এভিয়েশন নিউজ: বাংলাদেশে কোন সরকারি প্রতিষ্ঠান লোকসান করলে তাকে লিমিটেড কোম্পানিতে উন্নতি করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ বিমানের ক্ষেত্রে তা উল্টো হয়েছে। লিমিটেড কোম্পানি করার ৬ বছরের মধ্যে আগের ৩৬ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে এক হাজার ১৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা লোকসান করেছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রথম বৈঠকে উত্থাপন করা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য রয়েছে। বিমানকে লিমিটেড কোম্পানি করার উল্টো ফল গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিমানের পক্ষ থেকে ওই প্রতিবেদন উত্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, অব্যাহত লোকসান কাটিয়ে লাভজনক করতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিমানকে ২০০৭ সালের ২৩ জুলাই লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয়। কিন্তু এর ফল হয়েছে উল্টো। বিমান প্রতিষ্ঠার পর ৩৬ বছরে যেখানে লোকসানের পরিমাণ ছিল এক হাজার ১৮২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, সেখানে কোম্পানি করার পর ৬ বছরে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান হয়েছে এক হাজার ১৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এটি আগের ৩৬ বছরের লোকসানের প্রায় সমান। এই লোকসানের পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেড। লোকসান কাটিয়ে উঠতে নতুন পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে লোকসানের দ্বিতীয় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে পুরনো উড়োজাহাজ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়কে। আর অবচয় খরচকে বলা হয়েছে তৃতীয় কারণ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিমানবহরে নতুন উড়োজাহাজ সংযোজনের ফলে ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৯১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৮৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা অবচয় হয়েছে। নতুন উড়োজাহাজ সংগ্রহের জন্য ঋণ গ্রহণের ফলে সুদ বাবদ ব্যয় বৃদ্ধিকে চতুর্থ কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। আর পঞ্চম কারণ হচ্ছে সংকুচিত রুট নেটওয়ার্কের কারণে ফ্লাইটের লাভজনকতার ওপর ওভারহেড ব্যয়ের চাপ বৃদ্ধি।
প্রতিবেদনে লোকসান কাটিয়ে উঠতে গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বিমানবহরে নতুন প্রজন্মের ৭৭৭-৩০০ ইআর, ৭৭৭-২০০ ইআর এবং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ সংগ্রহের মাধ্যমে পুরনো এফ-২৮ ও ডিসি ১০-৩০ উড়োজাহাজ প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এতে জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কমানো সম্ভব হচ্ছে। বিক্রয়জনিত ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে ইন্টারনেট বুকিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে। তদুপরি ট্রাভেল এজেন্ট পোর্টাল (টিএপি) স্থাপনের প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বৈদেশিক স্টেশনগুলোতে জনবল ১৬৭ থেকে কমিয়ে ১৩০ জন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের মাধ্যমে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও কার্গো হ্যান্ডলিং সার্ভিসের মান উন্নয়ন ও উন্নততর সেবা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো কোম্পানির সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চার চুক্তির বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা প্রয়োজন। আর বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং নিরবচ্ছিন্ন যাত্রীসেবা প্রদানে বিমানকে ‘এসেনশিয়াল সার্ভিস’ ঘোষণা করা যেতে পারে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভিসাপ্রাপ্তিতে জটিলতার কারণে বিমানের বাণিজ্যিক ও অপারেশনাল কর্মকাণ্ড বিঘ্নিত হচ্ছে বলে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি ফারুক খান, প্রতিবেদনটি উত্থাপিত হলেও তা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আগামী বৈঠকে আলোচনা করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সুপারিশ ও পরামর্শ দেওয়া হবে। বিমান ধীরে ধীরে লাভজনক কোম্পানি হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। ওই প্রতিবেদনে লোকসানের প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্যকে। এতে বলা হয়, ২০১১-১২ অর্থবছরে বিমানের জ্বালানি খরচ ছিল মোট পরিচালন ব্যয়ের ৪৭ শতাংশ। এই জ্বালানি তেলের ৪৬ শতাংশ দেশের অভ্যন্তর থেকে সংগ্রহ করে বিমান। আর দেশে জ্বালানি তেলের দাম ৩১ শতাংশ বেশি। বিমানের পক্ষ থেকে দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।