দালালরা পালালেন যাত্রীরা ফিরলেন ট্রলার চালিয়ে

imagesasdথাইল্যান্ডের জঙ্গলে গণকবর পাওয়ার পর থেকে প্রশাসনের কড়া নজরদারি থাকায় মালয়েশিয়াগামী জাহাজ কোথাও ভিড়তে পারছে না। দালালরা যে যেখান থেকে পারছে পালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল ১৬৪ জন যাত্রী নিয়ে মালয়েশিয়াগামী জাহাজ দক্ষিণ সেন্টমার্টিনে সাগরে ভাসমান অবস্থায় ফেলে দালাল ও নাবিকরা ছোট ছোট নৌকা করে পালিয়ে যায়। কোস্টগার্ডের একটি দল বিকেলে জাহাজের ১০৫ জন যাত্রীকে সেন্টমার্টিন থেকে উদ্ধার করে। পরে রাতে ওই জাহাজের আরও ১১ যাত্রীকে উদ্ধার করে বিজিবি। বিজিবির শাহপরীর দ্বীপ বিওপিতে কর্মরত নায়েক কলাপ্রু মার্মার নেতৃত্বে একটি নিয়মিত টহল দল গোলাপাড়া চর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে। এ নিয়ে গতকাল মোট ১১৬ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়।
যাত্রীদের মধ্যে রফিক, আবুল কাশেম, জাহাঙ্গীর আলমসহ আরও কয়েকজন জানান, দালাল ও মাঝি-মাল্লারা থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের নাগরিক। ফিরে আসা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। তারা কক্সবাজার, সিরাজগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, সুনামগঞ্জ, পাবনা, যশোর ও ময়মনসিংহ জেলার বাসিন্দা। ফিরে আসা যাত্রীদের ‘আইওএম’ নামক একটি এনজিও সংস্থার চিকিত্সক টিম চিকিত্সা দিয়েছে। ফিরে আসা সিরাজগঞ্জের রতনকান্দি উপজেলার একডালা এলাকার রিপন জানান, জাকির নামে এক বন্ধু টেকনাফ ভ্রমণের কথা বলে নিয়ে আসে। টেকনাফে পৌঁছলে ওই বন্ধু তাকে ১৫ হাজার টাকায় দালালদের কাছে বিক্রি করে দেয়। দালালরা তাকে জোরপূর্বক একটি সিএনজি অটোরিকশাতে তুলে নিয়ে মঙ্গলবার গভীর রাতে সাগরে অপেক্ষমাণ ট্রলারে নিয়ে যায়। তিনি আরও জানান, যেখানে ট্রলারটি অবস্থান করছিল সেখানে ১৪টি ট্রলার রয়েছে। রফিক, আবুল কাশেম, জাহাঙ্গীর আলমসহ আরও কয়েকজন যাত্রী বলেন, টেকনাফসহ সারাদেশে প্রশাসনের কড়া নজরদারি এবং অভিযানের খবর পেয়ে দালাল ও নাবিকরা ভয়ে অন্য নৌকা নিয়ে পালিয়ে যায়। আমাদের ট্রলারে মোট ১৬৪ জন যাত্রী ছিল। এর মধ্যে ৩০ জনকে একটি ছোট বোটে করে আলাদাভাবে উঠিয়ে দেয়।
মিয়ানমারের ১৮ নারী যাত্রী, দালাল ও নাবিকরা অপর একটি ট্রলারে উঠে আমাদের ট্রলারটি ভাসিয়ে দিয়ে চলে যায়। পরে আমরা নিজেরা ট্রলার চালিয়ে সেন্টমার্টিনের দিকে এলে কোস্টগার্ড আটক করে। নরসিংদীর মুরাদনগরের হোসেন মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর জানান, তিনিসহ আরও ২১ জন ৪৫ দিন ধরে ট্রলারে রয়েছেন। চট্টগ্রামের ইউসুফ নামক এক দালালের হাত ধরে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে টেকনাফের সাবরাং থেকে ট্রলারে উঠেছিলেন। তিনি জানান, সকালের খাদ্য হিসেবে চিড়া ও গুড় এবং রাতের বেলা ওষুধ মিশানো ভাত খেতে দিত যা খেলে বমি আসত। তাছাড়া লবণ পানি পান করতে হতো। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার নতুন বাজারের আবদুল হাফিজের ছেলে নুরুল হাকিম জানান, পানি চাওয়া হলে এবং বেশি নড়াচড়া করলে শারীরিক নির্যাতন করত ট্রলারে থাকা দালালরা।
মাদারীপুরের গাউজ বেপারীর ছেলে মাসুম বলেন, ৪৫ দিন সাগরে ভাসতে থাকি। টেকনাফের নবী হোছন ও বাবুল নামক দুইজন দালাল সার্বক্ষণিক ট্রলারে অবস্থান করে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন চালাত। বিশেষ করে টেকনাফে তিন মানবপাচারকারী বন্দুকযুদ্ধে নিহতের খবরে নির্যাতন বেশি করা হয়েছে। এদিকে আরও কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেউ স্বেচ্ছায় মালয়েশিয়ার উদ্দেশে এলেও অনেককে জোরপূর্বক ট্রলারে উঠিয়ে দিয়েছে।
ফিরে আসা যাত্রীদের মধ্যে কক্সবাজার সৈকতের চার ফটোগ্রাফার রয়েছেন। তারা টেকনাফে ভ্রমণে এলে স্থানীয় সাবরাং জিপ স্টেশন থেকে চার-পাঁচজন লোক একটি সিএনজি অটোরিকশায় নিয়ে এসে ট্রলারে উঠিয়ে দেয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি ক্যামেরা ও চারটি মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। তারা হচ্ছেন-কক্সবাজারের কলাতলী এলাকার আবুল কালামের ছেলে রফিক, আবদুল মজিদের ছেলে আবুল কাশেম, নূর মোহাম্মদের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ও মোহাম্মদ হোছনের ছেলে হাসেম।
আইওএম সংস্থার ডা. সৌমেন জানান, যাত্রীদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কেউ নেই। তবে খাদ্যের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে তারা। সেন্টমার্টিন কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লে. ডিকশন চৌধুরী জানান, আটককৃত মালয়েশিয়াগামীদের থানায় হস্তান্তর করে প্রকৃত দালালদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হবে।
এদিকে শাহপরীর দ্বীপের গোলাপাড়া চর থেকে যে ১১ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে তারা জানান, সাগরে আরও ভাসমান জাহাজ রয়েছে। প্রশাসনের কড়া নজরদারি থাকায় তারাও ভাসমান রয়েছে। উদ্ধারকৃতরা হচ্ছে-কক্সবাজারের মহেশখালী কালামারছড়া এলাকার সৈয়দ আহাম্মদের ছেলে মামুন মিয়া, একই জেলার চকরিয়ার মৃত আ. বাসুর ছেলে নুরুল হোসেন ওরফে ভুট্টো, চট্টগ্রাম বাশখালীর আ. শুকুরের ছেলে আমির রহমান, বাঁশখালীর আবদুল মোনাফের ছেলে হায়দার আলী, বাঁশখালীর জয়নাল উদ্দিনের ছেলে মহিনউদ্দিন, বাঁশখালীর হাবীবউল্লাহর ছেলে জসিমউদ্দিন, আইনুল কাজীর ছেলে মামুন, মাদারীপুর জেলার রতন মোল্লার ছেলে বাবুল মোল্লা, একই জেলার আব্দরি রউপের ছেলে রেজাউল করিম, সুনামগঞ্জের খলিলুর রহমানের ছেলে শামীম আহমদ।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.