এভিয়েশন নিউজ: আগামী বাজেটকে সামনে রেখে সরকারের কাছে পর্যটন খাতে সম্মানজনক প্রণোদনা চেয়ে ৭টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)। গত শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ প্রস্তাবনা তুলে ধরে টোয়াব নেতৃবৃন্দ। এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (এটিজেএফবি) এবং বেসরকারী ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন টোয়াব যৌথ ভাবে এ আলোচনার আয়োজন করে। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
আলোচনা সভায় টোয়াবের পরিচালক ও প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল লিমিটেড (পিএটিএ) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব তৌফিক রহমান বলেন, দেশের তারকামান হোটেলগুলো মূল্যের উপরে প্রথমে ১০ থেকে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ যুক্ত করা হচ্ছে। এরপর উক্ত মূল্যের উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রয়োগ করে। এতে করে পর্যটন ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তিনি বলেন, সার্ভিস চার্জের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে পর্যটন খাত আরও এগিয়ে যাবে।
আসন্ন বাজেট উপলক্ষ্যে টোয়াবের দেয়া ৭টি প্রস্তাবনা হলো:
আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ৫২ (কিউ) ধারা রহিত করা, হোটেলগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার অনুযায়ী লেনদেন করা, সার্ভিস চার্জের ওপর ভ্যাট আরোপ না করা, বৈদেশীক মূদ্রা অর্জনকরী পর্যটন সংস্থাগুলোর জন্য করমুক্ত যানবহন আমদানির অনুমোদন, টোয়াবের সদস্যদের বিশেষ বিবেচনায় ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠনোর নিশ্চয়তা, ট্যুর অপারেটরদের সম্মানজনক হারে প্রণোদনা দেওয়া এবং কারনেট’র মাধ্যমে ক্রস বর্ডার ট্যুরিজম সেবা দেওয়া।
এসময় প্রধান অতিথীর বক্তব্যে রাশেদ খান মেনন বলেন, পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে পর্যটন মানসিকতার প্রয়োজন । এ জন্য সরকার রাজনৈতিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। দেশের পর্যটন বিকাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে। তিনি প্রায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ খাতকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী এ খাতকে জাতীয় প্রবৃদ্ধির একটি অংশ মনে করেন। এ খাতের বিকাশে সংকট ও অসুবিধা হলো সম্পদের অপর্যাপ্ততা। কারণ, অর্থ বরাদ্দের দিক দিয়ে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এ খাত অনেক পেছনে রয়েছে। তবে আগামী বাজেটে অর্থমন্ত্রী এ খাতের উন্নয়নের বিশেষ বক্তব্য দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো, নিরাপত্তা বাড়ানো জরুরী। পাশাপাশি এ খাতে অগ্রগতির জন্য ব্যক্তি মালিকানায় আরো বিনিয়োগ প্রয়োজন। কারন শুধু সরকারের পক্ষে এ খাতকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব না। এরইমধ্যে এ খাতে অনেক বিনিয়োগ হয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এ জন্য প্রাইভেট খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, সরকার পর্যটন খাতের জন্য ‘বিশেষ পর্যটন এলাকা’ গড়ে তোলার কাজ করছে। যেখানে ব্যক্তি শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করে এ খাতকে এগিয়ে নিতে পারে।
রাশেদ খান মেনন বলেন, পর্যটন বিকাশে নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকার দেশের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে পর্যটন এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। তবে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য এ দেশের জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
আলোচনা সভায় সিপিডি অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন খাত অনেক অবহেলিত। এ সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়ে যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় তার বড় অংশ বিমান খাতে ব্যয় হয়ে যায়। ফলে পর্যটন খাতের প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় না। তাই দু’টি পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করা প্রয়োজন।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় আরো উপস্থিত ছিলেন- বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সদস্য (অপারেশন এন্ড প্লানিং) এয়ার কমোডর শফিকুল আলম, বেবিচকের সদস্য (অর্থ) মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক অঞ্জলি রানী চক্রবর্তী, বাংলাদেশ পর্যটন কপোর্রেশনের পরিচালক রাকিব হোসেন, টোয়াবের সভাপতি তৌফিক উদ্দিন, টোয়াবের সাবেক সহ-সভাপতি গোলাম কাদের, এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ (আটাব) সভাপতি এসএন মঞ্জুর মোর্শেদ (মাহবুব), আটাব মহাসচিব জিননুর আহমেদ চৌধুরী দিপু, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জেনারেল ম্যানেজার আব্দুলাহ আল হাসান, বাংলাদেশ বিমনের সাবেক বোর্ড মেম্বার ও মনিটর সম্পাদক ওয়াহিদুল আলম প্রমুখ।