ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে উদ্ধার বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে ইন্টারপোলের ঢাকা অফিস।
ভারতীয় পুলিশকে এ বিষয়ে একটি ‘রেড নোটিশ’ পাঠানো হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কলকাতার ইংরেজি দৈনিক টেলিগ্রাফ।
গত সোমবার মেঘালয়ের শিলংয়ে উদভ্রান্তের মত একটি লোককে ঘুরতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে ৫৪ বছর বয়সী ব্যক্তিকে আটক করলে তিনি নিজেকে সালাহ উদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয় দেন।
এ সময় তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সময়কার প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমানে দলটির যুগ্ম-মহাসচিব দাবি করেন। এরপর শিলং পুলিশ তাকে একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়।
গতকাল মঙ্গলবার শিলং সিভিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সালাহ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘দেশে তিনি অপহরণের শিকার হন। তবে কিভাবে শিলংয়ে এসেছেন তা তিনি জানেন না।’
বিএনপির এই নেতার পরিবার অবশ্য দাবি করে আসছে, গত ১০ মার্চ উত্তরার একটি বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে সালাহ উদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ ছিলেন।
শিলংয়ে সালাহ উদ্দিন আহমেদের পরিচয় সনাক্তের বৈধ কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। পর্যটন ভিসাও নেই। এজন্য মেঘালয় পুলিশ তাকে ফরেনার্স অ্যাক্টে গ্রেপ্তার করেছে।
মেঘালয় পুলিশের মহাপরিচালক রাজীব মেহতা টেলিগ্রাফ-কে বলেছেন, ‘সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ফৌজদারি মামলা থাকার কথা জানিয়ে ইন্টারপোলের ঢাকা ইউনিট থেকে ওই অনুরোধ পাঠানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা গতকাল (বুধবার) ভারতের সিবি আইয়ের মাধ্যমে ওই নোটিশ হাতে পেয়েছি। আমরা ইতোমধ্যে সিবি আইকে আমাদের উত্তর দিয়েছি।’
যদিও মেঘালয় সরকার বলছে, এখন পর্যন্ত তারা সরকারিভাবে সালাহ উদ্দিন আহমেদের পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি। তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে রাখা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
পূর্ব খাসি পাহাড়ের পুলিশের সুপারিনটেন্ডেন্ট এম খারক্যাং বলেছেন, ‘সরকারিভাবে তার পরিচয় নিশ্চিত করা হয়নি। তবে আমরা হাসপাতাল থেকে তার ছাড়পত্রের জন্য অপেক্ষা করছি। সেটি পেলেই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হবে।’
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আদালতে পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী ও সাবেক এমপি হাসিনা আহমেদ ভিসার জন্য ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসে আবেদন করেছেন। সেটি পেলে তিনি যত দ্রুত সম্ভব শিলং যাবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
শিলং পুলিশ জানিয়েছে, সালাহ উদ্দিন আহমেদ দাবি করেছেন তাকে দেশে অপহরণ করা হয়েছিল। তবে তিনি কিভাবে এবং কার মাধ্যমে ভারতের শিলংয়ে পৌঁছালেন, তা এক বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
শিলং সিভিল হাসপাতালের কার্ডোলজিস্ট ডা. ডি জে গোস্বামী সালাহ উদ্দিনের চিকিৎসার তত্ত্বাবধান করছেন। তিনি বলেছেন, ‘শারীরিক ও মানসিক দিকে দিয়ে সালাহ উদ্দিন আহমেদ স্থিতিশীল রয়েছেন। আরো কিছু পরীক্ষার ফল হাতে পেলে তার শারীরিক অবস্থা জানা যাবে।’
ডা. গোস্বামী বলেন, ‘আমি তার অনেকগুলো পরীক্ষা করতে দিয়েছি। বিশেষ করে যখন তিনি আমাকে তার কিডনি ও হৃদরোগের কথা বলছিলেন। সেই পরীক্ষাগুরোর ফলের জন্য অপেক্ষা করছি।’
সালাহ উদ্দিন আহমেদ শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ- এমন সন্তুষ্টির পরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছাড়পত্র দিবেন বলেও জানান তিনি।