এভিয়েশন নিউজ: বাংলাদেশ বিমান বহরে সদ্য আগত বোয়িংয়ের ৭৭৭-৩০০ইআর পালকি বিমানে চড়ে এবার জাপান সফরে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফিরতি পথে পালকিতে চড়েই তিনি দেশে ফিরবেন। আর এ সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন বাংলাদেশ বিমানের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দিন আহম্মেদসহ আরও অনেকে।
প্রধানমন্ত্রী জাপান সফরে গেলে বাংলাদেশকে চলতি বছর থেকে ৬শ’ বিলিয়ন ইয়েন সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি। বিভিন্ন প্রকল্পের যথাযথ ও সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য এ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। সোমবার টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্থানীয় সময় বিকালে শীর্ষ পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়।
আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর করার লক্ষ্যে সার্বিক অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ঐকমত্য হয়। সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, শীর্ষ বৈঠকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিআইজি-বি) ধারণার বিকাশে তার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই প্রতিশ্র“তির জন্য আমি জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে ও তার সরকারের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩৫তম ওডিএ ঋণ প্যাকেজ অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাপানের সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। শেখ হাসিনা বলেন, শিনজো আবের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় তারা অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ দ্বিপক্ষীয় প্রায় সব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, এ গঠনমূলক আলোচনায় আমি খুবই সন্তুষ্ট।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ইতিমধ্যে জাপানি প্রধানমন্ত্রী অ্যাবে ও মাদাম অ্যাবেকে শিগগিরই বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ, আমার সরকার এবং আমি ঢাকায় তাদের স্বাগত জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করব। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং ব্যাপক অবকাঠামোগত কর্মকাণ্ডে জাপানের সহায়তা কামনা করেছেন। জাপানকে বাংলাদেশের বিশ্বস্ত ও সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী দুদেশের মধ্যকার অংশীদারিত্ব সুসংহত করতে তার আন্তরিক ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেন।
সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্যে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে আয়োজিত তার বাসভবনে এক নৈশভোজে ভাষণকালে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা, আমাদের মানবসম্পদের উন্নয়ন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডে জাপান অধিকতর অবদান রাখতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টোকিওর ইম্পেরিয়াল প্রাসাদে জাপানের সম্রাট আকিহিতোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ইম্পেরিয়াল প্রাসাদে পৌঁছলে প্রাসাদের হাউসহোল্ড নোবুতাকি ওদানো তাকে গ্র্যান্ডমাস্টার অভ্যর্থনা প্রদান করেন। এ সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন। আকাসাকা প্রাসাদে জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি লীগের সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও বলেছেন, কেবল নিরবচ্ছিন্ন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াই কোনো দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে। জাপান পার্লামেন্টের হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ সদস্য তাকিও কাওয়ামুরা জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্ট লীগের সদস্যদের নেতৃত্ব দেন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে জাপানের জনগণের সমর্থনের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি প্রদানকারী কয়েকটি দেশের মধ্যে জাপান অন্যতম। তিনি বলেন, জাপানের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে এদেশ সফরে আসেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও জাপান আন্তর্জাতিক অঙ্গন বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অস্ত্র বিস্তার রোধ, বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতার মতো সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আকাসাকা প্রাসাদে পৌঁছলে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবের আমন্ত্রণে চারদিনের সরকারি সফরে রোববার টোকিও পৌঁছেন। জাপানের প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। তিনি গার্ড পরিদর্শন ও সশস্ত্র বাহিনীর অভিবাদন গ্রহণ করেন।
এ সময় দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম, অ্যাম্বাসেডর-এট-লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান সিকদার, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, ইআরডি সচিব মোঃ মেজবাহউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল, জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন ও এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও বোয়িং ২০০৮ সালের ২২ এপ্রিল চারটি ৭৭৭-৩০০ইআর (এক্সটেনডেন্ট রেঞ্জ) ও চারটি ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর অংশ হিসেবে বোয়িং কোম্পানি ২০১১ সালের ২১ অক্টোবর প্রথম ৭৭৭-৩০০ইআর বিমান বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে। জ্বালানি সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্যতা ও বিশেষ যাত্রী কেবিনের জন্য বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন এয়ারলাইনস্ ৭৭৭ বিমান পছন্দ করে। বোয়িংয়ের ৭৭৭-৩০০ইআর হল বিশ্বের বৃহত্তম দূর পাল্লার টুইন-ইঞ্জিন জেটলাইনার। এ বিমান ৪শ’ ১৯ জন যাত্রী নিয়ে কমপক্ষে ৭ হাজার ৯শ’ ৩০ নটিক্যাল মাইল (১৪ হাজার ৬শ ৮৫ কি.মি.) পাড়ি দিতে সক্ষম। বাংলাদেশের বিমান বহরে এই ৭৭৭ বিমানটি সংযুক্ত করতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিশেষ অবদান রাখেন।