‘কিশোরদের ওপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব ‘সামান্য’’

‘কিশোরদের ওপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব ‘সামান্য’’

কৈশোরকে বলা যায় অদম্য কৌতূহলের বয়স। স্বাভাবিক নিয়মেই তারা সবকিছু জানতে চায়, যার প্রভাব পড়ে তাদের জীবন ও আচরণে। ফলে কিশোর বয়সে একটি ছেলে অথবা মেয়ে চারপাশে কী দেখছে ও শুনছে তা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই কিশোর বয়সী সন্তানের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নিয়ে অভিভাবকরা সবসময়ই উদ্বিগ্ন থাকেন। কিন্তু অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল বলছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে অভিভাবকদের এত বিচলিত না হলেও চলবে। কারণ কিশোর বয়সীদের জীবন সন্তুষ্টির ক্ষেত্রে এসব মাধ্যমের প্রভাব খুবই ‘সামান্য’। এর চেয়ে বরং সার্বিক আচার-আচরণে পরিবার, বন্ধু এবং স্কুলজীবন গভীর ভূমিকা রাখছে।
পিএনএস জার্নালে সম্প্রতি এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী ১০-১৫ বছর বয়সী ১২ হাজার কিশোর-কিশোরীর দেয়া মতামতের ওপর ভিত্তি করে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে অক্সফোর্ড। তুলনামূলক বেশি সময় ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে এমন কিশোররা অধিক অসন্তুষ্টিতে ভুগছে কীনা, গবেষণায় এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা হয়েছে। এছাড়া তরুণ প্রজন্মের ওপর প্রযুক্তির প্রভাব যাচাই করতে চেয়েছেন গবেষকরা। এজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো কীভাবে ব্যবহূত হচ্ছে, সে বিষয়ে তথ্য প্রকাশে কোম্পানিগুলোকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
এর আগেও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় স্ক্রিন, প্রযুক্তি ও শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে যোগসূত্র নিয়ে গবেষণা করে। কিন্তু এ গবেষণা পরস্পর বিরোধী বলে বিতর্ক রয়েছে। অক্সফোর্ড দাবি করছে, তাদের এবারের গবেষণাটি তুলনামূলক অনেক গভীর ও গতিশীল।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এন্ড্রু প্রিবিস্কি বলেন, অনেক সময়ই সীমিত প্রমাণাদির ওপর ভিত্তি করে গবেষণা সম্পন্ন করা হয়, যে কারণে কোনো একটি বিষয়ে পুরোপুরি ধারণা পাওয়া যায় না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার ও এর সঙ্গে জীবন সন্তুষ্টি কতটুকু প্রভাবিত হচ্ছে, তা বের করতেই সাম্প্রতিক গবেষণাটি সম্পন্ন হয়েছে। যেখানে বিষয় দুটির মধ্যে খুবই ‘সামান্য’ যোগসূত্র পাওয়া গেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব ‘একমুখী কোনো রাস্তা’ নয় এবং একজন কিশোরের আচার-আচরণ গঠনের ক্ষেত্রে তা ১ শতাংশেরও কম ভূমিকা রাখে।
অধ্যাপক প্রিবিস্কি বলেন, ‘একজন মানুষের ৯৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ জীবন সন্তুষ্টির ক্ষেত্রেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কোনো প্রভাব নেই।’
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয় স্বাভাবিক স্কুলের দিনগুলোয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেছনে তারা কত সময় ব্যয় করে। এছাড়া জীবনের ভিন্ন দিক নিয়ে তাদের সন্তুষ্টির পরিমাণও নির্ধারণ করা হয় প্রতিবেদনটিতে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় কাটানোর প্রভাব তুলনামূলক কিশোরীদের ক্ষেত্রে বেশি। অবশ্য এ প্রভাবও খুব সামান্য। আর কিশোরদের ওপর বড় ধরনের কোনো প্রভাব পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় সন্তানের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় কাটানো নিয়ে মা-বাবার উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক প্রিবিস্কি।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নির্দিষ্ট কিছু প্রভাবে ঝুঁকিগ্রস্ত তরুণদের চিহ্নিত করাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে মনে করেন তারা। কোন কোন বিষয় কিশোরদের আচার-আচরণে প্রভাব ফেলছে, সেটিও খুঁজে বের করার প্রতি জোর দেন তিনি।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.