সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ রিপন (৩০) নামে এক ব্লগারকে কুপিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছে আনছারুল্লাহ বাংলাটিম।
মঙ্গলবার সকালের ওই ঘটনায় দুপুরে একাধিক টুইট বার্তায় আনছার বাংলা-৮ নামের এক আইডি থেকে এই হামলার দায় স্বীকার করা হয়।
এতে উল্লাস প্রকাশ করে তাদের অপারেশন সফল হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তাদের এই বার্তা সিলেট ও বাংলাদেশ হ্যাশট্যাগেও প্রকাশ করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে কর্মস্থল পূবালী ব্যাংকে যাওয়ার উদ্দেশে নগরীর বনকলাপাড়া এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে রিকশায় সুবিদবাজার এলাকায় পৌঁছলে বিজয় দাশের ওপর হামলা করে চারজন দুর্বৃত্ত।
তারা তাকে কুপিয়ে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিজয় দাশকে মৃত ঘোষণা করেন।
সিলেট বিমানবন্দর থানার ওসি গওসুল হোসেন খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘অনন্ত বিজয় দাশ সকাল নয়টার দিকে বনকলাপাড়া এলাকায় নিজ বাসা থেকে বেরিয়ে রিকশায় করে শহরের দিকে আসার সময় হামলার মুখে পড়েন।’
তিনি বলেন, “চার অস্ত্রধারী তাকে কুপিয়ে আহত করে। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
বিজয় দাশ মুক্তমনা ব্লগে নিয়মিত লেখালেখি করতেন। ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চে সংগঠক। তিনি বিজ্ঞানবিষয়ক ছোট কাগজ ‘যুক্তি’র সম্পাদক ছিলেন। ২০০৬ সালে তিনি মুক্তমনা র্যানশনালিস্ট অ্যাওয়ার্ড পান।
এ বিষয়ে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও রংপুর মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, “নিহত ব্লগার অন্তত বিজয় দাশ নাস্তিক ছিলেন। তিনি মুক্তমনা ব্লগে লেখালেখি করতেন।”
বিজয় দাশের বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে রয়েছে- পার্থিব (সহ-লেখক সৈকত চৌধুরী), ডারউইন: একুশ শতকে প্রাসঙ্গিকতা এবং ভাবনা (সম্পাদিত), সোভিয়েত ইউনিয়নে বিজ্ঞান ও বিপ্লব: লিসেঙ্কো অধ্যায়, জীববিবর্তন সাধারণ পাঠ (মূল: ফ্রান্সিসকো জে. আয়াল, অনুবাদ: অনন্ত বিজয় দাশ ও সিদ্ধার্থ ধর)।
পরিবারের সদস্যরা জানান, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ কর্ম বিষয়ে মাস্টার্স করার পর সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজারে পূবালী ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে যোগ দেন।
দুর্বৃত্তদের হামলার আগে আজ সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে তিনি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সর্বশেষ স্ট্যাটাস দেন। এর আগের দিন অভিজিৎ ও ওয়াশিকুর হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিজের ফেসবুক পৃষ্ঠায় একটি পোস্ট দেন বিজয় দাশ।
আর মঙ্গলবার সকালে হামলার শিকার হওয়ার কিছুক্ষণ আগে তার সর্বশেষ পোস্ট আসে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে ক্ষমতাসীন দলের একজন এমপির প্রকাশ্যে চাবুক মারার ইচ্ছা প্রকাশ মন্তব্য নিয়ে।
এ নিয়ে চলতি বছর সন্ত্রাসী হামলায় তিনজন ব্লগার খুন হলেন। বাকি দুই ব্লগার হলেন- মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায় ও ওয়াশিকুর রহমান। তাদের হত্যার দায়ও স্বীকার করে টুইট করে আনছারুল্লাহ বাংলাটিম।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে লেখক অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকেও কুপিয়ে আহত করা হয়।
তাৎক্ষণিকভাবে এই হত্যার দায় স্বীকার করে টুইট করে আনছারুল্লাহ বাংলাটিম। পরে আল-কায়েদার দক্ষিণ এশীয় শাখা নাস্তিকতার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দায় স্বীকার করে। তবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আল-কায়েদার কোনো সম্পৃক্তা খুঁজে পায়নি বলে জানিয়েছে।
এরপর ৩০ মার্চ তেজগাঁওয়ে বাসা থেকে বের হয়ে অফিস যাওয়ার সময় বেগুনবাড়ী জিপিকা ঢাল এলাকায় ব্লগার ওয়াশিকুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় দুইজনকে আটক করে পুলিশ।