এভিয়েশন নিউজ: হজ ও ওমরাহ নীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধ হজকাফেলা বা গ্রুপ লিডার নামের এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী দালাল হজযাত্রীদের কাছ থেকে টাকা ও পাসপোর্ট জমা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতে হাজার-হাজার হজযাত্রীর প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। এজেন্সির মালিকরাও এসব মধ্যস্বত্বভোগী দালালের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র জানায়, চলতি বছর এক লাখ ১ হাজার বাংলাদেশির হজপালনের বিষয়ে সৌদি আরব ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় (ব্যালটি) হজযাত্রীর সংখ্যা ১০ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় (নন-ব্যালটি) হজযাত্রীর সংখ্যা ৯১ হাজার। নন-ব্যালটি হজযাত্রী সৌদি আরবে পাঠানোর জন্য সরকার ৮৬৭টি হজ এজেন্সিকে অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে কিছু হজ এজেন্সি ও এজেন্সির প্রতিনিধি, হজকাফেলার লিডার ও গ্রুপ লিডার হজের টাকা জমা নিচ্ছে।
এ কারণে হজযাত্রীরা প্রতারণার শিকার হতে পারেন- এমন আশঙ্কায় ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ২১ মে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চলতি বছর সরকার হজের সর্বনিম্ন প্যাকেজ মূল্য নির্ধারণ করেছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৮ টাকা। কিন্তু হজ এজেন্সি, তাদের প্রতিনিধি, গ্রুপ ও কাফেলা লিডাররা হজ প্যাকেজের চেয়ে কমমূল্যে হজপালনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হজের টাকা সংগ্রহ করছে। প্যাকেজ মূল্যের চেয়ে কম টাকায় হজ করানোর প্রতিশ্রুতি হজ ও ওমরাহ নীতি-২০১৪-এর পরিপন্থী এবং দ-নীয় অপরাধ।
বিজ্ঞপ্তিতে কম টাকায় হজপালনে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হজ এজেন্সি, তাদের প্রতিনিধি, গ্রুপ ও কাফেলা লিডারদের প্রতারণার ফাঁদ থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়। এ বিষয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে জেলা, উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। হজ এজেন্সির মালিকরা বলছেন, হজকাফেলা ও গ্রুপ লিডার নামের এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী (দালাল) হজনীতির কোনও তোয়াক্কা না করে হজযাত্রীদের কাছ থেকে অবাধে টাকা ও পাসপোর্ট সংগ্রহ করছে।
এ কারণে হাজার-হাজার হজযাত্রীর প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজেন্সির মালিকরাও দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। অনেক এজেন্সির মালিকই যাত্রীপ্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা কমিশন দিয়ে কাফেলাপ্রধান ও গ্রুপ লিডারের কাছ থেকে হজযাত্রী সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এদের প্রতারণার কারণে সৌদি আরব ও বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে হজ এজেন্সিরগুলোর নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। দালালের কাছ থেকে হজযাত্রী সংগ্রহ করে এজেন্সির মালিকরাও অভিযুক্ত হন। গত বছর সৌদি সরকার ৪৬টিকে অভিযুক্ত করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারও ৮টি হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করাসহ ২০৮টি এজেন্সির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, অফিস নেই, স্টাফ নেই- এমন লোকদেরও হজ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের হজ এজেন্সির মালিকরা কাফেলা বা গ্রুপ লিডারদের কাছে কমিশনের বিনিময়ে ভাড়া দিচ্ছেন। এর বিনিময়ে এজেন্সি মালিক পাচ্ছেন জনপ্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা।
হাবের সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাহার বলেন, হজ কাফেলা বা গ্রুপ লিডার নামের মধ্যস্বত্বভোগীরা মক্কায় হারাম শরিফের কাছে হজযাত্রীদের রাখার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে কম টাকায় হজযাত্রী সংগ্রহ করেন। মধ্যস্বত্বভোগীদের কথায় সৌদি আরবে হজযাত্রী নিয়ে বিপাকে পড়েন হজ এজেন্সির মালিকরা। কম টাকায় ভালো সেবা দিতে না পারায় এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। ইব্রাহিম বাহার বলেন, আমরা কোনও মধ্যস্বত্বভোগীর তথ্য পেলে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করি।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (হজ) জাহাংগীর আলম বলেন, গ্রুপ লিডাররা গ্রামাঞ্চলে কম টাকায় হজে নেওয়ার কথা বলে হজযাত্রী সংগ্রহ করেন। প্রতিবছরই দালালের খপ্পরে পড়েন বহুসংখ্যক হজযাত্রী। প্রতারিত হজযাত্রীদের কেউ পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে হজে যান। আবার কেউ-কেউ হজপালনে ব্যর্থ হন। গত বছরও দালালের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে ১৬৭ জন যেতে পারেননি।
চলতি বছর যেন কোনও হজযাত্রী দালালের খপ্পরে না পড়েন, সে জন্য জেলা, উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনসহ সবার সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে। হজকাফেলা ও গ্রুপ লিডারের কার্যক্রম ঠেকাতে সরকার বিভিন্ন সতর্কতামূলক কাজ করছে। কোনও গ্রুপ লিডার, হজকাফেলা ও দালালের সন্ধান পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চলতি বছর চট্টগ্রামের একটি হজকাফেলা চিহ্নিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কাফেলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের কাছে নথিপত্র পাঠানো হয়েছে।
দুলাল হোসেন মৃধা