কোটার অতিরিক্ত প্রায় ২০ হাজার হজযাত্রী নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে হজ এজেন্সিগুলো। হজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণকারী হজযাত্রীরাও অনিশ্চয়তা ও হতাশার মধ্যে রয়েছেন। আদৌ তারা এ বছর হজে যেতে পারবেন কি না কেউ-ই পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারছেন না।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কোটা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে এবং এখন পর্যন্ত সৌদি সরকার বাংলাদেশের কোটা বৃদ্ধির আবেদনটি নাকচ করে দেয়নি। হজ এজেন্সিগুলোও শেষ পর্যন্ত কোটা বৃদ্ধি পাবে এমন আশায় কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হজ এজেন্সিগুলোর ব্যানারে দুই শতাধিক হজ এজেন্সি মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি এবং ইহরামের কাপড় পরে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রাসহ নানা কর্মসূচিও পালন করেছে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলে কোটা বৃদ্ধির সরকারি চেষ্টার বিষয়টি তাদের জানিয়েছেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সি সূত্র জানিয়েছে, নির্ধারিত কোটায় এক লাখ এক হাজার ৭৫৮ জনের তালিকা ইতোমধ্যেই সৌদি সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। বাকি মোয়াল্লেম ফি গ্রহণকারী প্রায় ১০ হাজার হজযাত্রীর তালিকা রয়েছে। এ ছাড়া আরো প্রায় ১০ হাজার হজযাত্রী এজেন্সিগুলো সংগ্রহ করেছেন, যাদের নাম নিবন্ধনও হয়নি মোয়াল্লেম ফিও জমা নেয়া হয়নি। যে এজেন্সিগুলোর হজযাত্রীদের তালিকা সৌদি সরকারকে দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ৩৬টি এজেন্সির ডাটা সৌদি অনলাইনে এন্ট্রি করা যাচ্ছে না। তাদের নামের পাশে লাল চিহ্ন দেখাচ্ছে। ফলে তাদের হজযাত্রীদের অন্য এজেন্সির মাধ্যমে পাঠানের ব্যবস্থা করার জন্য ইতোমধ্যেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
অপক্ষেমাণ ২০ হাজার লোককে হজে পাঠানোর ব্যাপারে কিছুই বলা যাচ্ছে না। যদিও ইতঃপূর্বে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল, কোটার অতিরিক্ত হওয়া হজযাত্রীরা আগামী বছর হজে যেতে পারবেন এবং তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে; কিন্তু সর্বশেষ ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কোটার অতিরিক্ত হজযাত্রীদের পাঠানের বিষয়ে চেষ্টা চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। এ ব্যাপারে কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন এমপিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রয়োজনে ধর্মমন্ত্রীসহ একটি প্রতিনিধি দলের সৌদি আরব সফরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। সম্প্রতি ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, যারা আগে মোয়াল্লেম ফি জমা দিয়েছেন তাদের নির্ধারিত কোটার মধ্যে তাদের তালিকা পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। যারা কোটার অতিরিক্ত হয়ে গেছেন তাদের জন্য কোটা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। প্রয়োজন হলে আমিও সৌদি আরব গিয়ে কোটার জন্য চেষ্টা করব। ধর্মমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার সকালে লন্ডন সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। এখন পর্যন্ত তার সৌদি আরব সফরের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।
মক্কার বাংলাদেশ হজ মিশনের কনসাল (হজ) জহিরুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে গত রাতে তিনি ফোনে নয়া দিগন্তকে বলেন, বাংলাদেশ হজ মিশন থেকে সৌদি ধর্ম মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। আমাদের চেষ্টায় কোনো কমতি নেই। আমরা কোটা বৃদ্ধির ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি বলেন, আপনারা দোয়া করেন, আমরা আশাবাদী।
অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ভারত-পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশের কোটা বৃদ্ধির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেসব দেশকে কোটা বৃদ্ধি না করার বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়েছে; কিন্তু বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে এখনো কিছু জানায়নি।
ক্ষতিগ্রস্ত হজ এজেন্সিগুলোর আহ্বায়ক মাওলানা ফজলুর রহমান জানিয়েছেন, ৪০ থেকে ৪৫টি হজ এজেন্সির একজন হজযাত্রীর নামের তালিকাও নির্ধারিত কোটার মধ্যে যায়নি। এ ছাড়া পাঁচ শতাধিক এজেন্সির কম-বেশী হজযাত্রী কোটার অতিরিক্ত হয়ে গেছে। ফলে এজেন্সিগুলো এবং হজযাত্রীরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা মক্কায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা কোটা পাওয়ার ব্যাপারে এখনো আশা ছাড়েননি বলে জানিয়েছেন।
আল আরাফা ওভারসিজের মাওলানা জাকারিয়া এমন এজেন্সি মালিকদের একজন। তিনি গতকাল জানিয়েছেন, তিনি প্রথম দফায় ১০৪ জনের নাম রেজিস্ট্রি করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং তাদের নামের তালিকা কোটার মধ্যেই গেছে। কিন্তু ২২৬ জন হজযাত্রীর মোয়াল্লেম ফিও জমা দিতে পারেননি। এখন প্রতিদিনই হজযাত্রীরা যোগাযোগ করছেন। সরকার কোটা বৃদ্ধির চেষ্টা করছেÑ এই কথা বলে তাদের আশস্ত করার চেষ্টা করছেন বলে তিনি জানান।
হাবের মহাসচিব শেখ আবদুল্লাহ জানান, কোটা বৃদ্ধির কোনো খবর এখন পর্যন্ত আসেনি। আদৌ কোটা বৃদ্ধি হবে কি নাÑ সেটাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা সরকারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। সরকার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কোটা বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাবে বলে আমাদের জানিয়েছে।