এভিয়েশন নিউজ: বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সে আসছে শতাধিক প্রিয় মুখ। তারা সবাই এয়ার হোস্টেজ ও ফ্লাইট স্টুয়ার্ড। এক কথায় কেবিন ক্রু। বিমানের ফ্লাইট আলোকিত করে যারা যাত্রী সেবায় নিজদের সার্বক্ষনিক নিয়োজিত রাখেন তারা হলেন কেবিন ক্রু। আগামী ২৩ মে উত্তরার রাজউক মডেল স্কুলে অনুষ্ঠিত হবে কেবিন ক্রু নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা। বিমানের পরিচালক (প্রশাসন) রাজপতি সরকার বলেছেন, লিখিত পরীক্ষায় মোট ৬শ জনের মতো পরীক্ষার্থী অংশ নেবেন। এর আগে দুই দফায় মৌখিক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এরা লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেন, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ নম্বর পেয়ে নির্বাচিত হতে হবে।
এদিকে অনলাইনে লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হওয়ার সংবাদ শুনে সংশ্লিষ্টরা আনন্দের বন্যায় ভাসলেও হাজার হাজার পরীক্ষার্থী এখনো অনলাইনে বসে আছেন তাদের রেজাল্টের অপেক্ষায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে টেলিফোন করে তারা এখনো জানতে চাচ্ছেন রেজাল্টের খবর। কেউ কেউ টেলিফোনে জানিয়েছেন, এবারের ফ্লাইট স্টুয়ার্ড নিয়োগে কমপক্ষে ১ লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। সেক্ষেত্রে মৌখিক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কমপক্ষে ২ হাজার পরীক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ করানো হলে পরীক্ষাটি সবার কাছে গ্রহন যোগ্য হতো। তাদের মতে বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে ৫শ অফিসারের জন্য মৌখিক পরীক্ষায় ১ লাখেরও বেশি প্রার্থীকে নির্বাচিত করার রেকর্ড আছে। বিমান যদি তাদেরকে লিখিত পরীক্ষারও সুযোগ দিতো তাহলে তাদের মনে কোন দু:খ কিংবা কষ্ট থাকতো না।
তবে এ প্রসঙ্গে বিমানের পরিচালক প্রশাসন রাজপতি সরকার জানিয়েছেন, লিখিত পরীক্ষার জন্য যাদেরকে নির্বাচন করা হয়েছে তাদের বাইরে আর কেউ নেই। কাজেই আর অনলাইনে অপেক্ষা করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, বিমানের ফ্লাইট স্টুয়ার্ড চাকরী অন্যান্য সাধারণ চাকরীর মতো নয়। এখানে অনেক কিছু বিবেচনায় এনে প্রার্থী নির্বাচন করা হয়। এবছর একজন বিদেশী এভিয়েশন বিশেষজ্ঞের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সিলেকশন বোর্ড পুরো পরীক্ষার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বলেন, আগামীতে আবারো সুযোগ আসতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে বিমানের এই কেবিন ক্রু নিয়োগ বন্ধ ছিল। অবশেষে বিমানের ম্যানেজমেন্ট শতাধিক নতুন কেবিন ক্রু নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এর আগেও দুই দফায় প্রায় ১শ কেবিন ক্রু নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। প্রথম দিকে ২০১৩ সালের হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ৫০ জন পরবর্তীতে বিমানের নতুন উড়োজাহাজ আসার পর আরো ৫০ জন কেবিন ক্রু নিয়োগ দেয়া হয়। তবে তাদের অধিকাংশই ছিলেন পুর্বের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। জানাগেছে এবারই প্রথম যাদের নির্বাচিত করা হয়েছে তাদের সবাই এই পেশায় সম্পুুর্ণ নতুন। যাদের বেশির ভাগের বয়সই ২৫ বছরের নিচে। বিমানের বিদেশী পরিচালক কাস্টমার সার্ভিস জন জর্জের নেতৃত্বে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিমানের নিজস্ব ডাক্তার তাসলিমা আক্তারের নেতৃত্বে একটি টিম প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা নেন।
বিমান সুত্রে জানাগেছে বর্তমানে বিমানে সব মিলিয়ে ৫শ জন কেবিন ক্রু রয়েছেন । এদের মধ্যে এয়ার হোস্টেজ আছেন ৩শ বাকীরা স্টুয়ার্ড। কিন্তু ৫শ জনের মধ্যে গড়ে ৪শ‘র মতো কেবিন ক্রু ফ্লাইটে থাকছেন। বাকীরা নানা কারণে ছুটি নিয়ে ফ্লাইটের বাইরে থাকছেন। এ হিসাবে বর্তমানে বিমানে কেবিন ক্রু‘র ঘাটতি রয়েছে কমপক্ষে ২শ জন।
ইতোমধ্যে ২টি নতুন বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআরসহ মোট ৪টি নতুন উড়োজাহাজ বিমান বহরে যুক্ত হয়েছে। এছাড়া দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০, দুটি এয়ারবাসসহ মোট ১০ এয়ারক্রাফট আছে বিমানে। অভ্যন্তরিন রুটে পরিচালনার জন্য আরো দুটি টার্বো প্রপ উড়োজাহাজ ভাড়া নেয়া হবে শিগগিরই। আগামী বছর আসবে বিমানের আরো দুটি নিজস্ব উড়োজাহাজ। তখন কেবিন ক্রুর মোট ঘাটতি বেড়ে দাড়াবে কমপক্ষে ৬শ থেকে সাড়ে ৬শ।
বিমান ফ্লাইট সার্ভিস বিভাগ সুত্রে জানাগেছে বর্তমানে যে ৫শ জন কেবিন ক্রু রয়েছেন তাদের বেশির ভাগের বয়স ৩৫ বছরের বেশি। কারো কারো বয়স ৪০/৪৫ বছর পার হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক আইন ও এয়ারলাইন্স নীতিমালা অনুযায়ী সাধারণত ২৫ বছর পার হলেই সংশ্লিষ্ট কেবিন ক্রু আর ফ্লাইট করতে পারবেন না। তবে বিমান কতৃপক্ষ ফ্লাইট পার্সার ও জুনিয়র পার্সার হিসাবে কিছু কেবিন ক্রুকে পদোন্নতি দিলেও অধিকাংশ এখনো কেবিন ক্রু হিসাবে রয়ে গেছেন। এই অবস্থায় বড় ধরনের ক্রু ঘাটতিতে আছে বিমান।
বিগত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে বয়স শেষ হয়ে যাবার কারণে ৪০/৫০ জন কেভিন ক্রুকে বাধ্যতামুলক আবসরে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান বিগত আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কেবিন ক্রু সংকট দেখা দিলে তাদের প্রায় সবাই আবারো দৈনিক ভিত্তিতে বিমানে যোগদান করেন। এদের কেউ কেউ হাইকোর্টে রীট করে স্থায়ী নিয়োগ লাভ করেন। কিন্তু বয়স না থাকা এসব কেবিন ক্রু নিয়ে বিমান বড় ধরনের ইমেজ সংকটে পড়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে এমনিতে অধিকাংশ এয়ার হোস্টেজ ও স্টুয়ার্ডেও বয়স বেশি তার উপর তাদের অনেকে ফ্লাইট নিয়ে বিদেশে গিয়ে নানা অনৈতিক কর্মকান্ড, চোরাচালান, চুরি, টাকা পাচার ও অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। এই অবস্থায় অনেক কেবিন ক্রুকে বিদেশে ফ্লাইট দেয়া থেকে বিরতে রাখতে হচ্ছে। সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য হচ্ছে বিমানের ইউনিফর্ম পড়ে অনেক কেবিন ক্রু নানা অপরাধ করে চলছেন। এদেরকে নিয়েও বিমান বেশ অস্বস্থিতে আছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন নতুন কেবিন ক্রুগণ বিমানে যোগদান করলে সেই অস্বস্থি থেকে মুক্তি পাবে সংস্থাটি। পাশাপাশি আলোকিত হয়ে উঠবে ফ্লাইট। এতে দেশে বিদেশে বিমানের ভাবমুর্তিও বাড়বে।