প্লেনে যেভাবে পাইলট, কেবিন ক্রু ও যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়

প্লেনে যেভাবে পাইলট, কেবিন ক্রু ও যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিমানের যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে পুলিশের ইমিগ্রেশন ও সিভিল এভিয়েশন। যে কোন ফ্লাইটের টিকেট কেনা থেকে শুরু করে বিমানে ওঠা পর্যন্ত নতুনদের জন্য এক বাস্তব অভিজ্ঞতা। যা রেল, সড়ক বা নৌপথের যানে সম্ভব নয়। বিমানের যাত্রীদের আলাদা নজরদারিতে রাখা হয়। অভ্যন্তরীণ বিমানে যাত্রা করতে শুধু ভোটার আইডির ওপর নির্ভর করে টিকেট কেনা ও বিমানে ওঠার সুযোগ থাকে যাত্রীদের। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিমানে যাত্রা করতে হলে পাসপোর্ট ও গমনেচ্ছু দেশের ভিসা বাধ্যতামূলক। কারণ পাসপোর্টেই বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের পক্ষ থেকে ভিসা লাগিয়ে দেয়া হয়।

ভিসা লাগানোর আগে দূতাবাসে গিয়ে সুনির্দিষ্ট যাত্রীকে তার পরিচয়, নির্দিষ্ট দেশে গন্তব্যের কারণ উল্লেখপূর্বক ভোটার আইডি দিয়েই ভিসার আবেদন করতে হয়। এ ছাড়া ভিসা নিতে পারে না। ভিসা নিলেও টিকেট কেনার আগেই আবারও বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ট্রাভেল এজেন্সি থেকে বারবার পাসপোর্ট, ভিসা ও ভোটার আইডির তথ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ফলে যাত্রী নিয়ে সন্দেহ থাকে না ট্রাভেল এজেন্সি বা এয়ারলাইন্স কাউন্টারগুলোর।

এয়ারপোর্টে প্রবেশের দুটি পথ রয়েছে একটি অভ্যন্তরীণ ও অন্যটি আন্তর্জাতিক। দুটো পথেই এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের আগে সার্চওয়ে বা গেট দিয়ে প্রত্যেক যাত্রীকে প্রবেশ করতে হয়। এ সময় যাত্রীর সঙ্গে থাকা লাগেজ অবশ্যই স্ক্যানার মেশিনে প্রবেশ করানো হয়। যা বিমানের ইমিগ্রেশন পুলিশ সদস্য মনিটরে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিশ্চিত করেন। কোন ধরনের ধারালো অস্ত্র তা যদি সুইও হয়ে থাকে তা বের করে রেখে দেন স্ক্যানার মেশিনের গোড়ায় থাকা সিকিউরিটি কর্মকর্তা।

এরপর বোর্ডিং পাস নেয়ার সময় যাত্রীকে ঘোষণা দিতে হয় ‘ব্যাগে কোন ধারালো অস্ত্র বা তরল কোন পদার্থ’ নেই। সেক্ষেত্রে তা পারফিউম হলেও হ্যান্ড লাগেজে নেয়া যাবে না। যাত্রীরা মাত্র ১০ কেজি ওজনের নিচে থাকা হ্যান্ডব্যাগ বা লাগেজকে হাতে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। আর ১০ কেজির ওপরে ওজন থাকা লাগেজ অবশ্যই বিমানের কার্গোতে দিতে হয় বোর্ডিং পাস ইস্যুর মাধ্যমে। ২০ কেজির ওপরে হলে অতিরিক্ত ফি দিয়ে ট্যাগ লাগানো হয় টিকেট ও সিট নম্বর অনুযায়ী। যা বেল্টের মাধ্যমে বিমানের কার্গোতে পাঠানো হয়।

বোর্ডিং পাস নেয়ার পর ইমিগ্রেশন করতে হয় কাউন্টারে দাঁড়িয়ে। সেখানেও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ইমিগ্রেশন করে। পাসপোর্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই বাছাইয়ের পর যাত্রীর ছবি, নির্দিষ্ট দেশে গন্তব্যের কারণ ও কতদিনের অবস্থান তাও যাত্রীর কাছ থেকে জেনে নেন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা। ইমিগ্রেশন পার হওয়ার পর বিমানে ওঠার আগে এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সময় আবারও হাতে থাকা ব্যাগ স্ক্যান করা হয়। এ সময় কোন ক্রমে যদি কোন ধাতব ও তরল পদার্থ স্ক্যানারে ধরা পড়ে তাহলে ওই দ্রব্য জব্দ করে নেয় এয়ার এভিয়েশনের সিকিউরিটি কর্মকর্তা।
এরপর যাত্রীদের অপেক্ষাগারে ওই যাত্রীকে সন্দেহের নজরে রাখে সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তারা। বিমানে যাত্রী ওঠার আগেই বিমানের বোর্ডিং পাস ইস্যুকারী কর্মকতারা গেটে হাজির থাকেন। কারণ সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি বিমানে উঠছেন কিনা তা আরেক দফায় পাসপোর্টের ছবি ও টিকেটের সঙ্গে মিল রয়েছে কিনা তা দেখে নেন এয়ারপোর্টে কর্মরত এয়ারলাইন্সের লোকজনসহ সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তা।

বিমানে প্রবেশের সময় দরজায় বিমানবালা যাত্রীদের স্বাগতম জানিয়ে যাত্রীদের সিট নির্দেশনা দিয়ে আসন গ্রহণে সহযোগিতা করেন। এমনকি হ্যান্ড লাগেজগুলো প্রত্যেক সিটের উপর তথা যাত্রীর ঠিক মাথার উপরে থাকা লাগেজ বক্সে রাখতে সহায়তা করেন। বিমান উড্ডয়নের ঠিক আগ মুহূর্তে যাত্রীদের উদ্দেশে ক্যাবিন ক্রু বিমানের পাইলট, কো-পাইলট, ক্যাবিন ক্রু ও বিমানবালাদের নাম জানিয়ে দেন যাত্রীদের।

এছাড়াও বিমান উড্ডয়নের সময় যাত্রীদের মোবাইলসহ যে কোন ডিভাইস বন্ধ রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সতর্কতা ও সেফটি সম্পর্কে অবগত করেন। তবে বিমান উড্ডয়নের পর হ্যান্ড লাগেজ কেবিনেটগুলো অটোমেটিক লক করে দেয়া হয়। ফলে কোন যাত্রী বিমান অবতরণ না করা পর্যন্ত ওই লাগেজ থেকে কোন ধরনের জিনিসপত্র নেয়ার কোন সুযোগ নেই।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.