দ্বন্দ্ব নিরসনে সম্মত স্যামসাং-হুয়াওয়ে

দ্বন্দ্ব নিরসনে সম্মত স্যামসাং-হুয়াওয়ে।

এশিয়ার দুই শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্যামসাং ও হুয়াওয়ে। পেটেন্ট লঙ্ঘনের অভিযোগে উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একাধিক মামলা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রে চলমান এমনই একটি পেটেন্ট দ্বন্দ্ব নিরসনে সম্মত হয়েছে উভয় প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালতে জমা দেয়া নথিতে দুই বছরের পুরনো পেটেন্ট দ্বন্দ্ব নিরসনের বিষয়টি উঠে এসেছে। খবর রয়টার্স।
গত মঙ্গলবার স্যামসাং ও হুয়াওয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আপিল আদালতে এক যৌথ প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে। সেখানে বলা হয়, মেধাসম্পদ নিয়ে চলমান দ্বন্দ্ব নিষ্পত্তির জন্য উভয় প্রতিষ্ঠান একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এ নিয়ে পরস্পরের মধ্যে একটি নিষ্পত্তি চুক্তি হয়েছে। যে কারণে পেটেন্ট লঙ্ঘনের অভিযোগে চলমান মামলার কার্যক্রম স্থগিত করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
বিশ্বের বৃহৎ দুই অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন নির্মাতা হুয়াওয়ে ও স্যামসাং। ২০১৬ সাল থেকে এ দুই প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট লঙ্ঘনের অভিযোগে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে পরস্পরের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে আসছে। হুয়াওয়ের অভিযোগ, অনুমতি না নিয়ে তাদের সেলুলার কমিউনিকেশনস প্রযুক্তি নিজেদের ডিভাইসে ব্যবহার করেছে প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাং এবং অযৌক্তিকভাবে এ-সংক্রান্ত লাইসেন্সিং চুক্তিতে দেরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। স্যামসাংয়ের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে অন্যায্য লাইসেন্সিং ফি দাবির অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্রে পাল্টা মামলা করে স্যামসাং।
একই সময় হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের মেধাস্বত্ব আদালতে একটি মামলা করে স্যামসাং। ওই মামলায় অবৈধভাবে পেটেন্ট ব্যবহারের জন্য ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছিল। অভিযোগে বলা হয়, হুয়াওয়ে তাদের মেট৮ ও অনার ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনসহ আরো কয়েকটি স্মার্টফোনে স্যামসাংয়ের পেটেন্টকৃত প্রযুক্তি অবৈধভাবে ব্যবহার করে আসছে।
গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে জমা দেয়া যৌথ নথিতে মেধাসম্পদ নিয়ে চলমান দ্বন্দ্ব নিষ্পত্তির কারণ উল্লেখ করা হয়নি। পেটেন্ট দ্বন্দ্ব নিষ্পত্তি চুক্তি বাস্তবায়নে ৩০ দিন সময় লাগবে বলে জানানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আগামী সেপ্টেম্বরে এ মামলার কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল। পেটেন্ট মামলা নিষ্পত্তির বিষয়ে স্যামসাং ও হুয়াওয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয়নি।
বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পেটেন্ট নিয়ে দ্বন্দ্ব নতুন কিছু না। হরহামেশাই এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে পেটেন্ট দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যেতে দেখা যায়। মনোভাবেরই ও হুয়াওয়ের মধ্যে এতদিনের দ্বন্দ্ব হ্যান্ডসেট নির্মাতাদের মধ্যকার বৈরী ভাবেরই বহিঃপ্রকাশ। মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহার বাড়ায় একে আরো উন্নত করতে নতুন প্রযুক্তির সংযোজন বাড়াচ্ছে নির্মাতারা। এখানে মেধাস্বত্বের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হচ্ছে। মোবাইল হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের পাশাপাশি পেটেন্টও এসব প্রতিষ্ঠানের আয়ের অন্যতম মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। কিন্তু পেটেন্ট দ্বন্দ্ব সব পক্ষেরই আর্থিক ক্ষতির কারণ হচ্ছে। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের মধ্যেই পেটেন্ট দ্বন্দ্ব নিরসনে ঝুঁকছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।
বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে ডিভাইস বিক্রি বিবেচনায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে স্যামসাং। এরই মধ্যে বাজারটিতে অ্যাপলকে হটিয়ে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে জায়গা করে নিয়েছে হুয়াওয়ে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ স্যামসাংকে হটিয়ে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে শীর্ষ অবস্থানে উঠে আসার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে হুয়াওয়ে। এ পরিস্থিতিতে শীর্ষ দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর পেটেন্ট মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগকে ইতিবাচক মনে করা হচ্ছে।
২০১৭ সালে বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান পেটেন্ট দ্বন্দ্ব নিরসনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) একটি নীতিমালা ঘোষণা করেছে। পেটেন্ট লাইসেন্স নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান ইইউর কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হওয়ায় নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এসব কোম্পানির মধ্যে ছিল চিপ নির্মাতা কোয়ালকম, নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নির্মাতা এরিকসন ও নকিয়া এবং আইফোন নির্মাতা অ্যাপল।
বৈশ্বিক প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যকার পেটেন্ট দ্বন্দ্ব নিরসনে ইইউ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞ দল গঠন, মেধাস্বত্ব মূল্যায়ন, যৌক্তিক ও অবৈষম্যমূলক রয়্যালটি এবং কোন পেটেন্টটি গুরুত্বপূর্ণ তা মূল্যায়নের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প, যাতে বিভিন্ন ডিভাইস একসঙ্গে কাজ করতে পারে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.