়িওয়ালাকে বিদেশী ভাড়াটেদের ব্যাপারে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। বাড়ি ভাড়ার চুক্তি করার সময় অভিবাসীদের ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস কি তা তাদেরকে খতিয়ে দেখতে হবে। ব্যবসায়-বানিজ্যের কোন সেক্টর যাতে আংশিক বা পুরোপুরি বিদেশী শ্রমিক নির্ভর না হতে পারে, সেজন্য কড়া নজর রাখা হবে। একটি শর্টেজ অকুপেশন লিস্ট ব্যবহার করে বিদেশ থেকে দক্ষকর্মী আনতে হবে যাতে তারা দীর্ঘমেয়াদে বৃটিশ শ্রমিকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারে।
ডেভিড ক্যামেরনের ইশতেহার আরও বলেছে, অভিবাসীদের ইংরেজি ভাষায় অবশ্যই পারদর্শী হতে হবে। কাউকে বৃটেনে আসতে হলে তাকে ভাষার ওপর কঠিন পরীক্ষায় পাস করতে হবে। কারণ সরকার অনুবাদের খরচ কমাতে চায়। আমরা আইন এটা বাধ্য করবো যে, প্রত্যেকটি সরকারি খাতে যেখানে জনগণকে সরাসরি সেবা দেয়ার বিষয় রয়েছে তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদেশী শ্রমিকদের অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে হবে। আমাদের সমাজের সঙ্গে অভিবাসীরা ভালভাবে মিশতে পারে সেজন্য যারা ফ্যামিলি ভিসায় বৃটেন আসতে চায় বা ভিসার মেয়াদ বাড়াতে চায় তারা ইংরেজিতে ভাল করলে তাদেরকে উৎসাহিত করা হবে।
এছাড়া আগে অনেকেই রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য দরখাস্ত দিয়ে দীর্ঘদিন বৃটেনে কাটাতে পারতেন। এখন কনজারভেটিভরা নীতি গ্রহণ করবে যে, কারো দরখাস্ত অনির্দিষ্টকাল ধরে ফেলে রাখার সুফল কাউকে পেতে দেয়া হবে না। এমনকি যে ক্ষেত্রে ‘পারিবারিক জীবনের অধিকারের’ প্রশ্ন থাকবে সেখানেও তারা নমনীয়তা দেখাবে না।
দলটি তার নির্বাচনী ইশতিহারে সাফ উল্লেখ করেছে যে, কোন বিদেশী অপরাধ সংঘটনে অভিযুক্ত হলেই তাকে তাৎক্ষণিক বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। বলা হয়েছে, ‘আগে বহিষ্কার পরে আপিল ভাবনা’ মর্মে যে নীতি তারা নিয়েছিল তা তারা আরও সম্প্রসারিত করবে।
রক্ষণশীল দল অভিবাসন সংক্রান্ত রীতিনীতি কঠোরভাবে আরোপ করবে। আমরা এখন থেকে যেসব বিদেশীর আপিল বিচারাধীন এমনকি তার বিষয়টি জুডিশিয়াল রিভিউ চলছে সেজন্য অপেক্ষা করা হবে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দ্রুত তার দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
ইশতেহার আরও বলেছে, অনেক অভিবাসী মিথ্যা একটা মামলা দায়ের করে নানা ছলছুতায় বৃটেনে বসবাস করার সুযোগ নেয়। অনেকে বিচার থেকে পালিয়ে থাকারও সুযোগ নেয়। আমরা কাউকে এ রকম সুযোগ নিতে দেব না। এদেরকে অপসারণ করতে আমরা নতুন কৌশল নেব। বিদেশীদের যারা অপরাধে জড়িত হবে তাদের খুঁজে বের করতে আমরা স্যাটেলাইটের সাহায্য নেবো।
ইশতেহারে অভিবাসীদের স্বাস্থ্যসুবিধা নিয়ন্ত্রণে কঠোরতা আরোপের স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। বলা হয়েছে, আগামী সংসদের মেয়াদের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে অভিবাসীদের মধ্যে যারা ন্যাশনাল হেলথ সিস্টেম বা এনএইচএস ব্যবহার করেন তাদের কাছ থেকে ৫শ’ মিলিয়ন পাউন্ড আদায় করা হবে। অনেক কমিউনিটিতে অভিবাসনের বিরাট চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা রোধ করতে আমরা একটি নতুন ‘কন্ট্রোলিং মাইগ্রেশন ফান্ড’ চালু করবো। যাতে বিভিন্ন ধরনের সেবার ওপর অভিবাসীরা চাপ সৃষ্টি করতে না পারে।