শৈশবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন জুলিয়ান মুর।
হলিউডের আজব দুনিয়া অনেক দিন নারীদের সাদরে অভ্যর্থনা জানায়নি। এখন যে দৃশ্যপট বদলে গেছে, তা নয়। তবে পরিবর্তন আসছে। কী এই পরিবর্তন? অস্কারজয়ী হলিউড তারকা জুলিয়ান মুরের মতে, এই পরিবর্তনের পেছনে কলকাঠি নেড়েছে ‘মি টু’ আন্দোলন। কেননা, এই আন্দোলন হলিউডে এমন সব আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে, যা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
মুরের মতে, কিছু বাজে আচরণ হলিউডের সামাজিক প্রথার মতে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ বলে ধরা হতো। কিন্তু আদতে এগুলো যৌন নিপীড়ন। ‘মি টু’ আন্দোলনই প্রথম এই আচরণগুলোকে সামনে এনে শক্তিশালী বার্তা দেয় আর চিৎকার করে বলে, ‘আর না’।
টাটলার ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ৫৮ বছর বয়সী মুর বলেন, ‘এত দিন আমাদের মধ্যে একটা ধারণা ছিল, পুরুষের এসব আচরণ অলিখিতভাবে অনুমোদিত। প্রথম দেখায় একজন পুরুষ একজন নারীর সঙ্গে করমর্দন করে “হ্যালো” না বলে তার বদলে চুমু খায়। এটা নাকি সংস্কৃতি, এটা নাকি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ।’
মুর আর মুরের স্বামী একবার বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ করছিলেন। তখন মুরের স্বামী বলেছিলেন, এ রকম আচরণ কেউ যদি পারিবারিক পার্টিতে করে, তাহলে ‘ওকে’। তখন মুর জোর দিয়ে বলেছিলেন, ‘কখনোই না’।
মুর ওই সাক্ষাৎকারে নিজের যৌন নিপীড়নের বিষয়েও বলেন, ‘আমার স্পষ্ট মনে আছে, যখন আমি অনেক ছোট, তখন একজন বাজেভাবে আমার শরীর স্পর্শ করেছিল। আমার খুব অস্বস্তি লেগেছিল। কিন্তু তখন আমি কিছুই বলতে পারিনি। আমার বোনই একমাত্র মানুষ, যার কাছে আমি বিষয়টি খোলাসা করেছিলাম। ও বুঝেছিল আমার অনুভূতি। তাই আজকের এই পরিবর্তন একটা সত্যিকারের ইতিবাচক পরিবর্তন।’
অভিনয় দুনিয়ার এমন কোনো সম্মানজনক পুরস্কার নেই, যা জেতেননি মুর। অস্কার, বাফটা, এমি, গোল্ডেন গ্লোব সবই আছে তাঁর ঝুলিতে। ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় অভিনেত্রী হিসেবে ইউরোপের তিনটি প্রধান চলচ্চিত্র উৎসব কান, বার্লিন আর ভেনিসে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছেন। কিন্তু এসব অর্জন সহজেই ধরা দেয়নি।
স্কুলজীবনে সহপাঠীদের অনেকেই ‘স্টিল অ্যালিস’ ছবির এই অ্যালিসকে ‘ফ্রেকেলফেস স্ট্রবেরি’ (স্ট্রবেরির মতো ছোপ ছোপ দাগ আছে যার মুখে) বলে খ্যাপাতো। পড়াশোনার একপর্যায়ে বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে থিয়েটার নিয়ে পড়াশোনার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন জুলিয়ান মুর। এরপর পড়াশোনার শেষে এক রেস্তোরাঁয় খাবার পরিবেশনকারী (ওয়েট্রেস) হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। পরে একটা সময় মুর ছোট পর্দায় আর চলচ্চিত্রে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন বটে, কিন্তু ওপরে ওঠার সিঁড়িটা নাগালে পেতে তাঁর বেশ খানিকটা সময় লেগেছিল।
একজন সফল অভিনয়শিল্পীর পাশাপাশি ব্যক্তিজীবনেও জুলিয়ান মুর একজন সফল স্ত্রী এবং মা। জুলিয়ানের স্বামী বার্ট ফ্রেয়ন্ডলিশ একজন পরিচালক ও প্রযোজক।