মালয়েশিয়ায় ৫ লাখ বাংলাদেশি বড় ধরণের ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে!

Malaysia-Bangladeshএভিয়েশন নিউজ: মালয়েশিয়ায় কর্মরত ৫ লাখের বেশী বাংলাদেশি যথাসময়ে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট না পাওয়ার কারণে বড় ধরণের ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। আগামী ২৪ নভেম্বরের পর তাদের বর্তমান পাসপোর্ট অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে।

এমআরপি হাতে না পাওয়ায় মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনিশ্চয়-তায় আছেন। অথচ এ ব্যাপারে কার্যত কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর বলছে, এমআরপি তৈরিতে সফটওয়্যার সংক্রান্ত সহায়তা দেবার প্রতিষ্ঠান মালয়েশীয় আইরিশ করপোরেশনের গাফিলতির কারণে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

শুধু মালয়েশিয়ার প্রবাসীদের হাতে নয়, গত ৬ মাসে দেশের ৩৩টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে একটিও এমআরপি দেয়া সম্ভব হয়নি। এর ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সব পাসপোর্টকে এমআরপিতে রূপান্তর নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এমআরপি প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন মালয়েশিয়া ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্যান্য দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে পাসপোর্ট অধিদপ্তর মনে করছে। ৪৫ লাখ প্রবাসীর অধিকাংশই বর্তমানে এসব দেশে পুরনো পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন।

জানা গেছে, চুক্তি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়ার জন্য ইতিমধ্যে আইরিশ করপোরেশনকে নির্দেশ দিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে অভিবাসন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। এছাড়াও অব্যাহত অসহযোগিতার কারণে ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্যও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি। এই মুহূর্তে প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক-শিক্ষার্থী এবং মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অন্য বাংলাদেশিরা এমআরপি’র জন্য অপেক্ষা করছেন।

পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে এমআরপি প্রস্তুতের দায়িত্ব পায় একটি যৌথ অংশীদার প্রতিষ্ঠান। আইরিশ করপোরেশন এ কাজটি না পাওয়ায় তারা নানাভাবে এমআরপি’র কাজে অসহযোগিতা করে আসছে। জানা গেছে, বর্তমানে আইরিশের সফটওয়্যার ও সিস্টেমের সঙ্গে যৌথ অংশীদার প্রতিষ্ঠানটির সফটওয়্যার ও সিস্টেম সমন্বয় করা দরকার হলেও, নানা অজুহাত দেখিয়ে সব কাজেই দেরি করছে আইরিশ। সমন্বয় কার্যক্রম এখনো অসম্পূর্ণ থাকায় আঞ্চলিক ওই পাসপোর্ট অফিসগুলো থেকে এমআরপি ইস্যু করা এখনও সম্ভব হচ্ছে না। এমআরপি না পাওয়া ওই ৩৩ জেলার জনসাধারণকে এখন অন্য জেলা কার্যালয়ের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে তাদের ভোগান্তি বাড়ছে।

পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, যৌথ কোম্পানিটি এমআরপি’র কাজ পাবার পর এরই মধ্যে মালয়েশিয়ার আটটি রাজ্যে আধুনিক তালিকাভুক্তকরণ কেন্দ স্থাপন করেছে। তালিকাভুক্তকরণ কেন্দ্রগুলোতে ২৪ ঘণ্টা হেল্পলাইন খোলা থাকলেও সেখান থেকে কোনো সেবা দেয়া যাচ্ছে না।

ঢাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় সিস্টেমটিও এখনো কাজ শুরু করেনি বলে মালয়েশিয়ার কেন্দ্রগুলোও পাসপোর্টের জন্য তালিকাভুক্তকরণের কাজ শুরু করতে পারেনি। পাসপোর্ট প্রিন্ট করার জন্য প্রবাসীদের তথ্য, তাদের ছবি ও আঙুলের ছাপ ইত্যাদি ওই কেন্দ্রগুলো থেকে ঢাকার আগারগাঁও কার্যালয়ে পাঠানো হবে। এই তালিকাভুক্তকরণের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল গত ২১ এপ্রিল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তা শুরু করা যায়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে প্রথমবার এমআরপি প্রকল্পের আওতায় পাসপোর্টের জন্য বাংলাদেশকে সফটওয়্যার সংক্রান্ত সহায়তা দিয়েছিল এই আইরিশ করপোরেশন। তখন প্রতিষ্ঠানটি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সিস্টেম স্থাপন করে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে। তখন আইরিশের সিস্টেম ব্যবহার করে সরকার আরো ৩০টি পাসপোর্ট অফিস থেকে এমআরপি ইস্যু করছিল।

কিন্তু ২০১২ সালে দেশের আরো ৩৩টি জেলায় পাসপোর্ট অফিস স্থাপনের মাধ্যমে এমআরপি সেবা সমপ্রসারণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এরপরেই শুরু হয় জটিলতা। এই ৩৩টি জেলা অফিসের ভাড়া এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ প্রতি মাসে সরকার ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করলেও বিনিময়ে কোনো সুফল মিলছে না। আইরিশ করপোরেশন প্রযুক্তি সহায়তা না দেয়ার ফলে ওই ৩৩টি কেন্দ হতে এমআরপি নিতে পারছে না কেউ।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.