শঙ্কা আর উদ্বেগের মধ্যে আছেন প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশিরা। জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (আইকাও) ১৯৯৮ সালে এক ঘোষণায় জানায়, ২০১৫ সালের মার্চের পরে প্রবাসে অবস্থানরতদের ক্ষেত্রে বা কেউ দেশের বাইরে যেতে চাইলে অবশ্যই তার মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) থাকতে হবে। এক্ষেত্রে হাতে লেখা পাসপোর্ট গ্রহণযোগ্য হবে না। পরে এ সময় বাড়িয়ে ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেধে দেওয়া হয়। এরই সূত্র ধরে ২০১০ সালের ১ এপ্রিল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশে এমআরপির কার্যক্রম চালু করে সরকার। এমআরপি কার্যক্রমে দেশের ভেতর অগ্রগতি থাকলেও বিদেশের মাটিতে অবস্থা খুবই নাজুক। যাদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি, তারা নির্ধারিত সময়ে এমআরপি পাবেন কি না, এ নিয়ে যারপরনাই উদ্বেগে আছেন। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের প্রায় ৮৫ লাখ মানুষ কর্মরত আছেন। এদের মধ্যে ইতোমধ্যে মাত্র প্রায় ২০ লাখ প্রবাসীকে এমআরপি প্রদান করা হয়েছে। অথচ হাতে সময় আছে আর মাত্র ৬ মাস।
প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের হাতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এমআরপি প্রদানে উদ্যোগ গ্রহণ করে ২০১৩ সালে। অভিযোগ রয়েছে, একের পর এক নতুন জটিলতা সৃষ্টি করে আইরিশ করপোরেশন সরকার ও প্রবাসী কর্মীদের বেকায়দায় ফেলে। এতে সরকার আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে আস্থা না থাকার কারণে মোবাইল ইউনিট পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, শুরুতে এমআরপি প্রকল্পের দুর্বল চুক্তি, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট অফিস এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তরের নমনীয়তা থাকার কারণে আইরিশ করপোরেশন সমূহ জটিলতা সৃষ্টি করার সুযোগ পেয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, এই প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের শুরুতে সফটওয়্যারের মধ্যে কিছু বিশেষ কোড রেখে পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে জিম্মি করে রেখেছে। শুধু তাদের এই স্বেচ্ছাচারিতার কারণে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান কাজ করতে পারে না। তিনি আরও বলেন, আর এসব কাজের মদদ দিয়েছেন সদ্য বিদায়ী ডিজি এবং পাসপোর্ট প্রকল্পের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেট। এতে করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই কাজ পেতে আগ্রহী থাকলে কোনো প্রতিষ্ঠানই কাজ পায়নি। সব জায়গায় কাজ দেওয়া হয় আইরিশ করপোরেশনকে। আর এখন সরকার বাধ্য হয়ে মোবাইল ইউনিটে মাধ্যামে এমআরপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে এত অপকর্মের পরও আইরিশের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। শুধু সতর্ক করে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, গত ৯ এপ্রিল বৈদেশিক এবং প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এডভাইসরি কমিটির সভায় আইরিসকে ১ মাস সময় বেঁধে দেবার পরও কোনো অগ্রগতি হয়নি। এরপর গত সপ্তাহে ৭ মে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে টাস্ক ফোর্স কমিটির একটি জরুরি সভায় আবার ৭ দিন সময় দিয়ে আইরিশকে তাদের চুক্তি অনুযায়ী কর্মকা- ত্বরান্বিত করতে নির্দেশ প্রদান করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এমআরপি দেওয়ার উদ্যোগটি ভালো ছিল কিন্তু এ প্রক্রিয়াটি এখন প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। আর হাতে বেশি সময় না থাকায় শেষ মুহূর্তে প্রায় ৬৫ লাখ প্রবাসীর হাতে এমআরপি পৌঁছে দিতে বিদেশে মোবাইল ইউনিট পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অফিসার পদে জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয় থেকে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এন এম জিয়াউল আলম বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রবাসীদের হাতে এমআরপি পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়ায় মোবাইল ইউনিট পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করছে। তিনি বলেন, মোবাইল ইউনিট প্রবাসীদের বিভিন্ন বাড়ি-অফিসে থেকে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে এমআরপি দেওয়ার কাজ করবে। একই সঙ্গে আউটসোসির্ং প্রতিষ্ঠানের সেন্টারের প্রবাসীদের এমআরপি দেওয়ার কার্যক্রম বাড়ানোর তাগাদা দেওয়া হয়েছে বলে।
তিনি আরো বলেন, প্রবাসের অবস্থানরত বাংলাদেশিদের প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত যাচাই বাছাইসহ ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় লোকবল চাওয়া হলে প্রেষণে ১৬ জন কর্মকর্তা দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রবাসীদের এমআরপি প্রদান করা সম্ভব হবে।
আরও খবর