ওমরাহ ভিসা বন্ধ কেন কেউ জানেন না

jjগত এক মাস ধরে সৌদি সরকার বাংলাদেশের কাউকে ওমরা ভিসা দিচ্ছে না। অনলাইনে বাংলাদেশের ভিসার জন্য সিস্টেমেই ঢুকতে পারছে না বাংলাদেশের ওমরাহ এজেন্সিগুলো। সৌদি আরবের যেসব এজেন্সির মাধ্যমে ওমরাহর কার্যক্রম সম্পন্ন হয় অনলাইন সিস্টেমে সেই এজেন্সিগুলোর তালিকাও পাওয়া যাচ্ছে না। সৌদি সরকার কেন বাংলাদেশের মুসল্লিদের ওমরাহ ভিসা প্রদান বন্ধ করে দিয়েছে তা কেউই বলতে পারছেন না। ওমরাহ ভিসা প্রদান আবার শুরু হবে কিনা, যদি হয় তাহলে কবে থেকে হতে পারে এ বিষয়েও কারো কোনো ধারণা নেই। আসন্ন রমজানে এবার বাংলাদেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ ওমরাহ করতে যেতে পারবে কিনা সেটিও কেউ বলতে পারছেন না। এ নিয়ে ওমরাহ এজেন্সিগুলো একেবারেই অন্ধকারে। অন্য দিক প্রতি বছর যারা রমজানে ওমরাহ করতে যান তারা এবার ওমরাহ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে হতাশায় ভুগছেন।

ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত এক মাস ধরে ওমরাহ ভিসা বন্ধ আছে। অনলাইনের মাধ্যমে ওমরাহ ভিসার জন্য এজেন্সিগুলোকে ওমরাহ যাত্রীদের পাসপোর্টসহ তথ্য দিয়ে আবেদন করতে হয়। আবার অনলাইনেই ভিসা প্রদানের অনুমোদনপত্র হিসেবে ফিরতিপত্র আসে। যাকে মুফাহ বলা হয়। কয়েক হাজার ওমরাহর আবেদন অপেক্ষমাণ থাকা অবস্থায় মাস খানেক আগ থেকে হঠাৎ মুফাহ আসা বন্ধ হয়ে যায়। একই সাথে অনলাইন সিস্টেমও লক হয়ে গেছে। এখন ওমরাহর অনলাইন সিস্টেমে গিয়ে কিছু লিখতেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা ডিলিট হয়ে যাচ্ছে।

ওমরাহ ব্যবস্থাপনাকারী প্রতিষ্ঠান স্টার হলিডেজের স্বত্বাধিকারী মাওলানা অলিউর রহমান জানিয়েছেন, সৌদি আরবের ১৫ থেকে ১৬টি মোয়াল্লেম বাংলাদেশীদের ওমরাহর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। আগে অনলাইনে তাদের তালিকা পাওয়া যেত। এখন তাদের নামের তালিকাও অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তিনি জানান, মোয়াল্লেমরা জানিয়েছেন, ওমরা ভিসা প্রদান আবার শুরু হবে। তবে কখন থেকে শুরু হবে তা তারা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। তিনি বলেন, ওমরাহ করতে গিয়ে থেকে যাওয়ার কারণে যদি সৌদি সরকার ওমরাহ ভিসা বন্ধ করে থাকে তাহলে সে ব্যাপারেওতো বাংলাদেশকে বা সংশ্লিষ্ট ওমরাহ এজেন্টকে কিছুই জানাচ্ছে না। কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে এমন খবরও আমাদের জানা নেই।

হাবের সাবেক ইসি সদস্য মদিনা এয়ার ট্রাভেলস লিমিটেডের মালিক মাওলানা ফজলুর রহমান বলেন, প্রতি বছর রমজানে ২০ থেকে ২৫ হাজার মুসল্লি বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ পালন করতে যান। কিন্তু এবার তারা যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আমাদের কাছে আগে অনেকে পাসপোর্ট দিয়েছিলেন। এখন আমরা তাদের পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে দিচ্ছি। যদি ভিসা প্রদান চালু হয় তাহলে আবার নেব। তিনি বলেন, ওমরাহর মুফার জন্য অনলাইনে প্রবেশ করে কিছু লিখতে গেলেই তা ডিলিট হয়ে যাচ্ছে। পুরো সিস্টেমই অচল হয়ে আছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাবের মহাসচিব শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশের মুসল্লিদের জন্য ওমরাহ ভিসা প্রদান বন্ধ আছে। কেন বন্ধ আছে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি। সৌদি দূতাবাসও কিছুই জানাতে পারছে না। আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছি তারাও কিছু জানে না বলে জানিয়েছে। রমজানের আগে ওমরাহ ভিসা চালু হবে কিনাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরাতো আশা করি চালু হবে। তবে এ ব্যাপারে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তিনি বলেন, আমরা আগে জানতাম, ওমরাহ ভিসা প্রদান করার পর ভিসার মেয়াদের মধ্যে শতকরা এক ভাগ লোক না ফিরে এলে তার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হতো। কিন্তু এখন সে রকমের কোনো কিছু ঘটেছে কিনা সেটাও আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়।

এ ব্যাপারে ধর্মসচিব চৌধুরী মো: বাবুল হাসানের কাছে চানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ওমরাহর বিষয়টি সরাসরি ওমরাহ এজেন্সি ও সৌদি দূতাবাসের সাথে সম্পর্কিত। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাথে এর কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি বলেন, ওমরাহ ভিসা কেন বন্ধ আমরা জানি না। সৌদি সরকারের কাছে জানতে চাইলেও তারা জানায় না।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মুসল্লি ওমরাহ পালন করে থাকে। এর মধ্যে রমজান মাসেই যায় ২০ থেকে ২৫ হাজার। এবার ভিসা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার মুসল্লি ওমরাহ করে এসেছেন। বাকি যারা রমজানে ওমরাহ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা ভিসা বন্ধ হওয়ায় অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। অনেকে পত্রিকা অফিসে ফোন করে এ ব্যাপারে জানতে চাইছেন।

সংশ্লিষ্ট অনেকের ধারণা ওমরাহ ভিসায় গিয়ে ফেরৎ না আসার কারণে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ কয়েকটি দেশের জন্য ওমরাহ ভিসা বন্ধ করে রেখেছে সরকার। তবে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে কোনো দেশকেই এখনো কিছুই জানানো হয়নি।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.