ঢাকা: চলাচলের অনুমতিসহ মাঠ পর্যায়ে নৌ-যান পরিদর্শন ও দেখভালের জন্য সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের জনবল কাঠামো ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত করেছে সরকার। প্রস্তাবিত কাঠামোতে জনবল বাড়ছে দ্বিগুণ, বাড়ছে উইংয়ের সংখ্যাও।
এতে সংস্থাটির সেবার পরিধি বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছে অধিদপ্তর এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়।
আর নৌ-যান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু লোকবল বাড়ালেই হবে না, ঠিকমত তদারকি করতে হবে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর বলছে, জনবল বৃদ্ধি পেলে মনিটরিং ও জবাবদিহিতা বাড়বে। এতে দুর্ঘটনা এড়ানোর পাশাপাশি স্বাচ্ছন্দে চলাচল করবে নৌ-যান।
সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) কমোডর জাকিউর রহমান ভূঁইয়া বলেন, অভ্যন্তরীণ নৌ-যানের জন্য অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করে আগের ২৬৮ জন থেকে জনবল হবে ৪৬৬ জন। অর্থাৎ লোকবল বাড়ছে ১৯৮ জন। পাশাপাশি উইং ও সেকশন বাড়ছে চারটি। সমুদ্রে চলাচলকারী নৌযানের জন্য পরবর্তীতে লোকবল বাড়ানো হবে।
নতুন উইং ও সেকশনগুলো হলো: এক্সামিনেশন উইং, নির্মাণ ও সুপারভিশন উইং এবং ডিজাইন সেকশন, আইটি ও প্রোগ্রাম সেকশন।
এক্সামিনেশন উইংয়ে একজন সিনিয়র কন্ট্রোলার অব মেরিটাইম এডুকেশনের নেতৃত্বে সাতজন অফিসার থাকবেন। এছাড়া নির্মাণ ও সুপারভিশন উইং করা হচ্ছে, এতে এই উইংয়ের লোকবল মাঠে গিয়ে সরাসরি কাজ করতে পারবে।
ডিজাইন সেকশনে একজন চিফ নেভাল আর্কিটেকসহ তিন জন অফিসার এবং আইটি ও প্রোগ্রাম সেকশনে দু’জন লোকবল থাকবেন বলে জানান ডিজি শিপিং।
এছাড়া লিগ্যাল উইং একটি থেকে বেড়ে দু’টি এবং এর অধীনে মোবাইল কোর্টের সংখ্যা দু’টি থেকে বাড়িয়ে করা হবে চারটি।
মাঠ পর্যায়ে তদারকির জন্য চারটি ফিল্ড অফিসের পরিবর্তে নতুন কাঠামোতে করা হবে ১৩টি। সুনামগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, ভৈরব, কক্সবাজারে নতুন ফিল্ড অফিসগুলো স্থাপিত হবে।
বিভিন্ন সময়ে নৌ দুর্ঘটনার পর দেখা গেছে, নৌ-যানের কাঠামোগত দুর্বলতা, অননুমোদিত চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে আসছে। কিন্তু পরিদর্শক ও জরিপকারকের (সার্ভেয়ার) অপ্রতুলতার কারণে সরেজমিনে পরিদর্শন ও জরিপ সম্ভব হয় না। এতে দুর্বল কাঠামোর নৌ-যান দুর্ঘটনায় ঝরে যাচ্ছে অগণিত প্রাণ।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে নিবন্ধনকৃত ৮ হাজার ও অনিবন্ধিত প্রায় ১৫/২০ হাজার নৌ-যানের পরিদর্শন ও জরিপের জন্য মাত্র ৯ জন পরিদর্শক ও ৪ জন জরিপকারক রয়েছেন।
একজন জরিপকারক দৈনিক পাঁচটি প্রচলিত ও আরও পাঁচটি অপ্রচলিত নৌ-যান সার্ভে করে থাকেন। প্রতিটি নৌ-যান সার্ভে করতে সময় ব্যয় হয় মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নৌ-যান ও যন্ত্র কৌশল বিভাগের
অধ্যাপক মীর তারেক আলী বলেন, এত অল্প সময়ে একটি নৌযান সার্ভে করা সম্ভব নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সার্ভের সব পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা হয় না।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, সার্ভে করার পর জরিপকারকদের সুপারিশের প্রেক্ষিতে নৌ-যানের স্থায়ী নিবন্ধন দেওয়ার আগে অস্থায়ী নিবন্ধন দেওয়া হয়। অথচ অস্থায়ী নিবন্ধনের নেই আইনগত কোনো ভিত্তি। এছাড়া সার্ভে সনদ ইস্যু না হওয়া পর্যন্ত কোনো নৌ-যানকে অনধিক ৪৫ দিনের সাময়িক চলাচলের অনুমতি দেওয়ার বিধান থাকলেও একাধিকবার টোকেন ইস্যুর মাধ্যমে অধিক সময় দেওয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে, সাময়িক চলাচলের অনুমতি দেয়ার প্রচলন সার্ভে অফিসের কর্মকর্তারাই গড়ে তুলেছেন।
অভ্যন্তরীণ ইস্পাত নির্মিত জাহাজগুলোর নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, সার্ভে করার সময় প্রধান ও সহায়ক ইঞ্জিন চালু রয়েছে কি না, পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়ে দেখার নিয়ম রয়েছে।
প্রতি বছর সার্ভের সময় জি এ প্ল্যান অনুযায়ী নৌ-যানটি সঠিক আছে কি না, যাত্রী সংখ্যা অনুপাতে আসন বিন্যাস সঠিক আছে কি না, জরুরি বহির্গমন পথ আছে কি না, ইঞ্জিন ও রিভার্সিং গিয়ার চালিয়ে যথাযথ আছে কি না, কোনো কেবিন বর্ধিত করা হয়েছে কি না, আপার ডেকের কেবিন পরিমাপ অনুযায়ী সঠিক আছে কি না, হ্যাচ কভারগুলো সঠিকভাবে ওয়াটার টাইট করা হয়েছে কি না, নেভিগেশনাল লাইট সঠিক পরিমাপে ও সঠিক পজিশনে বসানো আছে কি না, স্যালভেজ বয়া রশিসহ সঠিক অবস্থানে রাখা আছে কি না, বিধি অনুযায়ী যোগ্যতা সনদধারী মাস্টার-ড্রাইভার আছে কি না- ইত্যাদি যাচাই করতে হয়।
অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, জরিপকারক ৪ জন থেকে বাড়িয়ে ২৪ জন করা হচ্ছে। আর পরিদর্শক ৯ জন থেকে বেড়ে হচ্ছে ৮৮ জন। পাশাপাশি মোটরসাইকেল ও পাওয়ার বোটেরও ব্যবস্থা হচ্ছে।
অনিবন্ধিত নৌযান নিবন্ধনের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান ডিজি।
জরিপকারকসহ অন্যান্য জনবল বাড়ানোর প্রক্রিয়া সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে জানিয়ে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। জনবল বাড়লে সেবা আরও বাড়বে।