দেখতে অনেকটা ব্যাংকের নগদ অর্থ তোলার এটিএম যন্ত্রের মতো। কাজেরও রয়েছে মিল। তবে এটি নগদ অর্থ নয়, পানি বিতরণ করে। সৌরশক্তিচালিত এই যন্ত্র ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করে প্রতিদিনের জন্য বরাদ্দ পানি তুলে নেওয়া যায়।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে বিশুদ্ধ পানির সংকট মোকাবিলায় এই ফিল্টারযুক্ত এটিএম (অটোমেটেড টেলার মেশিন) যন্ত্র চালু করা হয়েছে। পাঞ্জাব সাফ পানি কোম্পানি এবং লাহোরের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনোভ্যাশনস ফর পভার্টি অ্যালেভিয়েশন ল্যাবের (আইপিএএল) উদ্যোগে পানির ওই এটিএম স্থাপনের উদ্দেশ্য হলো প্রদেশের গ্রাম ও নগরাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা। আইপিএএলের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক জাওয়াদ আব্বাসি বলেন, পানির অপচয় রোধ করতে সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য যন্ত্রটি তৈরি করা হয়েছে। এটির মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট কোনো এলাকায় এক দিনে ঠিক কী পরিমাণ বিশুদ্ধ খাবার পানির প্রয়োজন, সেই তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবে। পাশাপাশি পানির গুণগত মানও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। কারণ, কেন্দ্রীয় একটি সার্ভারের মাধ্যমে এই যন্ত্রের পানির মান ও পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে অনলাইনে জানা যাবে।
স্ক্যান করা কার্ডের যথার্থতা প্রমাণ হওয়ার পর এটিএম যন্ত্রগুলো একটি অডিওবার্তা শোনায়। সেটির ভিত্তিতে গ্রাহকের কাছে পানি সরবরাহ করা হয়। সবুজ ও লাল বোতাম চেপে গ্রাহক পানি সংগ্রহ শুরু ও বন্ধ করতে পারেন। প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে একটি মিটার, যা জানাতে পারে কতটুকু পানি মজুত আছে। প্রথম পর্যায়ে পাঞ্জাবের তিন জেলা বাহাওয়ালপুর, রাজনপুর ও ফয়সালাবাদের বিভিন্ন এলাকায় যন্ত্রটি স্থাপন করা হবে। মারাত্মক পানিদূষণ সমস্যায় আক্রান্ত এলাকাগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
সুবিধাভোগী প্রতিটি পরিবার নির্দিষ্ট আইডি কার্ড বা স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করে এক দিনে সর্বোচ্চ ৩০ লিটার পানি সংগ্রহ করতে পারবে। আব্বাসি বলেন, প্রথম দফায় ২০টি ফিল্টার প্ল্যান্টের মাধ্যমে তাঁরা প্রায় ১৭ হাজার ৫০০ পরিবারকে বিশুদ্ধ পানি দিতে চান। এ কর্মসূচির জন্য যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ ২৩ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।
পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশ ভারতে ইতিমধ্যে এ রকম কার্ডভিত্তিক পানি বিতরণব্যবস্থা চালু রয়েছে। পাঞ্জাব সাফ পানি কোম্পানি জানায়, প্রদেশটির গ্রামাঞ্চলে মাত্র ১৩ শতাংশ মানুষ ট্যাপের পানির সুবিধা ভোগ করে। আর পাঞ্জাবের নগরাঞ্চলে এই সুবিধা পায় ৪৩ শতাংশ মানুষ। পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশটির মোট জনসংখ্যা ৯ কোটি ৮০ লাখ। প্রাদেশিক সরকার ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে অন্তত সাড়ে তিন কোটি মানুষের কাছে বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দিতে চায়।
পাঞ্জাব সাফ পানি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারাসাত ইকবাল বলেন, এটিএম যন্ত্রের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে বিনা মূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে। তবে সুবিধাভোগী পরিবারগুলো প্রতি মাসে চাঁদা তুলে যন্ত্রটির রক্ষণাবেক্ষণ খরচ দেবে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, পাকিস্তানের ৩৫ শতাংশ জনগণ নিরাপদ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ কারণে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের বিস্তার হয়। স্বাস্থ্য খাতে দেশটির সরকার প্রতিবছর প্রায় ১১০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করে।
পাঞ্জাবের একটি সমাজকল্যাণ সংস্থার পরিবেশ বিশেষজ্ঞ নাজির আহমেদ ওয়াতু বলেন, পাকিস্তানে পানি সংরক্ষণব্যবস্থা খুবই অপর্যাপ্ত। তাই কৃষি এবং দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ পানির অপচয় হয়। তাই এটিএম যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে সরকার কোনো স্থানে দৈনিক পানির প্রয়োজনীয় পরিমাণ সুনির্দিষ্টভাবে জানতে পারলে সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে পারবে। তবে পানি বিতরণকেন্দ্রগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ করাটাই হবে কঠিন কাজ।
আরও খবর