বলিউডের সর্বোচ্চ আসনে যেভাবে অধিষ্ঠিত হলেন দীপিকা পাড়ুকোন।
একজন ভারতীয় অভিনেত্রী ও মডেল। তিনি শুধু এই পরিচয়ে এখন পরিচিত নন। বর্তমানে তিনি ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক গ্রহণকারী তারকাদের একজন।
যিনি বলিউড চলচ্চিত্রে তার কর্মজীবন প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি দুইটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি হিন্দি, তামিল ও কন্নড় চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। বলছিলাম দীপিকা পাড়ুকোনের কথা।
কঠোর পরিশ্রম, সাফল্যের পেছনে লেগে থাকা এবং সঠিক স্ক্রিপ্ট বাছাইয়ে বদ্ধ পরিকর এই অভিনেত্রী এখন শুধু এগিয়েই চলেছেন সর্বোচ্চ সাফল্যের দিকে। হয়ত ক্যারিয়ারে অনেক সময় হুঁচট খেতে হয়েছে দীপিকাকে, তারপরেও তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন।
দীপিকা পাড়ুকোন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় প্রকাশ পাড়ুকোনের মেয়ে। তিনি ভারতের কোপেনহেগেনে জন্মগ্রহণ করেন এবং বেঙ্গালুরুতে বেড়ে উঠেন। একজন তরুণী হিসেবে তিনি জাতীয় পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশীপে অংশগ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু ফ্যাশন মডেল হওয়ার জন্য তিনি খেলার পেশায় ইতি টানেন।
এরপর দীপিকা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব পান এবং ‘ঐশ্বরিয়া কন্নড’ চলচ্চিত্রে নামমাত্র চরিত্রে ২০০৬ সালে প্রথম অভিনয় করেন। এই ছবিতে অভিনয় করে দীপিকা নিজেকে একটুও চিনাতে পারেননি বরং সমালোচিত হয়েছেন।
পরবর্তীতে ২০০৭ সালে তার প্রথম বলিউড ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র ‘ওম শান্তি ওম’ মুক্তি পায় যেখানে তিনি দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেন এবং ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ নারী অভিষেক পুরস্কার লাভ করেন। এরপর থেকে মোটামুটি দীপিকাকে চিনেছে পুরো বলিউড।
এদিকে, মিডিয়ায় আসার আগে দীপিকার কোন ইচ্ছায় ছিল না নায়িকা হওয়ার। তিনি স্বপ্ন দেখেছেন অন্য কোন পেশা নিয়ে। এই প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকারে একবার বলেছিলেন, ব্যাডমিন্টন ছিল তার ফেভারিট গেম এবং তার ধ্যানজ্ঞান। এমন কী জাতীয় পর্যায়েও অংশ গ্রহণ করেন তিনি। বেসবলের টিমেও সুযোগ পেয়েছিলেন এই নায়িকা। রাজ্য পর্যায়ে ম্যাচ খেলেছিলেন বেসবল টিমের হয়ে।
তবে দীপিকা অভিনেত্রী হিসেবে পরিচয় পাওয়ার আগে বলিপাড়ার জনপ্রিয় গায়ক হিমেশের একটি ভিডিও গানে মডেলিং করেন। এরপর ২০০৮ সালে ‘বাচনা অ্যা হাসিনো’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন দীপিকা, যা অনেক বেশি সমালোচিত হয়েছিল।
মূলত এই ছবিতে রণবীরের অভিনয় তেমন বাজে না হলেও বাজে গল্প পেয়েছিল দীপিকা। যা তাকে অনেকটা তোপের মুখে ফেলেছিল। কিন্তু ২০০৯-এ এসে তিনি ‘লাভ আজ-কাল’ এবং ‘লাফাঙ্গে পারিন্দে’ দিয়ে নিজের অভিনয় প্রতিভার পরিচয় দেন আবারো।
এরপরের বছর ২০১০ সালে আবারো ‘হাউসফুল’-এ অভিনয় করে সমালোচনার শিকার হন এই নায়িকা। এতে ব্রেইনলেস সংলাপ, ন্যাকামি, ওভারএক্টিং এর কারণে বাজেভাবে সমালোচিত হন দীপিকা। এখান থেকে মূলত শিক্ষা নিয়েছিলেন তিনি। আর এরপর থেকেই স্ক্রিপ্ট বাছাইয়ে যথেষ্ট সতর্ক হন এই নায়িকা।
তবে দীপিকার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট চলচ্চিত্র ছিল ‘ককটেল’ যা সমালোচকরা পছন্দ করেছিল এবং সেবার অনেক অ্যাওয়ার্ড জেতার সুযোগ পান দীপিকা। পরে ২০১৩ সালে এসে দর্শকদের দুইটি বিগ হিট ছবি উপহার দেন তিনি। ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ এবং ‘ইয়ে জাওয়ানি হে দিওয়ানি’, এই দুটি ছবির জন্য খুব আলোচিত হয়েছিলেন এই নায়িকা।
অবশ্য পরের বছর তিনি আবারো সমালোচিত হন। ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ করে পুনরায় তোপের মুখে পড়েন দীপিকা। তবে এই নায়িকার সর্বোচ্চ সাফল্য আসে ২০১৩ তে ‘রামলীলা’, ২০১৫ তে ‘বাজিরাও মাস্তানি’ এবং ২০১৮-এ ‘পদ্মাবত’-তে অভিনয় করে। এরপর থেকে তিনি নিজের ক্লাসকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। সত্যি বলতে, এই ছবিতে তিনি নিজের জাত চিনিয়েছেন।
‘পদ্মাবত’ এ তো দীপিকা বেশিরভাগ ডায়লগই দিয়েছেন শুধুমাত্র চোখের ইশারা দিয়ে। যা মানুষের মন জয় করে নিয়েছিল বেশ সজোরে। আর এই ছবির জন্য মূলত বলিউডের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হতে পেরেছেন দীপিকা।
এদিকে, গেলো বছর বলিউডের এই শীর্ষ নায়িকা দীপিকা আরেক সুপারহিট হিরো রণবীর সিংয়ের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর থেকে বেশ সুখের সংসার করছেন তারা। বিয়ের পর পুরো একটা বছর একে অপরকে সময়ও দিয়েছেন এই যুগল। তবে এখন আবারো সিনেমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন এই দম্পতি।