সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ মসজিদসহ দেশের পর্যটন ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক বাগেরহাট। সেই সঙ্গে রয়েছে চিংড়ি ঘেরসহ নানা শিল্প উদ্যোগ। যা আরো সম্ভাবনাময় হয়ে উঠতে পারে বিমান যোগাযোগের মধ্য দিয়ে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরো বেগবান করতে সরকার বাগেরহাট জেলায় নির্মাণ করতে যাচ্ছে খানজাহান আলী বিমানবন্দর।
গত ৫ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বিমানবন্দর প্রকল্পটি অনুমোদনের পর গতকাল মঙ্গলবার তা পরিদর্শনে আসেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। মন্ত্রী বলেন, আগামী অর্থবছরের মধ্যে বাগেরহাট খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণকাজ পরিপূর্ণভাবে শুরু হবে। বিমানবন্দরের প্রকল্পটি যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন হয় এবং বিমান ওঠানামার উপযোগী হয় সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খানজাহান আলী বিমানবন্দর এলাকা পরিদর্শন শেষে এক সুধী সমাবেশে রাশেদ খান মেনন আরো বলেন, ৫৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। পাশাপাশি পর্যটকদের কথা বিবেচনায় নিয়ে এখানে একটি পাঁচতারা হোটেলও নির্মাণ করা হবে।
২০ বছর আগে খানজাহান আলী বিমানবন্দরের জন্য খুলনা-মংলা মহাসড়কের পাশে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ফয়লা এলাকায় খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, খুলনা-মংলা মহাসড়কের কাছে খানজাহান আলী বিমানবন্দর লেখা একটি সাইনবোর্ড শোভা পাচ্ছে। সাইনবোর্ডের পেছনে অনেক এলাকাজুড়ে জমিতে মাটি ভরাট করে উঁচু করে রাখা হয়েছে। প্রকল্প শুরুর পর থেকে কিছু জমি অধিগ্রহণ আর মাটি ভরাটের কাজ ছাড়া কোনো কাজ আগায়নি। গত ৫ মে একনেক সভায় সরকার খানজাহান আলী পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। একনেকে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণে ৫৪৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ২০১৮ সালে বিমানবন্দর চালু হওয়ার কথা।
খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ হলে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মংলা, ইপিজেড, রামপালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র ও সাদা সোনা খ্যাত চিংড়িশিল্প ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটবে এ অঞ্চলে। একই সঙ্গে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন, বাগেরহাট খানজাহান আলী মাজার, ষাটগমু্বজ মসজিদকে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠবে। ফয়লা এলাকার আবদুর রউফ ও রিপন আকুঞ্জী জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা বিমানবন্দরের অপেক্ষায় দিন গুনেছেন। ২০ বছরেও বিমানবন্দরের কাজ শেষ না হওয়ায় তাঁদের মধ্যে হতাশা ছিল। কিন্তু সরকার একনেক বৈঠকে বিমানবন্দরের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়ায় তাঁরা বিমানবন্দর নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। জেলা প্রশাসক বাগেরহাটে বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে আরো বলেন, মংলা, ইপিজেড, রামপাল বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, চিংড়িশিল্প ও সুন্দরবন রয়েছে বাগেরহাটে। এখানে বিমানবন্দর নির্মিত হলে শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটবে। বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি শাহাজান খান বলেন, বাগেরহাটে বিমানবন্দর নির্মিত হলে এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। দেশি-বিদেশি শিল্প উদ্যোক্তারা এখানে বিনিয়োগ করবে এবং তারা মিল-কলকারখানা গড়ে তুলবে।
এদিকে দ্রুততম সময়ে ট্রেনিং সেন্টার, মোটেলসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার খুলনায় পর্যটন কর্পোরেশনের কার্যালয় স্থাপনের আশ্বাস দিয়েছেন বেসাময়িক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি। তিনি বলেন, জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় জটিলতা থাকায় একাজটিতে বিলম্ব হয়েছে। নকশা তৈরি, টেন্ডার ও কার্যাদেশের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে এটি বাস্তবায়ন হবে।