‘জামায়াতকে জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে হবে’

‘জামায়াতকে জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে হবে’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ২০ দলের অন্যতম শরিক দল হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। তারা যদি সত্যিকার অর্থে খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় তাহলে তাদেরকে জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে হবে।

তিনি বলেন, আজ তাদের পিতারা যে ভুল করেছেন তার জন্য বর্তমানে যারা আছে তাদেরকে জনসম্মুখে ক্ষমা চাওয়া যুক্তিসঙ্গত হবে। কারণ তাদেরও রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
‘মধ্যবর্তী নির্বাচন এবং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি’ শীর্ষক সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি।

খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রেখে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভুল করছেন উল্লেখ করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আপনি (প্রধানমন্ত্রী) মহাভুল করছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় খালেদা জিয়া তিন মাস আত্মগোপনে ছিলেন। তারপর তিনি যখন গ্রেফতার হন তখন সেনানিবাসে আবদ্ধ ছিলেন। ধানমণ্ডির বাড়িতে দুজনেই একসঙ্গে ছিলেন। কিন্তু আজ একজন বন্দি আর একজন বাইরে। আপনি যদি আত্মরক্ষা করতে চান তাহলে আর দেরি না করে খালেদা জিয়ার জামিনের ব্যবস্থা করে দিন।
জাফরুল্লাহ আরও বলেন, ৩০ তারিখের নির্বাচন ২৯ তারিখে হওয়াটা ঐক্যফ্রন্টের একটা ব্যর্থতা বলতে পারেন। আর কোনো সুযোগ নাই। তাই সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
এ সময় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, বর্তমানে খালেদা জিয়ার পক্ষে জেলে থেকে আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া সম্ভব নয়। তারেক রহমানের পক্ষে লন্ডন থেকে সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকা সম্ভব নয়। সুতরাং দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমাদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে এবং আমি সেই দায়িত্ব নেয়ার জন্য প্রস্তুত। বসে থাকলে চলবে না, এগিয়ে যেতে হবে। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। বিএনপি নেতাদেরকে অনুরোধ করবো- হয় আপনারা নেতৃত্ব দেন, না হলে আমাদের নেতৃত্ব গ্রহণ করুন।
জোটকে শক্তিশালী করতে নিজের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে অলি আহমদ বলেন, বিএনপি নেতাদের প্রতি অনুরোধ, সবাই এক জায়গায় একত্রিত হোন। আমাদের হাতকে শক্তিশালী করেন। না হলে আপনাদের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য আমাদেরকে বলেন, আমরা সেটা করতে রাজি আছি।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্র পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমি মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিতে পারি নাই, এবার স্বৈরশাসকের হাতে জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। বিএনপির যারা আছেন আপনারা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন। কারা কারা আসবেন আমাদের সঙ্গে আসেন।
অলি আহমদ আরও বলেন, এলডিপিকে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন নেই। আপনারা নতুনভাবে এটার নামকরণ করেন। আমার নেতৃত্বে আসতে হবে এটাও না। আপনাদের মধ্যে যদি কেউ নেতৃত্ব দিতে পারেন তার নেতৃত্বেও আমরা কাজ করতে প্রস্তুত। যার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে জাতির কাছে, যিনি জাতির সঙ্গে বেঈমানি করেন নাই, যার অভিজ্ঞতা রয়েছে, যে কারও সঙ্গে আপস করবেন না, দুর্নীতির কাছে মাথা নত করবে না- এমন ব্যক্তির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হতে আমার কোনো আপত্তি নেই।
বিএনপি সংসদে শপথ নিয়ে সরকারের বৈধতা দিয়েছে মন্তব্য করে এলডিপি সভাপতি বলেন, আজকে এখানে ২০ দলীয় ঐক্যজোটের অনেকেই আছেন। আপনাদেরকে অনুরোধ করব অন্যদিকে তাকানোর সুযোগ নেই। আপনারা এখানে মধ্যবর্তী নির্বাচনকে বিভিন্নভাবে ব্যাখা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। আসলে আপনাদের এটার মূল স্পিরিটটা দেখতে হবে। বিএনপি সংসদে গিয়েছে-এটাই হলো বাস্তবতা। বিএনপি এই সরকারকে বৈধতা দিয়েছে, এটাই হলো বাস্তবতা।
তিনি বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন মানে হলো এইটা না যে আড়াই বছর পরে হবে। এটা কালকেও হতে পারে, পরশুদিনও হতে পারে। আপনাদেরকে কে বলেছে আগামী নির্বাচনও এই সরকারের অধীনে হবে। এই সরকারের অধীনে তো আমরা নির্বাচন করে দেখলাম, এরা তো দিনের বেলায়ও কখনও নির্বাচন করে না। কারণ তারা দিনের বেলায় আলোতে ভয় পায়, তাই রাতের অন্ধকারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এরা নিশাচর, তাই আমাদেরও মশাল হাতে নিয়ে বের হতে হবে। নিশাচরদের তালাশ করে বের করতে হবে।
অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পারোয়ার বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে মুক্তির আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের সঙ্গে ছিল এবং থাকবে।
মিয়া গোলাম পারোয়ার বলেন, শেখ হাসিনার টেলিফোন আলাপ যেটা মিডিয়ায় এসেছে তাতে প্রমাণিত হয় খালেদা জিয়া আদালতের কাছে আটকে যায়নি। তাকে আটকে রাখা হয়েছে। তিনি মূলত ফ্যাসিবাদের জিঞ্জিরায় আবদ্ধ হয়ে আছেন।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মুক্তির আন্দোলন একই সংগ্রাম। বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ বর্তমানে ভয়াবহ রূপে আবির্ভূত হয়েছে।
গোলাম পারোয়ার বলেন, ঐক্যফ্রন্ট বলি আর ২০ দল বলি আমাদের সবাইকেই কৌশলের বিষয়ে স্পষ্ট হতে হবে। জনগণের সঙ্গে আমরা রাজনীতি করি তাদের সেন্টিমেন্ট যদি আমরা না বুঝি সেটাকে মানুষ কোনোভাবেই কৌশল হিসেবে নেয় না।
সভায় আরও বক্তব্য দেন- কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনি, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ, নিলুফার চৌধুরী মনি প্রমুখ।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.