এভিয়েশন নিউজ: বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প সরকারের কাছে অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে ঘোষিত হলেও গত ৪ বছরে দেশের পর্যটন স্পটের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করতে পারেনি বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন (বিপিসি)। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে তালিকা চূড়ান্তের কাজ। ফলে থমকে আছে এসব পর্যটন স্পট সংরক্ষণের উদ্যোগও।
বিপিসির পরিকল্পনা বিভাগ সূত্র জানায়, পর্যটন স্পটের তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যে ২০১০ সালে দেশের সব জেলা প্রশাসককে চিঠি পাঠায় বিপিসি। পরে বিভিন্ন জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৮০০ পর্যটন স্পটের খসড়া তালিকা করা হয়। তবে তথ্যে অসঙ্গতি থাকায় ওই তালিকা চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে বিপিসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ২০১০ সালে শুরুর দিকে তালিকা তৈরির কাজ কিছুটা এগোলেও সেটা থেমে যায়। মূলত তত্কালীন চেয়ারম্যান বদলি হয়ে যাওয়ার পর পুরো কাজই গতি হারায়। তবে বর্তমানে নতুন করে আবার তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, যেহেতু এতে সরকারের বিভিন্ন অধিদফতর জড়িত, তাই এর বাস্তবায়নে সময় লাগবে।
এ প্রসঙ্গে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) পরিচালক ও প্যাসিফিক এশিয়া ট্র্যাভেল লিমিটেড (পিএটিএ) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব তৌফিক রহমান বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা পর্যটন স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের প্রকল্পটি সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসব স্থাপনা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি দেশের ঐতিহ্য পর্যটকদের কাছে তুলে ধরা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে বিভিন্ন জেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের থেকে তথ্য নিয়ে একটি খসড়া তালিকা করে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। এরপর এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতির তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা টেকনাফকে ঘিরে সরকারের নানা পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ‘প্রিপারেশন অব ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান অব কক্সবাজার টাউন অ্যান্ড সি বিচ আপ টু টেকনাফ’ প্রকল্পটিতে সম্প্রতি জোর দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এতে টেকনাফে পরিকল্পিত উপায়ে হোটেল-মোটেল জোন গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
পর্যটন স্পট সংরক্ষণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের (বিটিবি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আকতারুজ্জামান খান কবির জানান, দেশের পর্যটন স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের প্রত্যেকটি জেলার প্রত্যন্ত এলাকার পর্যটন স্থাপনাগুলোর তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত স্থাপনা তৈরি রোধে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় আলাদা ট্যুরিস্ট এক্সক্লুসিভ জোন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, উপকূলীয় এলাকায় এ ধরনের কিছু প্রকল্প সরকার হাতে নিয়েছে। আর পর্যটন স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের প্রকল্পের সঙ্গে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় জড়িত রয়েছে। বিটিবি সরাসরি এর সঙ্গে জড়িত নয়।
তবে বিপিসি বলছে, ২০১০ সালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা পর্যটন স্পটগুলো চিহ্নিত করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় বিপিসি। স্থানীয় সরকার, সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদফতর, পার্বত্য জেলাসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের সমন্বয়ে পর্যটন স্পটগুলোকে আধুনিক ও আকর্ষণীয়ভাবে সাজানোর উদ্দেশ্যে তালিকা তৈরিরও উদ্যোগ নেয়া হয়। ১০ বছরে তিন ধাপে এগুলো বাস্তবায়ন করার কথা। এর মধ্যে যেসব স্পট ছোট, সেগুলোয় পর্যটকদের জন্য ন্যূনতম টয়লেট ও বেঞ্চ তৈরি করা। পাশাপাশি মূল শহরের সঙ্গে প্রত্যন্ত পর্যটন স্পটগুলোকে সংযুক্ত করতে রাস্তা তৈরি করা। তবে সরকারের বিভিন্ন দফতরের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় গত চার বছরে তালিকা চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি।