ইলিয়াস কাঞ্চনের অস্ত্রে ফের প্রশ্নের মুখে শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা

ইলিয়াস কাঞ্চনের অস্ত্রে ফের প্রশ্নের মুখে শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা।

মাত্র কদিন আগেই ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চার ধাপের নিরাপত্তা তল্লাশি পার হয়ে খেলনা পিস্তল নিয়ে বাংলাদেশ বিমানের ময়ূরপঙ্খি উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছিলেন এক যুবক। ওই ঘটনায় নানা নাটকীয়তার পর কমান্ডো অভিযানে সেই যুবক নিহত হলেও প্রশ্ন ওঠে শাহজালালের নিরাপত্তা নিয়ে।

এ নিয়ে যখন আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে, ঠিক তখনই আবার ধরা পড়ল শাহজালালের নিরাপত্তার ফাঁকফোকর। গত মঙ্গলবার ল্যাপটপের ব্যাগের ভেতর পিস্তল ও গুলি নিয়ে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন পার হয়ে গিয়েছিলেন শাহজালাল বিমানবন্দরের প্রথম ধাপের নিরাপত্তা তল্লাশি। তল্লাশির পরবর্তী ধাপে পিস্তল ও গুলির বিষয়টি ধরা পড়লে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।

ঘটনা তদন্তে এরই মধ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ ছাড়া সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির এক নিরাপত্তারক্ষীকে। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি নভোএয়ারের একটি ফ্লাইটে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন।

এ সময় স্ক্যানিং মেশিনে তার সঙ্গে থাকা ব্যাগ পরীক্ষা করা হয়। কোনো বাধা ছাড়াই তিনি প্রথম ধাপের নিরাপত্তা তল্লাশি পেরিয়ে যান। কিন্তু পরে অ্যান্টিহাইজ্যাকিং পয়েন্টের তল্লাশিতে তার কাছে থাকা একটি ৯ এমএম পিস্তল ও ১০ রাউন্ড গুলি ধরা পড়ে। ঘটনার সময় বিমানবন্দরের প্রথম ধাপের নিরাপত্তা পয়েন্টের দায়িত্বে ছিলেন ফজলার রহমান নামে একজন নিরাপত্তাকর্মী। ফলে কর্তব্য পালনে অবহেলার অভিযোগে গতকাল বুধবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বেবিচক। ঘটনা সম্পর্কে গতকাল ইলিয়াস কাঞ্চন সাংবাদিকদের বলেন, তার পিস্তলবাহী ল্যাপটপের ব্যাগটি দ্বিতীয়বার স্ক্যানারে দেওয়াই হয়নি। প্রথম স্ক্যানার পার হওয়ার পর তার মনে পড়ে ব্যাগে পিস্তল আছে। তখন তিনি চিন্তা করেন স্ক্যানারে কেন ধরা পড়ল না।

তাৎক্ষণিকভাবে তিনি নভোএয়ার কাউন্টারে গিয়ে পিস্তলটির কথা জানালে তারা নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ফোন দেয়। ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, নিরাপত্তার কারণে তিনি বৈধ পিস্তলটি ব্যবহার করেন। দীর্ঘদিন সেটি থানায় জমা ছিল। সম্প্রতি আবার তুলে এনেছেন। এর পর ভুলক্রমে তিনি পিস্তলটি ল্যাপটপের ব্যাগে রাখেন। মঙ্গলবার ওই ব্যাগটি নিয়ে বিমানবন্দরে প্রবেশ করলেও তার মনে পড়েনি যে তাতে পিস্তল আছে। কিন্তু প্রথম স্ক্যানার পার হওয়ার পর তার মনে পড়ে অস্ত্রটির অস্তিত্ব সম্পর্কে। ইলিয়াস কাঞ্চন অভিযোগ করে বলেন, এটা তিনি না হয়ে অন্য কেউ হতে পারত। কোনো বড় ঘটনা ঘটতে পারত।

কোনো সন্ত্রাসীও হতে পারত। তখন পরিস্থিতি কী হতো। দেশের প্রধান বিমানবন্দরের নিরাপত্তার এই অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। যদিও বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাইম হাসান গতকাল দাবি করেছেন, নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন স্ক্যানিং না করেই দ্রুত তার ব্যাগ নিয়ে প্রথম ধাপের নিরাপত্তা পয়েন্ট পার হয়ে যান। পরে দ্বিতীয় ধাপে ব্যাগটি স্ক্যানিং দিলে তাতে পিস্তলের অস্তিত্ব দেখতে পান নিরাপত্তা সুপারভাইজার।

তখন সুপারভাইজার ব্যাগটি কার জানতে চাইলে ইলিয়াস কাঞ্চন সাড়া দেন। সুপারভাইজার তাকে বলেন, ব্যাগে অস্ত্র আছে। এ সময় ইলিয়াস কাঞ্চন তাকে জানান, পিস্তলটি লাইসেন্স করা। ভুলক্রমে এটি ব্যাগে নিয়ে তিনি চলে এসেছেন। এ জন্য তিনি দুঃখও প্রকাশ করেন। গণমাধ্যমে ইলিয়াস কাঞ্চনের উদ্ধৃতি দিয়ে তার যে বক্তব্য প্রকাশ হয়েছে, তা সঠিক নয় বলেও দাবি করেন নাইম হাসান। তার ভাষ্য, চিত্রতারকা বলে তাকে সহানুভূতি দেখান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.