মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া তাদের উপকূলে অবৈধ অভিবাসীবাহী নৌকা ভিড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর থাইল্যান্ডও একই অবস্থান নিয়েছে। এতে সাগরে শত শত মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, সাগরে ভাসমান প্রায় আট হাজার মানুষ কোথায় যাবে। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাসহ বিভিন্ন মানবাধিকার গ্রুপ ভাসমান লোকদের দ্রুত উদ্ধারে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর প্রতি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানালেও কোনো সাড়া মেলেনি। এ পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়া সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে।
শিগগির তারা এ নিয়ে বৈঠকে বসতে চায়। মালয়েশিয়া উদ্ধার হওয়া লোকদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর স্বদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। থাইল্যান্ডও এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করবে এ মাসের শেষের দিকে।
থাইল্যান্ডের শংখলা প্রদেশে জঙ্গলে কবর খুঁড়ে বুধবার আরও দেহাবশেষ উদ্ধার করেছেন অনুসন্ধানকারীরা। তবে কতজনের দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে তা জানা যায়নি। এর আগে গণকবর থেকে ৩২ জনের লাশ ও কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নাগরিকদের দেহাবশেষ। মালয়েশিয়ার পেনাং দ্বীপের কাছে সাগরে পাঁচ শতাধিক অভিবাসীবাহী একটি নৌকা দেখতে পেয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। তবে সেটিকে আটক করা হয়নি। এর আগে মালয়েশিয়া বলেছে, তারা অবৈধ অভিবাসীবাহী কোনো নৌযান উপকূলে ভিড়তে দেবে না। এএফপি, এপি, বিবিসি, দ্য স্টার অনলাইন। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
মহাসচিব দাতুক আলবি ইব্রাহিম বলেন, অবৈধ অভিবাসী নিয়ে সমস্যা সমাধানে তারা শিগগির বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে বৈঠক করতে চান। থাইল্যান্ডও এ আলোচনায় যুক্ত হতে পারে। আলবি ইব্রাহিম আরও বলেন, তাদের দেশের উপকূলে অবৈধ অভিবাসী উদ্ধার হয়েছে। এটি নজিরবিহীন ঘটনা। এতে প্রমাণ হয়, ব্যাপক হারে মানব পাচার চলছে। এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মালয়েশিয়ার মেরিটাইম এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির ফার্স্ট অ্যাডমিরাল তান কক কিউই বলেন, তারা সাগরে টহল জোরদার করেছেন। অবৈধ অভিবাসীবাহী নৌযান দেখা গেলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলে যেতে বাধ্য করা হবে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার কঠোর অবস্থান সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, অভিবাসীদের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিবেচনা করা প্রয়োজন। মানুষের জীবন বাঁচানোর বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রও বলেছে, সাগরে ভাসমান লোকদের উদ্ধারে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে মার্কিন দূতাবাসের এক মুখপাত্র বলেছেন, সাগরে অবস্থানরতদের শিগগির উদ্ধার করা না হলে শত শত লোকের মৃত্যু হতে পারে।
এদিকে তিন দেশে উদ্ধার হওয়া লোকদের করুণ অবস্থা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার গ্রুপগুলো।
মানব পাচার বন্ধে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার পুলিশ যৌথ পদক্ষেপ নেবে। বুধবার দুই দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। মানব পাচারে জড়িত সন্দেহে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় দুই পুলিশ সদস্যসহ ৩৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া থাইল্যান্ডে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে ৫০ পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হয়েছে।
দুই বাংলাদেশি যুবকের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা :৩৬ ঘণ্টা সাগরে ভেসে ছিলেন তারা। শেষ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের উপকূলে পেঁৗছেন। তাদরে ঠাঁই হয়েছে অন্য অনেকের সঙ্গে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে। তারা হলেন হাবিবুর রহমান ও সাইফুল ইসলাম। বাড়ি বাংলাদেশের পাবনায় বলে জানিয়েছেন তারা। হাবিবুর রহমান একটি বার্তা সংস্থাকে বলেন, কয়েকশ’ লোকের সঙ্গে এক নৌকায় ছিলেন দু’জন। বেশি ক্ষুধা পাওয়ায় তিনি খাবার খেতে চেয়েছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কয়েকজন তাকে ধরে সাগরে নিক্ষেপ করে। সাইফুল ইসলাম বলেন, তার প্রিয় বন্ধুকে সাগরে নিক্ষেপ করার পর তিনি পানিতে ঝাঁপ দেন।
তারা কোনো কূলকিনারা পাচ্ছিলেন না। পরনের লুঙ্গিকে বেলুনের মতো ফুলিয়ে পানিতে ভাসছিলেন। দ্বিতীয় দিন রাতে হঠাৎ আলো দেখতে পান। জানা গেছে, তারা যে নৌকাটিতে ছিলেন সেটিকে তীরে ভিড়তে না দিয়ে ইন্দোনেশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক জলসীমায় পাঠিয়ে দিয়েছে। তারা বলেন, চট্টগ্রাম উপকূল থেকে এপ্রিলের প্রথম দিকে নৌকায় চড়েছিলেন।
আরও খবর