ঢাকা: সারচার্জের পরিবর্তে জমি, বাড়ি ও ফ্ল্যাটে প্রোপার্টি ট্যাক্স (সম্পদ-কর) আরোপ করছে সরকার। আগামী অর্থবছরে (২০১৫-১৬) এই কর আরোপ করা হতে পারে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নির্দেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে বলে এনবিআর’র একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
এই কর আরোপ হলে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার বাড়তি কর আদায় হবে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সম্পদ-বৈষম্য দূর করতে এবং করদাতাদের নিজের প্রয়োজনের বাইরে বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি কিনতে নিরুৎসাহিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি কর্মকর্তাদের।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্র জানায়, সারচার্জ বা সম্পদ-কর হচ্ছে এক ধরনের মাসুল। ব্যক্তির সম্পদের ভিত্তিমূল্যের ওপর এ মাসুল আদায় করা হয়।
পাকিস্তান শাসনামলে ১৯৬৩ সালে সম্পদ-কর (ওয়েলথ ট্যাক্স) চালু করা হয়। স্বাধীনতার পরও তা অব্যাহত রাখা হয়।
আইনপ্রণেতা ও সম্পদশালীদের চাপে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। পরে ২০১১-১২ অর্থবছরে সম্পদের ওপর সারচার্জ (জরিমানা) চালু করা হয়।
চারটি স্তরে এ সারচার্জ আরোপ করা হয়। এসবের মধ্যে ২ কোটি টাকার বেশি কিন্তু ১০ কোটি টাকার কম সম্পদে নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ।
১০ কোটি টাকার বেশি তবে ২০ কোটি টাকার কম সম্পদে ১৫ শতাংশ, ২০ কোটি টাকার বেশি তবে ৩০ কোটি টাকার কম সম্পদে ২০ শতাংশ।
৩০ কোটি টাকার বেশি সম্পদে ২৫ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করা হয়। তবে সীমাবদ্ধতার কারণে কাঙ্ক্ষিত হারে কর আদায় করতে পারেনি এনবিআর।
এনবিআর’র হিসেবে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আয়কর রিটার্নে জমি, ফ্ল্যাট ও প্লটে দু’ কোটি টাকার ওপরে মূল্য দেখিয়ে ১০ হাজার ১৫২ করদাতা সারচার্জ দিয়েছেন ২০৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
অর্থাৎ দেশে দু’ কোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে ১০ হাজার ১৫২ ব্যক্তির। যদিও এ সংখ্যা কয়েক শত গুণ বেশি। যদিও এনবিআর’র সীমাবদ্ধতার কারণে তা শনাক্ত করতে পারেনি।
২০১২-১৩ অর্থবছরে ৪ হাজার ৪৪৬ জনের কাছে থেকে ৬০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৫ হাজার ৬৬২ জনের কাছ থেকে ৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা সারচার্জ আদায় করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা নাইট ফ্রাংক’র দ্য ওয়েলথ রিপোর্ট-২০১৫ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২৫০ কোটি টাকার ওপরে নিট সম্পদ রয়েছে ৭৮ জনের।
২০০৪ সালে এ সংখ্যা ৩৮ জন হলেও ২০১৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮ জনে। যদিও এনবিআর’র কাছে এর কোনো প্রামাণ্য হিসেবে নেই এবং আদায় হয়নি সারচার্জ।
সূত্র জানায়, মধ্যপ্রাচ্য ছাড়া পৃথিবীর সব দেশে সম্পদ-কর দিতে হয়। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ১৯৫৭ সালে ভারতে এই কর প্রথম চালু করা হয়।
প্রতিবছর নিট সম্পদের ওপর এই কর না দিলে জেল জরিমানা করা হয়। চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে অধিক বিত্তশালীদের কাছ থেকে বেশি কর আদায়ের জন্য সারচার্জের ৪টি স্তর নির্ধারণ করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, দেশে কি পরিমাণ সম্পদ রয়েছে এবং এ থেকে কি পরিমাণ প্রোপার্টি ট্যাক্স আদায় হবে তার একটি জরিপ করছে এনবিআর।
সম্প্রতি এনবিআর আয়কর বিভাগ সারাদেশে বাড়িঘরের (ফ্ল্যাট) ওপর জরিপ চালিয়ে দেখেছে, ৭৩ হাজার বাড়ি-মালিকের ই-টিআইএন নেই। ফলে তারা কর আওতার বাইরে রয়ে গেছেন।
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ মনে করে, সারচার্জ আদায়ের ক্ষেত্রে সম্পদের প্রকৃত মূল্য গোপন থাকে। ফলে এখানে কর ফাঁকির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আয়কর বিভাগের একজন প্রথম সচিব নিশ্চিত করেন, অর্থমন্ত্রীর নির্দেশের পর এনবিআর প্রোপার্টি ট্যাক্স নিয়ে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘আইনি দুর্বলতায় সম্পদে সারচার্জ আরোপের পরও কাঙ্ক্ষিত সফলতা পাওয়া যায়নি। তাই এবার প্রোপার্টি ট্যাক্স আরোপ ও আদায়ের জন্য কঠোর আইনও করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাত বলেন, ‘প্রোপার্টি ট্যাক্স আরোপে দেরি হয়ে গেছে, আরও আগে কার্যকর করা উচিত ছিল।’
পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘এই ট্যাক্স শুধু বসালেই হবে না, বরং কিভাবে তা আদায় করা হবে তাও স্পষ্ট এবং দৃশ্যমান করতে হবে।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, ‘সারচার্জ আদায় যদি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কার্যকর করা যেতো তাহলে আর সম্পদ-কর(প্রোপার্টি ট্যাক্স) বসানোর প্রয়োজন হতো না।’