কল সেন্টারে ক্যারিয়ার

‘শুভ সকাল, আমি নাতাশা (ছদ্ম নাম) কেয়ার থেকে বলছি, কীভাবে সাহায্য করতে পারি বলুন।’ এই লাইনটি আজকাল অহরহ শোনা যায়। আর এ কথাগুলো কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে কল সেন্টার থেকে কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি বলে থাকেন। বর্তমানে তরুণদের যে ক’টি পছন্দের পেশা রয়েছে তার মধ্যে একটি পেশা হচ্ছে কল সেন্টারের চাকরি। বাংলাদেশে দিনে দিনে বাড়ছে কল সেন্টার। এখানে আছে স্থায়ী চাকরির পাশাপাশি খণ্ডকালীন কাজেরও সুযোগ। অনেকেই পড়ালেখার পাশাপাশি বেছে নেয় খণ্ডকালীন চাকরি। এই ফাঁকে ঝুলিতে জমা হয় অভিজ্ঞতা। পরবর্তীতে কেউ কেউ এই খণ্ডকালীন কাজকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়ে থাকেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি অনেকেই যুক্ত হচ্ছে এই পেশায়। কেউ কেউ এটাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিচ্ছে। কল সেন্টারে কাজের সঙ্গে যুক্তদের বেশিরভাগই গ্রাহকদের সঙ্গে ফোনালাপের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন পণ্য, সেবা নিয়ে গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলতে হয়। এ ছাড়াও কল সেন্টারের মাধ্যমে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের ব্র্যান্ডিংও করে থাকে।

কাজের ধরন : কল সেন্টার হচ্ছে এক ধরনের কলকেন্দ্রিক অফিস, যেখানে কল গ্রহণ ও ট্রান্সমিটের কাজ করা হয়। বাংলাদেশের কল সেন্টারগুলোতে সাধারণত দুই ধরনের সেবা দেওয়া হয়- স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক। স্থানীয় পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি এই সেবা দেয় টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ছাড়াও বর্তমানে দেশের প্রতিটি করপোরেট অফিসে এই সেবা দেওয়া হয়। উন্নত দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো কল ফরওয়ার্ডের মাধ্যমে তাদের গ্রাহকদের কলটি পাঠিয়ে দেয় নির্দিষ্ট কোনো কল সেন্টারের নম্বরে। কল সেন্টারে কল দু’ধরনের হতে পারে, একটা হলো ইন বাউন্ড কল, যেখানে গ্রাহক তার প্রোডাক্ট সম্পর্কে কোনো তথ্য জানতে চেয়ে-বা সমস্যা সম্পর্কে বলবে বা সাহায্য চাইবে। আরেক ধরনের কল হচ্ছে আউট বাউন্ড, যা এজেন্ট তার গ্রাহকদের কাছে করবে কোনো কিছু বেচাকেনার উদ্দেশ্যে। কল সেন্টারে কর্মরতদের প্রধান কাজ হচ্ছে গ্রাহকের কথা শুনে সে অনুযায়ী সঠিক সেবা নিশ্চিত করা।

কাজের ক্ষেত্র : গ্রাহকদের ফোনের মাধ্যমে সেবা দেওয়াই কল সেন্টারের প্রধান কাজ। অন্যান্য দেশে এই কল সেন্টারের বিস্তৃতি ও পরিচিতি ইতিমধ্যেই অনেক। এখন বাংলাদেশেও এর পরিচিতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে যে কাজের ক্ষেত্রগুলো তৈরি হচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে ভালো সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে কল সেন্টার। এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই স্থানীয় পর্যায়ে গ্রাহকসেবা দেয়। বেশ কিছু বিদেশের বড় প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের সেবা দেয়। এই খাতে দিন দিন কাজের চাহিদা বেড়েই চলেছে। দেশে যেসব প্রতিষ্ঠান এই সেবা দেয় তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি, ব্যাংক, হাসপাতাল, ইলেকট্রিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, ইন্টারনেট সেবাদাতাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এ সব প্রতিষ্ঠানে রয়েছে কাজের সুযোগ।

যোগ্যতা : কল সেন্টারে কাজ করতে চাইলে যে কোনো বিষয়ে লেখাপড়া করে আবেদন করা যায়। শিক্ষানবিশ পদের জন্য স্নাতক পর্যায়ে পড়ছেন এমন শিক্ষার্থীরাও সুযোগ পেয়ে থাকে। শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি বাংলা ও ইংরেজিতে সাবলীলভাবে যোগাযোগে সমর্থ হতে হবে। শুদ্ধ উচ্চারণ, ভালো কণ্ঠস্বর, কম্পিউটার চালনার মৌলিক জ্ঞান যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। কল সেন্টারে কাজে গ্রাহকের কথা মন দিয়ে শুনতে হয়, তাই হতে হবে ইতিবাচক ও ধৈর্যশীল। থাকতে হবে সহযোগিতা ও একই সঙ্গে একাধিক কাজ করার মানসিকতা।

নিয়োগ প্রক্রিয়া : কল সেন্টারে কর্মীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণত বিভিন্ন জব পোর্টালে এবং নিজস্ব ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। কাজ করতে আগ্রহীরা সার্কুলার ছাড়াও সিভি পাঠাতে পারবে। সিভি পছন্দ হলে আবেদনকারীর মৌখিক যোগাযোগ দক্ষতা দেখার জন্য ভয়েস পরীক্ষা করা হয়। এরপর সাক্ষাৎকার ও কর্মভিত্তিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। সাধারণত যাদের উচ্চারণ শুদ্ধ ও কণ্ঠস্বর ভালো তাদেরই এ কাজে নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

পড়ার বিষয় :কল সেন্টারের চাকরির জন্য সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যে কোনো বিষয়ে লেখাপড়া করলেই হয়। এ জন্য আলাদা কোনো বিষয়ে পড়তে হয় না। তবে শুদ্ধ উচ্চারণ ও সাবলীলভাবে কথা বলার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছোট ছোট কোর্স করিয়ে থাকে। এই কোর্সগুলো করা থাকলে এই পেশায় কাজে দেয়।

আয়-রোজগার : কল সেন্টারে কর্মরত ব্যক্তিদের মূল কাজ হচ্ছে গ্রাহকের সঠিক সেবা নিশ্চিত করা। এ সেবা নিশ্চিত করে কর্মরতরা বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। কিছু কল সেন্টারে মাসিক হিসেবে, আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে ঘণ্টা হিসেবে বেতন দেওয়া হয়। স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে একজন পূর্ণকালীন কর্মী মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেতন পান। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এ ছাড়া খণ্ডকালীন চাকরির বেতন নির্ধারিত হয় আলোচনা সাপেক্ষে। যাতায়াত ভাতা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পান একজন কল সেন্টার-কর্মী। আছে কর্মীর সুবিধা অনুযায়ী শিফটে কাজ করার সুযোগ। কেউ যদি ছুটির দিনেও অফিস করেন, সে ক্ষেত্রে বাড়তি বেতন দেওয়া হয়। এ পদে থেকে ভালো দক্ষতা দেখাতে পারলে অনেক উপরের পদে যাওয়ার সুযোগ আছে। অনেক ক্ষেত্রে এ কাজের অভিজ্ঞতা বিভিন্ন চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.