মানবপাচারে জড়িত ‘গোটা থাইল্যান্ড’!

taiমানবপাচারের ব্যবসা দিনে দিনে এতো বেশি লাভজনক হয়ে পড়েছে যে গোটা থাইল্যান্ডই কোনো না কোনোভাবে এই অবৈধ কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ছেন এবং পাচারকারীদের সাহায্য করছেন। বিবিসি’র অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য।

সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক প্রতিনিধি জোনাথন হেড এক বিশেষ প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশী এবং মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের পাচার হওয়ার আদ্যোপান্ত। প্রতিবেদনটি বিবিসি-তে প্রচারিত হয়েছে।

চলতি মাসের শুরুতে আন্দামান উপকূলবর্তী একটি ম্যানগ্রোভ বনসংকুল দ্বীপে গিয়েছিলেন জোনাথন হেড। জঙ্গলের ভ্যাঁপসা পরিবেশে তিনি ছিলেন একদল থাই স্বেচ্ছাসেবকের সাথে। দ্বীপটিতে এলোমেলো অবস্থানে থাকা একাধিক গণকবরের খবর সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রচারিত হওয়ায় সেগুলোর সত্যতা যাচাই করতেই এই অভিযান।

পাচার করে আনা অভিবাসীদের সবচেয়ে বড় দলটিকে এখানে পাচারকারীরা আটকে রেখেছিল এবং তাদের মালয়েশিয়া সীমান্তের দিকে দক্ষিণে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওই জঙ্গলে অপেক্ষা করা হচ্ছিল বলে জানা গেছে।

মানুষের হাড়ের প্রথম টুকরোটি উঠে আসার আগ পর্যন্ত পানিতে ভেজা কাদামাটির অনেকটাই গভীর পর্যন্ত খুঁড়ে ফেলেছিল স্বেচ্ছাসেবকরা। এরপর তারা একটি ছিন্নভিন্ন ভেজা কাপড় টেনে বের করে। এটা ছিল একটি পোশাকের টুকরো, যার ভেতরে ছিল এক নারীর হলদে হয়ে যাওয়া হাড়।

ওই নারী কে ছিলেন, কিংবা তিনি কিভাবে মারা গিয়েছিলেন, তা জানা যায়নি। কিন্তু তিনিও যে পাচারকৃত অভিবাসীদেরই একজন ছিলেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত উদ্ধারকর্মীরা।

বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়-

ওই নারী নিশ্চয়ই এই দুর্গম অঞ্চলে পৌঁছানোর আগে বিপজ্জনকভাবে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে এসেছিলেন। যদি তিনি আজ বেঁচে থাকতেন, উন্নত জীবনের খোঁজে তার মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পথ নিঃসন্দেহে আরো বেশি দুর্বিষহ হতো।

গত বছরের অক্টোবর মাসে ওই একই অঞ্চলে ছিলেন বিবিসি’র এই সাংবাদিক। থাই জেলা তাকুয়া পা-তে সরকারি বাহিনী একদল অবৈধ অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে, এমন খবর পেয়ে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে পৌঁছান তিনি। উদ্ধারকৃতদের যে বিশাল ঘরটিতে রাখা হয়েছিল, সেখানে থাকা ৮১ জন মানুষ প্রচণ্ড হতাশায় ভুগছিলেন, কাঁদছিলেন এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছিলেন।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমরা নিজ দেশে নির্যাতনের শিকার হয়ে গত কয়েক বছর ধরেই পালিয়ে দেশ ছাড়ছেন। তবে এবার পলাতকদের তালিকায় কেবল রোহিঙ্গারাই নয়, রয়েছেন অসংখ্য বাংলাদেশীও। অনেক বাংলাদেশী এও জানিয়েছেন সাংবাদিকদের, যে তাদের জোর করে নৌকায় তুলে দেয়া হয়েছিল।

জেলাপ্রধান মানিত পিয়ানথং সাংবাদিকদের সেই স্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন, যেখানে তিনি এই অভিবাসীদের সন্ধান পেয়েছিলেন। স্থানটি জঙ্গলে ওই নারীর কবর থেকে খুব বেশি দূরে নয়। এলাকাটিতে এই অভিবাসীদের বেশ কয়েকদিন ধরে অনাহারে রাখা হয়েছিল এবং তাদের নিয়মিত মারধর করা হতো।

মানিত সাংবাদিকদের জানান, তার জেলা দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহার করছিল পাচারকারীরা। নৌকা থেকে পাচারকৃত অভিবাসীদের ট্রাকে তুলে দিতে যাত্রাবিরতি হিসেবে এই জেলা ব্যবহার করতো তারা। পাচারকারীদের নির্মূল করতে চেয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু থাইল্যান্ডের কেন্দ্রীয় সরকার এবং স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে এ ব্যাপারে ন্যূনতম সাহায্যও পাননি তিনি।

বিগত বেশ কয়েকদিন ধরে থাই সরকারের একাধিক কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তারাও ফোন করছিলেন মানিতের সাথে। ক্ষুব্ধ ওই কর্মকর্তাদের ফোনে সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলার জন্য এবং অভিবাসী আটক কেন্দ্রে বাংলাদেশীদের পাঠিয়েছেন তিনি, একথা বলার জন্য তার ওপর ক্ষুব্ধ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা।

ওই এলাকায় পৌঁছানো অনেক অভিবাসীকেই যে পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়, তা এখন ‘ওপেন সিক্রেট’।

পাচারকৃতদের আটকাবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য মানিত তার নিজস্ব কর্মচারীদের মধ্য থেকেই স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়েছেন। ট্রাকে করে অভিবাসীদের নিয়ে যাওয়া ঠেকাতে দক্ষিণের সড়কপথে তিনি ২৪ ঘণ্টা পাহারার ব্যবস্থা করেছেন।

নতুন করে কোনো নৌকা এসে পৌঁছেছে কিনা, তা জানতে পারলেই সতর্ক হয়ে তাকে জানানোর জন্য স্থানীয় জেলেদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

ওই এলাকায় নৌকায় করে পৌঁছাতে থাকা মানুষের মধ্যে বাংলাদেশীদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে, রোহিঙ্গা মুসলিম তো রয়েছেই।

এ থেকে প্রমাণিত যে মানবপাচার দিন দিন আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, এই ব্যবসা ভীষণ রকমের লাভজনক।

জঙ্গলে রাবার গাছের আধিপত্যে বাতাসের আর্দ্রতা দম বন্ধ করে দেয়ার মতো। যখন পাহাড়ে উঠছিলেন জোথাথন, কমলা রঙের শার্ট পরিহিত এক তরুণকে দ্রুত সরে যেতে দেখেন তিনি। ওই এলাকায় আর কোনো পথ ছিল না। জোনাথন ওই তরুণের সাথে চলতে চলতে দ্রুত তার সাথে কথা চালিয়ে যেতে থাকেন।

তরুণটি জানায়, ছয় মাস ধরে ওই এলাকায় আছে সে। তার সাথে আছে আরো প্রায় ৬০০ মানুষ। আশ্রয়হীন অবস্থায় তারা কোথায় ঘুমায় তা দেখানোর জন্য ওই তরুণ ঝড়ে পরা পাতা আর পোকামাকড়ের মধ্যেই শুয়ে পড়ে।

ছেলেটি বলেন, ‘পাচারকারীরা আমাদের এখানে এক তাঁবুতে এনে রেখেছিল এবং আমাদের বাবা-মায়ের কাছে ফোন করে টাকা চেয়েছিল। বাবা-মা টাকা দিতে পারেনি, তাই আমরা মার খেয়েছিোম। আর এখানে (একটি জায়গার দিকে আঙুল তুলে নির্দেশ করে) এক নারীকে ধর্ষিত হতে দেখেছি আমরা। মানুষ মরেছে আর মৃতদেহ সরাতে তারা ট্রাক পাঠিয়েছে।’

বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, এটা ব্যবসারই একটি ধরন। থাই পাচারকারীদের দলটি নৌকা অতিরিক্ত বোঝাই করে মানুষ নিয়ে আসে। ৩০০ লোকবাহী একটি নৌকার ভাড়া ও থাই পুলিশকে দেয়া খরচবাবদ ন্যূনতম ২০ হাজার ডলারের মতো খরচ হয় বলে বিবিসি প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করেছে অনেকগুলো সূত্র।

এরপর অভিবাসীদের জঙ্গলে আটকে রেখে তাদের পরিবারের কাছে ব্যক্তিপ্রতি দুই থেকে তিন হাজার ডলার করে মুক্তিপণ চাওয়া হয়, যা মালয়েশিয়ায় কর্মরত নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য একটি বিশাল অংক।

তাহলে থাই গ্রামবাসীদের মধ্যে থেকে পাচারকারীরা কিভাবে নিজেদের ব্যবসা চালায়? হাত ইয়াই শহর থেকে গাড়িতে করে মাত্র ৩০ মিনিট গেলেই যে শিবিরটি চোখে পড়ে, তার সাথে স্থানীয় গ্রামবাসীদের সংশ্লিষ্টতা চোখে পড়ার মতো বলে জানান জোনাথন হেড।

ওই শিবিরের নিকটবর্তী গ্রামের এক থাই মুসলিম কিশোর জানালো যে কিভাবে গ্রামটির বাসিন্দারা পাচারকারীদের সাথে জড়িয়ে পড়েছে।

সে জানায়, কয়েক বছর আগে পাখি শিকার করতে গিয়ে জঙ্গলে অভিবাসীদের দেখে সে। ওই অভিবাসীদের মধ্যে অনেক শিশুও ছিল। শিবিরে আটকে রেখে তাদের পেটানো হচ্ছিল। ওই ঘটনার পর থেকে শিবির থেকে কোনোভাবে পালাতে পারা অভিবাসীদের নিয়ে এসে নিজের কাছে রাখে ওই কিশোর।

ছেলেটি জানায়, পুরো গ্রামবাসীই এ ঘটনায় জড়িত এবং তার কারণ শুধুই টাকা। গ্রামবাসীদেরই ভাড়া করে পাচারকারীরা, ওই অভিবাসীদের ওপর নজর রাখার জন্য। গ্রামবাসীরাই রোহিঙ্গাদের জন্য খাবার নিয়ে যায়।

এ কাজের জন্য তারা পাচারকারীরা নিয়মিত এসে গ্রাম ঘুরে যায় এবং লোক ভাড়া করে। এখানকার প্রধান অর্থকরী শস্য রাবার গাছ বিক্রির পাশাপাশি এই কাজ একটি ভালো বিকল্প।

গ্রামের তরুণদের একাজে প্রলোভিত করতে তাদের মাদক দেয়া হয় বলেও জানায় ওই কিশোর। তাই যদি অভিবাসীরা পালিয়ে যায়, কোনো বাধা নেই যেহেতু, তারপরও তারা ধরা পড়ে যান এবং পাহারাদারদের কঠোর নির্যাতনের শিকার হন।

দক্ষিণ থাইল্যান্ডের একাধিক এলাকায় পাচারকারীদের অভিযানের জটিল পদ্ধতির পুরোটারই প্রমাণ সংরক্ষণ করে রেখেছে বিবিসি। তাকুয়া পা জেলায় স্থানীয় প্রশাসন প্রতিবেদনের শুরুতে উল্লেখ করা নারী কবরটির কাছের এক এলাকা থেকে বাংলাদেশীদের উদ্ধার করেছিল প্রায় চার মাস আগে।

গত ১৪ মে বিবিসি একটি নৌকা দেখতে পায়, যেটি দক্ষিণ থাইল্যান্ডের কাছাকাছি উপকূলে মালয়েশিয়ার কোহ লিপে দ্বীপের কাছে মাঝ সমুদ্রে ভাসছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। স্থানীয় জেলেরা নৌকাটিকে শনাক্ত করে খবর দেন। পরে নৌকাটি ইন্দোনেশিয়া পৌঁছায়।

হাত ইয়াই শহর থেকে গাড়িতে আধা ঘণ্টার দূরত্বে বিবিসি’র দলটি আরেকটি জায়গার দেখা পায়, যেটিকে স্থানীয় গ্রামবাসীদের সহায়তায় শিবির হিসেবে ব্যবহার করছে পাচারকারীরা।

এর কোনোকিছুই আসলেই সম্ভব হতো না যদি না সরকারি কর্মকর্তারা এসবের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকতেন, জানিয়েছেন বিবিসি। পাচারকারীদের সাথে সরকারি কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার শিকড় কতদূর গেছে তা এখনো স্পষ্ট না হলেও, এর দৈর্ঘ্য যে অনেক বেশি- সে ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

গত বছরের শেষ দিকে মানব পাচারের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এক জ্যেষ্ঠ থাই পুলিশ কর্মকর্তা এ বিষয়ে জোনাথন হেডের সাথে কথাও বলেছিলেন। তিনি জানান, মালয়েশীয় সীমান্তের ঠিক সাথেই অন্তত এমন একটি শিবির আছে যেখানে এক হাজার মানুষকে আটকে রাখা হলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।

কেন ওই শিবির তিনি বন্ধ করেননি জানতে চাইলে তিনি হেসে বলেন, “আপনি জানেন যে সীমান্ত এলাকা সেনাবাহিনীর অধীনে। তাই একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে সেনাবাহিনীর অনুমতি ছাড়া ওই এলাকায় কোনোকিছু করারই এখতিয়ার নেই আমার।”

ওই বিষয়ে কিছু করার অনুমতি তিনি আর কখনো পানও নি। তিনি কেন থাইল্যান্ডের সেনাপ্রধান ও গত বছর দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান প্রয়ুথ চ্যান-ওচার কাছে যাননি এবং মানবপাচার বন্ধের আবেদন জানাননি?

এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “যদি আমি এই চেষ্টা করতাম, তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে চোখে দেখার আগেই বিষয়টি পাচারকারীদের কানে চলে যেতো এবং তারা দ্রুত শিবিরটি সরিয়ে ফেলতো। তাই দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না আমার।”

ছয় মাস পর ২৬টি মৃতদেহের প্রথম গণকবরটি আবিষ্কার হয় ওই একই এলাকায় এবং তখনও নপুংসকের মতো এসব দৃশ্য তিনি বসে বসে দেখছিলেন।

তাই সব মিলিয়ে পাচারের সাথে কারা জড়িত এবং কারা জড়িত নন, সেসব বোঝা ভীষণ দুঃসাধ্য।

একজন স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা এই পাচার বাণিজ্য বন্ধে নিজের চেষ্টার কথাও বিবিসি-কে জানিয়েছেন। তিনি তার নৌকা নিয়ে সাংবাদিকদের আরো গভীরে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। একদিন পর সেনাবাহিনীর একটি দল সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে টহলে যাওয়ার সময় ওই একই পুলিশ প্রধানের কথা উল্লেখ করে জানায়, পাচারকারীদের ধরতে তিনি কতোটা আন্তরিক।

কিন্তু যখন দলটি গ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে একসময় ওই গ্রামটি পার হচ্ছিল, তখন সাংবাদিকরা একটি গ্রামের পথ ধরে যেতে যেতে ধারণা করে যে ওই গ্রামে অভিবাসীদের লুকিয়ে রাখা হয়েছে।

সেখানে সাংবাদিকরা নেমে যেতে চাইলে ওই সেনা সদস্যরাই হঠাৎ করে নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভুলে যায় এবং সেখানে সাংবাদিকদের নামানোর ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানায়। সে সময় সেনা সদস্যরা হঠাৎই নিজেদের দায়িত্বের ব্যাপারে বোধ হারিয়ে ফেলেন বলে মনে হচ্ছিল, জানান বিবিসি প্রতিনিধি।

এক সেনা কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বেশ কিছু কাগজপত্র দেখান। ওই কাগজগুলো রানোংয়ের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের বিষয়ে তদন্তের বিস্তারিত তথ্যপ্রমাণ ছিল। পাচারকারীদের সাথে যোগাযোগের জন্য রানোং বেশ কুখ্যাত একটি প্রদেশ।

ওই কর্মকর্তার কাছে দোষীদের নাম, ফোন নাম্বার, ফোনকলের বিস্তারিত এবং পাচারকারীদের সাথে সংশ্লিষ্টতার যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ ছিল। এসব তথ্য তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানোর কথাও জানিয়েছিলেন। অতএব, একথা স্পষ্ট যে এসব বিষয়ে জেনেও থাই সরকার কোনো কর্তব্যই পালন করেনি। ওই কর্মকর্তাকে পড়ে বদলি করে দেয়া হয়।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কর্মকর্তা ফিল রবার্টসন এ বিষয়ে বলেন, “দেখুন, সবাই আগে থেকেই জানতো যে ওই জায়গাগুলোতেই ওই শিবিরগুলো ছিল। ব্যাপারটা এমন নয় যে শিবিরগুলোর সাথে গ্রামবাসীর সংশ্লিষ্টতা এবং পাচারকারীদের সহায়তা করার বিষয়টি হঠাৎ করেই বেরিয়ে এসেছে। এই এলাকাগুলো থাই-মালয়েশিয়া সীমান্তে অবস্থিত এবং সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।

তাই ওইসব এলাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতিও রয়েছে। কেউ একজন চাইলেই এত বিশাল শিবিরে বিপুলসংখ্যক মানুষকে আটকে রাখবে কারো অনুমতি ছাড়াই এবং অর্থ বিনিময় করবে, এটা চাইলেই সম্ভব নয়।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, থাইল্যান্ডের এই ব্যবসা এতোটাই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে যে পাচারাকারীরা বাংলাদেশ পর্যন্ত নিজেদের হাত বিস্তৃত করে দিয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের পক্ষে নিজেদের দেশ মিয়ানমারের অবস্থা অনুকূল না হওয়ার পর্যন্ত দেশে ফেরার ব্যাপারে উৎসাহী হওয়া সম্ভব না হলেও বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে চিত্র অনেকটাই উলটো।

বাংলাদেশীদের এ ধরনের কোনো সমস্যা না থাকলেও দেখা গেছে কেবল ভালো কাজ ও উন্নত জীবনের মিষ্টি গান গেয়েই তাদের আকৃষ্ট করা যায়। কিন্তু বাংলাদেশীরা একবার পাচারকারীদের বর্বর রূপের দেখা পেলেই নিজ দেশে ফিরতে চান। তাই বাংলাদেশে এরই মধ্যে শ্রম দালালদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে পাচারকারীরা।

এই নেটওয়ার্ক ভেঙে গেলে পাচারকারীদের বিস্তৃত হাত অচিরেই খসে পড়বে, যার ধাক্কা লাগবে থাইল্যান্ডের মূল অঙ্গেও।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.