ঢাকা: কৃষি ও কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় আয়োজিত বহুমাত্রিক সংলাপের বক্তারা কৃষক আদালত গঠন, পল্লী রেশনিং ব্যবস্থা চালু, খাদ্যশস্য রফতানি বন্ধ, খাস জমি বরাদ্দ কমিটিতে কৃষক-ক্ষেতমজুর সংগঠনের প্রতিনিধিদের রাখাসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার (৯ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ, কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রী এবং এশিয়ান ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করে।
সংলাপে টিআর, কাবিখা বরাদ্দে দুনীতি, খাস জমি প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাওয়া, নারী কৃষকসহ কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন বক্তারা। পাশাপাশি এসব সমস্যা সমাধানে কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলারও আহ্বান জানান তারা।
সংলাপে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছবি বিশ্বাস, ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা, অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, এশিয়ান ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এসথার পেনুনিয়াসহ বিভিন্ন কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগঠনের নেতা এবং কৃষক প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সংলাপের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়, ক্ষুদ্র-কৃষক বান্ধব ভূমি ব্যবস্থার জন্য জনমত তৈরি করা, ক্ষৃদ্র-কৃষক বান্ধব ভূমি ব্যবস্থার জন্য প্রান্তিক কৃষকের মতামত নীতি-নির্ধারণী মহলে পৌঁছানো, ক্ষুদ্র-কৃষক বান্ধব ভূমি ব্যবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীদার ও নীতি-নির্ধারকদের মতামত সংগ্রহ করা এবং ক্ষুদ্র-কৃষক বান্ধব ব্যবস্থা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের কর্তব্য নির্ধারণ করা।
সংলাপে ছবি বিশ্বাস বলেন, যারা উৎপাদক শ্রেণী অর্থাৎ কৃষক তাদের টিকিয়ে রাখতে হবে। তাদের অধিকারগুলোকে রক্ষা করতে হবে।
ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, এই মুহূর্তে কৃষক-শ্রমিকের রাজ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলেও আমরা একটি বৈষ্যমহীন সমাজ চাই। দেশের অধিকাংশ সম্পদের মালিক একভাগ মানুষ। এজন্য বাংলাদেশ স্বাধীন করা হয়নি। কৃষকদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।
এজন্য তিনি কৃষক আদালত গঠনের দাবি জানিয়ে বলেন, জাতীয় সংসদে সরকার বিল না আনলে বেসরকারিভাবে আমরা বিল আনবো। বিল পাস না হলে কৃষকদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
তিনি খাদ্যশস্য আমদানি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেলে খাদ্যশস্য বিশেষ করে চাল-গম রফতানি করতে হবে, এমনটির কোনো মানে হয় না। হতদরিদ্রদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করে কম দামে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
তিনি খাদ্য অধিকার আইন ও খাস জমি বরাদ্দের কমিটিতে কৃষক-ক্ষেতমজুর সংগঠনের প্রতিনিধিদের রাখার দাবি জানান।
অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, আমাদের দেশের প্রধান সমস্যা আইন ব্যবহার হয় না। রাজনৈতিক এলিট, প্রশাসনিক এলিট ও ব্যবসায়ী এলিট- এই তিন এলিট এক হলে সব কিছুই তছনছ করে দিতে পারে এবং সেটাই হচ্ছে। এর ফলে কৃষকরা বিভিন্নভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয় এনে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ক্ষেতমজুরদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার এবং কৃষি শ্রমিকের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি তুলতে হবে।
সংলাপ সঞ্চালনা করেন অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির। এতে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রীর সভাপতি মনির আহমেদ।