‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দুর্নীতিবান্ধব’
প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সংস্থাটি বলেছে, এ ধরনের কাজ অসাংবিধানিক, বৈষম্যমূলক ও দুর্নীতিবান্ধব। এটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত শূন্য সহনশীলতার পরিপন্থী। শুক্রবার পাঠানো এক বিবৃতিতে একথা বলা হয়। এছাড়া বাজেটে ব্যাংক খাতের সংস্কারে কোনো পদক্ষেপ না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোসহ কয়েকটি উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সামগ্রিকভাবে বাজেটে সম্পদ ও আয়বৈষম্য নিরসনে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নেই। ফলে অনিয়ম ও দুর্নীতির মহোৎসবের অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে সম্পদ ও আয়বৈষম্য আরও বাড়বে। তিনি বলেন, যে সব খাতে কালো টাকা ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয়েছে সেখানে দুর্নীতির একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্তে সৎপথে এসব খাতে আয় ও সম্পদ আহরণের সুযোগ ধুলিস্যাৎ হবে এবং এর প্রভাবে দুর্নীতির বিস্তৃতি ও গভীরতা আরও বাড়বে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সুশাসন ও ন্যায্যতার পরিপন্থী হলেও দফায় দফায় কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছে সরকার। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সুনির্দিষ্ট লঙ্ঘন ও দুর্নীতির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত শূন্য সহনশীলতার পরিপন্থী। ফ্ল্যাটের পাশাপাশি এবার জমি কেনাকেও যোগ করা হয়েছে। এছাড়া বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে শিল্প স্থাপনে ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগ করা যাবে। এবার প্রথমবারের মতো এই অবৈধ সিদ্ধান্তকে ৫ বছরের জন্য বৈধতার প্রস্তাব করা হল। অর্থাৎ দুর্নীতির মহোৎসব ও বিচারহীনতাকে পাঁচ বছর মেয়াদি লাইসেন্স দেয়া হল।
তিনি বলেন, কেবল ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে কালো টাকার বৈধতা দেয়ার অর্থ, সমাজে বৈধভাবে আয়কে নিরুৎসাহিত করা। দুর্নীতির কাছে রাষ্ট্রের এই আত্মসমর্পণ কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে, সরকারকে তার অনুধাবন করা উচিত। অন্যদিকে রেকর্ড পরিমাণ খেলাপি ঋণ, অনিয়ম, দুর্নীতি ও যোগসাজশের অপসংস্কৃতিতে ধুঁকতে থাকা ব্যাংক খাতের সংস্কারে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্যোগ না থাকায় এ খাত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে যাবে। ড. জামান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে তৈরি পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্ট খাতে জনগণের করের টাকায় নতুন করে বাড়তি প্রণোদনার যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা এ খাতের শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় কী ভূমিকা রাখবে, তার ব্যাখা জরুরি।
সরকারের ঋণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশাল ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে এমন প্রকল্পে অর্থের যথার্থ ব্যয় এবং কার্যকর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রস্তাবিত বাজেটে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের ‘শূন্য সহনশীলতা’ অঙ্গীকারের সঙ্গে এই নীতি সাংঘর্ষিক। রাষ্ট্রীয় ঋণের বোঝা বাস্তবিক অর্থে দেশের সাধারণ নাগরিকদেরই বইতে হয়। তাই প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থের ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট কৌশলগত দিকনির্দেশনা দেয়া উচিত। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের জন্য কোনো বরাদ্দ না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছে টিআইবি।