সব উপকরণ-যন্ত্রাংশ আসেনি সফটওয়্যারও প্রশ্নবিদ্ধ

mCHবহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের এমআরপি ও এমআরভি প্রকল্পে বিভিন্ন উপকরণ এবং যন্ত্রাংশ সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে মালয়েশিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইআরআইএস জেভি। তবে চুক্তি অনুযায়ী সব কম্পিউটার, ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিনসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ সরবরাহ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া তাদের দেয়া সফটওয়্যারের মানও প্রশ্নবিদ্ধ। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান কেপিএমজি সিঙ্গাপুরের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রযুক্তিভিত্তিক এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এজন্য সবকিছু ঠিকমতো চলছে কিনা, তা যাচাইয়ের জন্য প্রকল্পের প্রথম ধাপে আন্তর্জাতিক নিরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়। বিদ্যমান চুক্তিতে নিরীক্ষার বিষয়টি না থাকলেও আইআরআইএস আপত্তি করেনি। এ কাজে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কেপিএমজি সিঙ্গাপুরকে দায়িত্ব দেয়া হয়। গত ২৭ এপ্রিল বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের কাছে কেপিএমজি সিঙ্গাপুর আনুষ্ঠানিকভাবে নিরীক্ষা প্রতিবেদন হস্তান্তর করে।

জানতে চাইলে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ও মেশিন রিডেবল ভিসা (এমআরভি) প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদ রেজওয়ান বলেন, ‘চুক্তির শর্ত অনুযায়ী কিছু পণ্য এখনো সরবরাহ করা হয়নি। সেসব পণ্য দ্রুত সরবরাহ করতে আইআরআইএস জেভিকে বলা হয়েছে। শিগগিরই সেগুলো পাওয়া যাবে। সফটওয়্যার সরবরাহের কোনো অর্থই এখনো দেয়া হয়নি। ফলে চুক্তি অনুসরণ না করলে অর্থ বাজেয়াপ্ত করার সুযোগ রয়েছে।’

নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এমআরপি ও এমআরভি প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে যে চুক্তি রয়েছে, তার শর্ত পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করছে না আইআরআইএস জেভি। কম্পিউটার, সার্ভার, নেটওয়ার্কিং যন্ত্রাংশ, ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিনসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়েছে। সব সফটওয়্যার সরবরাহ করা হলেও তার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এমনকি ডাটাবেজ নিয়েও রয়েছে জটিলতা। এছাড়া নিরীক্ষা প্রতিবেদনে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরো উন্নত করতে সুপারিশ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী প্রথম তিন বছরের মধ্যে কোনো যন্ত্র বা মেশিনে কোনো সমস্যা হলে তা বদল করে দেবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। আর পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা মেরামত করে দেয়া হবে। যদি মেরামত না হয়, তবে তা বদলে দেবে। এর সঙ্গে জনবল প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য বিষয়ও যুক্ত রয়েছে।

বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্র জানায়, এমআরপি ও এমআরভি প্রকল্প চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। সম্প্রতি এর মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। ফলে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেনাবাহিনী এ কাজের দায়িত্বে থাকছে। এ সময়ের মধ্যে আইআরআইএস জেভিকে পণ্য সরবরাহের জন্য বলা হয়েছে। প্রকল্পটি পরিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হলেই আইআরআইএস প্রতিশ্রুত অর্থ পাবে।
২০১০ সালের একনেক সভায় ২৮৩ কোটি টাকার এ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। প্রকল্পের আওতায় দেশের ভেতরে ও বিদেশে বাংলাদেশ মিশনের অনুমোদিত স্থানে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ও ভিসা ইস্যু করার জন্য মেশিনারিজ স্থাপন, জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, পাসপোর্ট বুকলেট কেনা, মেশিন রিডেবল স্টিকার ক্রয় এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা সৃষ্টি হয়। এমআরপি ও এমআরভি তৈরির জন্য ডাকা দরপত্রে ৩২টি প্রতিষ্ঠান শিডিউল কিনলেও আটটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। সর্বনিম্ন দরদাতা মালয়েশিয়ার আইআরআইএস করপোরেশনকে কাজ দেয়ার সুপারিশ করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন সংস্থা (আইসিএও) সনাতনী পাসপোর্ট ব্যবস্থা পরিবর্তন করে এমআরপি ও এমআরভি চালুর জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে। আর বিশ্বের সব দেশকে চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যে সনাতনী পাসপোর্ট ব্যবস্থা পরিবর্তন করে এমআরপি ও এমআরভি চালুর কথা বলা হয়েছে। এর পর সনাতনী পাসপোর্ট দিয়ে আর ভ্রমণ করা যাবে না।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.