এভিয়েশন নিউজ: চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা চায়না এয়ারপোর্ট কনস্ট্রাকশন গ্রুপ করপোরেশন (সিএসিসি) টার্ন কি পদ্ধতিতে বাংলাদেশের বহুল আলোচিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঋণচুক্তির পর ৩ বছরের মধ্যেই নির্মাণকাজ শেষ করে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গত মাসে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরাসরি এই প্রস্তাব এসেছে। প্রস্তাবের অনুলিপি বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাশেদ খান মেনন গতকাল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর নির্মাণে চীন ওই প্রস্তাবটি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছে। এর অনুলিপি আমার কাছেও এসেছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’ তিনি বলেন, বিমানবন্দর নির্মাণে এই মুহূর্তে পাঁচ জায়গায় সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ চলছে। সমীক্ষার কাজ শেষ হওয়ার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের ওপর চাপ কমাতে ২০১০ সালের শেষ দিকে মুন্সীগঞ্জের আড়িয়াল বিলে ২৫ হাজার একর জমিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে মুন্সীগঞ্জের সাধারণ মানুষ। এ নিয়ে ২০১১ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস আন্দোলনে উত্তাল থাকে মুন্সীগঞ্জ। শেষ পর্যন্ত আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার। নতুন বিমানবন্দর নির্মাণে এরপর সরকারকে আর কোনো জোরালো ভূমিকায় দেখা যায়নি।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রস্তাবে সিএসিসির ভাইস প্রেসিডেন্ট লিউ ইয়ং বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, বাংলাদেশ সরকার ঢাকার বাইরে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ অত্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ হবে যোগাযোগের প্রধান স্থান। এসব দিক বিবেচনায় ঢাকার বাইরে আরেকটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
তা ছাড়া এই বিমানবন্দরটি নির্মিত হলে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের মর্যাদা বহুগুণে বাড়বে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন লিউ ইয়ং। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি আরো লেখেন, ‘আপনি যদি আমাদের এই প্রস্তাব বিবেচনা করেন, তাহলে খুব কম সময়ের মধ্যে আমরা বাংলাদেশ সফরে আসব। একই সঙ্গে কিভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে, সেই বিষয়ে ধারণা দিতে আপনার সামনে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করা হবে।’ বিমানবন্দর নির্মাণে উভয় দেশ একমত হলে দ্রুততম সময়ে সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে বলেও জানান তিনি।
প্রস্তাবনায় আরো বলা হয়েছে, সিএসিসি শতভাগ চীন সরকারের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের ১৬০টি দেশে বিমানবন্দর নির্মাণের অভিজ্ঞতা রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের। প্রতিষ্ঠার পর গত ৬০ বছর সংস্থাটি অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে সারা বিশ্বে কাজ করে আসছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণে সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানান লিউ ইয়ং। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ দ্রুত মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে আগামী ৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। ওই সফরে উভয় দেশের মধ্যে ১৩তম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিবের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা রয়েছে। জানা গেছে, ১৩তম জেইসি বৈঠকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কয়েকটি মেগা প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চীন সরকারকে অনুরোধ জানানো হবে। এর মধ্যে গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পে অর্থায়নে এগিয়ে আসতে চীন সরকারকে বলবে বাংলাদেশ।
এ ছাড়া রেলওয়ে, সেতু, শিল্প পার্ক নির্মাণ, টেলিকমিউনিকেশন, পোশাকশিল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে এগিয়ে আসতেও চীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হবে। জানা গেছে, চীনের বাজারে বাংলাদেশ বর্তমানে ‘জিরো-ট্যারিফ স্কিম’-এর আওতায় চার হাজার ৭৮৮টি পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত রপ্তানি সুবিধা ভোগ করছে। চীন এখন চাচ্ছে এই স্কিমটিকে আপটা প্রেফারেনশিয়াল ট্যারিফ ট্রিটমেন্টের সঙ্গে সমন্বয় করতে। ২০১২ সালে এই প্রস্তাবটি দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, টার্ন কি পদ্ধতি হলো, কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি পুরো অর্থের জোগান দেবে। পাশাপাশি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা, পরামর্শক, নকশা প্রণয়নও করবে তারা। একই সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং, সুপারভিশন ও নির্মাণকাজও করবে প্রতিষ্ঠানটি। সে ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর নির্মাণের এই পুরো কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করবে সিএসিসি।