ওরা ৭ জন!

7 salah_80684ঢাকা : ফেলে দেয়ার দুই ঘণ্টা আগে ‘স্যার স্যার’ শব্দ শুনেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ। এ সময় একজনের মুখ থেকে ‘সাত জন’ এক সঙ্গে যাওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা এ বিষয়টিও শুনেছেন।

শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদে মেঘালয় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তাকে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। এদিন বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সিভিল হাসপাতালের আন্ডার ট্রায়াল প্রিজনার (ইউটিপি) রুমে গিয়ে গোয়েন্দা বিভাগের ইন্সপেক্টর জ্যোতিমালা সালাহউদ্দিনকে প্রায় আধাঘণ্টা জেরা করেন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে টানা দ্বিতীয় দিনেরমতো জানতে চান নানা বিষয়। এ সময় সালাহউদ্দিন বৃহস্পতিবারের মতো পুরনো ঘটনা উল্লেখ করে নতুন করে আরও কিছু তথ্য দেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যকে।

তবে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে শুক্রবারও সাক্ষাৎ করেন সালাহউদ্দিনের আত্মীয় আইয়ুব আলী ও বাবলু।

তারা জানান, ভাই আমাদের নিষেধ করে দিয়েছেন যেন টুঁ শব্দটিও না করি। তাহলে নাকি তার (সালাহউদ্দিন) ক্ষতি হতে পারে। আমরা ভাইকে বিষয়গুলো বাইরের কাউকে জানাবো না বলে নিশ্চয়তা দিয়েছি। তারা বলেন, হাসিনা ভাবী আমাদের পাঠিয়েছেন যেন ভাইকে ঠিকভাবে দেখা শোনা করি। তার খোঁজ-খবর নিই। এ দায়বদ্ধতার কারণে ছুটে এসেছি। কিন্তু একইসঙ্গে আমরা ভয় পাচ্ছি। আমাদের কপালে অন্য কোন খারাপ বিষয় আছে কিনা। সেটা দেশে ফেরার পর টের পাবো। দ্বিতীয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদে সালাহউদ্দিন কি বলেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় আমরা পাশে ছিলাম না।

দ্বিতীয় দিনের জিজ্ঞাসাবাদেও নানা তথ্য: চোখ বেঁধে শিলং নিয়ে আসার বিষয়ে দ্বিতীয় দিনও গোয়েন্দা সদস্যকে বলেছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। তাকে নিয়ে আসার সময় কয়েক দফা গাড়ি বদলের কথাও বলেছেন তিনি। যে জায়গায় তাকে ফেলে যাওয়া হয় ওই জায়গাটি তিনি নিজেই উদ্ধার করেছেন। ফেলে যাওয়ার এক ঘণ্টা পর তিনি জানতে পারেন এলাকাটি শিলং গলফ লিংক এলাকা। এরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় নিজেই পুলিশ স্টেশনে গিয়ে নিজের পরিচয় দেন বলে জানান। সালাহউদ্দিন জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, একটা জায়গায় গাড়ি বদলের সময় ‘স্যার স্যার’ শব্দ শোনা গেছে। এছাড়া সাত জনের বেশি দরকার নেই বলে কাউকে কাউকে বলতে শোনা গেছে। সালাহউদ্দিনের সঙ্গে ফেলে যাওয়া ব্যক্তিরা কেমন আচরণ করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে গোয়েন্দা সদস্যকে তিনি জানান, আমার চোখ বন্ধ ছিল। তাই আচরণ কিভাবে বুঝবো। তবে ফেলে যাওয়ার আগের ঘণ্টাগুলোতে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি তারা। সালাহউদ্দিনের আত্মীয়-স্বজনরা জানান, শিলংয়ে ফেলে যাওয়া ও পূর্বাপর কয়েক ঘণ্টা সম্পর্কেই জানতে চাইছেন গোয়েন্দারা। এর বাইরে গুম হওয়ার ৬২ দিন সম্পর্কে কিছুই জানতে চাইছেন না ভারতীয় গোয়েন্দারা।

ভীত সালাহউদ্দিন ও তার শুভানুধ্যায়ীরা: উত্তরার বাসা থেকে তুলে নেয়ার টানা দুই মাস পর সীমান্তের ওপারে ‘মুক্ত’ সালাহউদ্দিন আহমেদের মনোবল ফিরতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসা স্বজনরা। দীর্ঘদিন আটকে রাখা ও মেঘালয়ে ‘চোখ বাঁধা’ অবস্থায় ছেড়ে দেয়ার পর শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন বিএনপির এ যুগ্ম মহাসচিব। এ কারণে তাকে প্রথমে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করেছিল মেঘালয় পুলিশ। পুলিশের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে কয়েকজন আত্মীয় সাক্ষাৎ করেছেন। তারা জানিয়েছেন ধীরে ধীরে তিনি মনোবল ফিরে পাচ্ছেন। তুলে নেয়ার পর থেকে তিনি কোথায় কিভাবে ছিলেন এ বিষয়েও তিনি কথা বলেছেন। কিছুক্ষণ কথা বলার পর এক অজানা আতঙ্ক তাকে ভর করছে।

রাজনৈতিক সহকর্মীদের সালাহউদ্দিন জানিয়েছেন, কাউকে কোন কথা বলবি না। এমন কথার টের পাওয়া গেল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে। সিভিল হাসপাতালের প্রিজন সেলের দিকে ওষুধ ও খাবার নিয়ে আসেন আইয়ুব আলী, বাবলু ও আরেকজন (নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যক্তিটির অনুরোধে নাম গোপন রাখা হলো)। এ সময় মিডিয়াকর্মীরা তাদের বক্তব্য জানার চেষ্টা করলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিটি রেগে গিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ভাই আপনারা এইভাবে আমাদের ছবি তুলছেন কেন? আপনারা এভাবে ছবি তুলে বাংলাদেশে প্রকাশ করলে দেশে আমরা চলাফেরা করতে পারবো না। ভাইয়ের (সালাহউদ্দিন) মতো আমাদেরও গুম হয়ে যেতে হবে। ভাইকে দয়া করে ফেলে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের কেউ দয়া করে ফেলে যাবে না।

আইনজীবীকে নিয়ে সহ-দপ্তর সম্পাদক জনির মামলা মোকাবিলার প্রস্তুতি: মেঘালয় বারের আইনজীবী রাকেশ মজুমদারকে সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিএনপি’র সহ- দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি। ওই সাক্ষাতেই শিলং সদর পুলিশ স্টেশনে দায়ের করা মামলা নং- ১৪৩, তারিখ ১১ই মে ২০১৫ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এরপর প্রিজন সেল থেকে বাইরে বেরিয়ে মিডিয়া কর্মীদের দেখে অনেকটা জড়োসড়ো হয়ে যান জনি। আইয়ুব আলীকে সামনে এগিয়ে দিয়ে মিডিয়াকে এড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে যান। এরপর থেকে প্রায় একদিন লাপাত্তা হয়ে যান তিনি। সিভিল হসপিটালের কাছে পূর্বাশা হোটেলে প্রথমদিন উঠে ওই হোটেলটিও ছেড়ে দেন।

সোমবার সালাহউদ্দিনকে কোর্টে উঠানোর সম্ভাবনা বেশি: আজ ও কাল ভারতে সরকারি ছুটি। তাই অতি জরুরি না হলে মেঘালয়ে কোন নিম্ন আদালত বসবে না। রোববার ভিসা পেয়ে শিলংয়ে আসতে পারেন সালাহউদ্দিনের স্ত্রী সাবেক এমপি হাসিনা আহমেদ। তাই সব মিলিয়ে সোমবারের আগে সালাহউদ্দিনকে কোর্টে উঠানোর সম্ভাবনা কম।

মেঘালয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) এম. খাখরান এ বিষয়ে  বলেন, ডাক্তারদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি মিললেই আমরা তাকে (সালাহউদ্দিন) কোর্টে তুলবো। এর বাইরে কিছু করতে পারছি না। কবে নাগাদ সেটা হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাল (আজ) ও পরশু (কাল) সরকারি ছুটি। তাই রোববার বা সোমবারই তাকে কোর্টে উঠানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

সালাহউদ্দিনের সুস্থ বা অসুস্থতার সার্টিফিকেট দেবে ডাক্তার: সালাহউদ্দিন পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। চর্ম, কিডনি, হার্টসহ নানা অসুখ তাকে ভোগাচ্ছে। এ কারণে তাকে কোর্টে হাজির করা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার (সিটি) বিবেক সিয়াম জানান, সুস্থ বা অসুস্থতার সার্টিফিকেট দেবেন একমাত্র ডাক্তার। আমরা কিভাবে এর সার্টিফিকেট দেবো। ডাক্তারের সুস্থতার সার্টিফিকেট পেলে তাকে কোর্টে হাজির করা হবে। এর বাইরে আপাতত কিছু ভাবছি না।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.